মাঝের ব্যবধানটা তিন মাসেরও বেশি সময়। টেস্ট ম্যাচট ছিল ভারতের বিপক্ষে, গেল ডিসেম্বরে। এরপর খেলছেন এখন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। মানুষটা মুমিনুল হক সৌরভ। বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক।
এই মাঝের সময়টা কি করেছেন তিনি? বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সুযোগ পাননি। বড় একটা সময় তাই ছিলেন সবার আড়ালে। কাগজে কলমে ঠিকঠিক দুই মাস তিনি কোনো প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচ খেলেননি। ফেব্রুয়ারির শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) একটা ম্যাচ খেলেন। এরপর আবার বিরতি। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলা শুরু করেন মার্চের মাঝামাঝি। কিন্তু, এই প্রস্তুতি দিয়ে কি আর টেস্ট ম্যাচে পোষায়?
পোষায় না বলেই, খুবই ছেলেমানুষি কায়দায় আউট হয়ে গেলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক প্রস্তুতির অভাবেই যে এই পরিণতি হয়নি – জোর দাবি দিয়ে তা আসলে বলা যায় না।
টপ অর্ডার ব্যাটার হলেও তাঁর ব্যাটিংয়ের সে ধার যেন হারিয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষের একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ব্যর্থই হয়েছেন তিনি।
এমনিতেই গত দু বছর ধরে বাজে সময় যাচ্ছে টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুলের। ব্যাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে রানের খড়া। সর্বশেষ সেঞ্চুটি করেছেন ২০২১ সালের এপ্রিলে। এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতাই যেন মুমিনুলের সঙ্গী। গত ডিসেম্ভরে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রান করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে, সেই ফর্মটা দীর্ঘায়িত হয়নি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ প্রস্তুতির অভাব নিয়ে কি আসলেই ফর্মটা ধরে রাখা সম্ভব?
আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মুমিনুল যেভাবে আউট হয়েছেন সত্যিই শিশুতোষ। ধারাভাষ্যকাররা সেটাকে বলেছেন অবিশ্বাস্য। ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৭ রান। ইনিংসের শুরুটা ভাল হলেও লম্বা করতে পারেননি, ২২ গজে সেট হয়েও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন।
লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে তিনি খুবই আয়েশি ভঙ্গিতে অ্যাক্রস দ্য ব্যাটে খেলেছেন, কিন্তু বলের লাইন মিস করেছেন। এই দৃশ্যটায় একজন টপ অর্ডারের ব্যাটারকে মানায় না, যার ১১ টা টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ারে বল স্পটতই লেগ স্ট্যাম্পের ওপরে ছিল। কিন্তু, মুমিনুল সে বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড।
এভাবে উইকেট বিলিয়ে দেওয়া দেখলে যে কারো মনে হতেই পারে, মুমিনুল কি তাহলে ব্যাটিং করা ভুলে গেছেন? এমনিতেই অফ ফর্মে আছেন টেস্ট স্পেশালিস্ট এই ব্যাটার। তার ওপর ব্যাটে নেই তার বলার মত কোন ইনিংস। মুমিনুল কি তাহলে ফুরিয়ে গেলেন? এরকম পারফর্ম অব্যাহত থাকেলে দলে তার যায়গা নিয়ে হয়ত নতুন করে চিন্তা করবেন নির্বাচকরা। কিংবা, তাঁকে ধরে রাখতে চাইলে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এমনিতে বাংলাদেশ দল তুলনামূলক কম সুযোগ পায় টেস্ট ম্যাচ খেলার। অন্যদিকে মুমিনুল হক দলে কেবল টেস্টের জন্যই বিবেচিত হন। সাম্পতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং পাইপলাইনে যোগ হয়েছে নতুন অনেক মুখ। নিশ্চয়ই মুমিনুল নিজেও সেটা জানেন। আর টিম ম্যানেজমেন্টকেও মুমিনুলের গুরুত্ব বুঝতে হবে। টেস্ট বিরতির মাঝের লম্বা সময় টেস্টের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার কেন অলস বসে থাকবেন!