ভাগ্যে কি লেখা থাকে তা কারোই জানা থাকে না। ভাগ্যের মার পাঁচে কখনো সৃষ্টি হয় অপ্রত্যাশিত আনন্দের উপলক্ষ, কখনো আবার ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। অনিশ্চিত ভবিষ্যত এবার অভিশাপ হয়ে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেটার ঋষাভ পান্তের জীবনে। মারাত্মক এক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এই উইকেট কিপার ব্যাটার। পরবর্তীতে দ্রুতই তাঁকে নেয়া হয়েছে দেরাদুনের একটি হাসপাতালে।
সারা শরীরে চোট, ক্রিকেট থেকে লম্বা সময়ের জন্য নির্বাসন তবু ঋষাভ পান্ত নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। যেই গাড়ি তিনি চালাচ্ছিলেন, দুর্ঘটনার পর সেটি আগুনে পুড়ে রীতিমতো ভস্ম হয়ে গিয়েছে। আপাতত তাই ক্রিকেটীয় চিন্তা বাদ দিয়ে জীবনের জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি। সেই সাথে ধন্যবাদ দিতে হয় তাদের, যারা দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করেছেন এই তরুণকে।
হরিয়ানা রোডওয়ের বাস চালক সুশীল কুমার এবং তাঁর সঙ্গী পরামজিৎ ভেঙে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাস থেকে বের করে এনেছিলেন আহত ঋষাভ পান্তকে। দুর্ঘটনা ঘটার পরেও স্বজ্ঞানে ছিলেন পান্ত, গাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি কিন্তু আহত থাকায় একা একা বের হওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। এসময় রাস্তার অন্য পাশ দিয়েই যাত্রীবাহী বাস নিয়ে যাচ্ছিলেন সুশীল কুমার; এরপর দুমড়ানো গাড়ি দেখে সাহায্য করতে আসেন।
ইতোমধ্যে ঋষাভ পান্তের ইনজুরি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এই ক্রিকেটারের কপালে দুইটি বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাম চোখের উপরেও চোট লেগেছে। আবার ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। টাখনু, পায়ের আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং পিঠের চামড়া অনেক জায়গায় উঠে গিয়েছে।
তবে কর্তব্যরত ডাক্তাররা আশ্বস্ত করেছেন যে, পঁচিশ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল; তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডের এমআরআই পরীক্ষার ফলাফলও ইতিবাচক এসেছে। যদিও হাঁটু এবং অ্যাঙ্গেলে এখনো এমআরআই করা সম্ভব হয়নি। এসব স্ক্যান করার পর জানা যাবে আঘাত গুলো কতটা গুরুতর।
আনুমানিক ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঋষাভ পান্ত এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। এসময় তিনি রূরকিতে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তবে কিছুটা ঝিমুনি চলে আসায় সড়ক বিভাজকের সাথে গাড়ির সংঘর্ষ হয় এবং পরবর্তীতে আগুন ধরে যায়।
পান্তের উদ্ধারকারী সুশীল কুমার বলেন, ‘আমি হরিয়ানা রোডওয়ের একজন বাস ড্রাইভার। গাড়ি চালানোর সময় যখন দেখলাম একটি গাড়ি ভারসাম্য হারিয়ে ডিভাইডারের সাথে পড়ে আছে তখন আমি সাথে সাথে ব্রেক করে বাস থামিয়ে ফেলি। গাড়িটিতে এরই মাঝে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল তাই আমি এবং কন্ডাক্টর তাঁকে (পান্তকে) গাড়ি থেকে নামানোর জন্য ছুটে যাই। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। গাড়ি থেকে বের করার পর আরও তিনজন ছুটে এসে পান্তকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।’
সুশীল আরো যোগ করেন যে, ‘আমি প্রথমে ন্যাশনাল হাইওয়েতে ফোন করি কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। তারপর আমি পুলিশকে ফোন করলাম এবং কন্ডাক্টর একটি অ্যাম্বুলেন্স ডাকে। আমরা তখন তাঁর সাথে কথা বলেছি এবং পানি দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর তিনি আমাদের বলেছিলেন যে তিনি ঋষাভ পান্ত। আমি ক্রিকেট খুব একটা দেখি না তাই আমি জানতাম না কে এই ঋষাভ পান্ত। কিন্তু আমার কন্ডাক্টর (পরমজিৎ] চিনতে পেরেছিল, সে আমাকে বললো সুশীল, এই ব্যক্তি একজন ভারতীয় ক্রিকেটার।’
ঋষাভ পান্ত নিজের মায়ের ফোন নম্বরও সুশীল কুমারকে দিয়েছিলেন বলে জানান এই বাসচালক। তবে পান্তের মায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷ এরপর গাড়িতে আর কেউ আছে কি না সেটিই পান্ত থেকে জেনে নিয়েছিলেন সুশীল কুমার। মিনিট পনের পরেই অ্যাম্বুলেন্স এসে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় ভারতীয় উইকেটরক্ষককে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ম্যাক্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।
সুশীল কুমার আর পরমজিৎয়ের এমন উপস্থিত বুদ্ধির কারণেই বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচেছেন ঋষাভ পান্ত। নিজেদের এমন কাজের জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ তো বটেই, সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন এই দুইজন। ভিভিএস লক্ষ্মণও সুশীল আর পরমজিৎয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টুইট করেছেন। স্বীকার করতেই হয়, এমন পরার্থপর মানুষদের জন্যই হয়তো টিকে আছে পৃথিবী।