ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দিলেও কিছুতেই জাতীয় দলের দরজা খুলছিল না সরফরাজ খানের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে তিনি সেই সুযোগ পেয়েছেন। আর সুযোগ পেয়েই করেছেন বাজিমাত। রাজকোট টেস্ট দিয়ে নিজের অভিষেকের দুই ইনিংসেই পেরিয়েছেন পঞ্চাশের গণ্ডি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে টেস্ট- সরফরাজের এত ধারাবাহিকভাবে রান করার রহস্য কী?
এর পিছনে রয়েছে সরফরাজ আর তাঁর বাবার নিরলস সাধনা। বাবা নওশাদ খান নিজেও ক্রিকেট খেলতেন। ভারতের জার্সি গায়ে কখনোই খেলতে পারেননি যদিও। কিন্তু দুই ছেলের এক ছেলে টেস্ট জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। আর আরেকজন মুশির খান সদ্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফিরেছেন।
মূলত বাবার তত্ত্বাবধানে ১৫ বছর ধরে তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সরফরাজ ও মুশির। প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি ডেলিভারি নেটে প্র্যাকটিস করতেন। অফ ও লেগ সাইডের বল সামলানোর পাশাপাশি মুম্বাই ও আজাদ ময়দানে বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন সরফরাজ।
সরফরাজের এই সাধনা কতটা ছিল, তার আরেকটি নমুনা পাওয়া যায় করোনাকালীন সময়ে। কোভিড-১৯ লকডাউনের জেরে ক্রিকেট যখন স্তব্ধ তখনও প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার গাড়ি নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন সরফরাজ। স্পিন খেলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুঁতে বেড়িয়েছেন, স্পিনে সিদ্ধহস্ত হতে মুম্বাই থেকে আমরোহা, মোরাদাবাদ, কানপুর, মথুরা, দেরাদুনে গিয়েছেন তিনি।
সরফরাজের ব্যাটিং দক্ষতা বৃদ্ধির পিছনে আরো বেশ কয়েকজনের অবদান রয়েছে। ভূবনেশ্বর কুমারের কোচ সঞ্জয় রাস্তোগি, মোহাম্মদ শামির কোচ বদরুদ্দিন শেখ, কুলদীপ যাদবের কোচ কপিল দেও পাণ্ডে, গৌতম গম্ভীরের কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ ও অভিমন্যু ঈশ্বরণের বাবা আরপি ঈশ্বরণসহ আরো অনেকের সাহচর্যে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন সরফরাজ।।
লকডাউনের সময় কুলদীপ যাদবের বিপক্ষে নিয়মিত ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন সরফরাজ। তবে এ সময়কালে কোচ বদরুদ্দিনের উপকারের কথা হয়তো কোনোদিন ভুলবেন না সরফরাজ ও তাঁর বাবা। কেননা সেই সময়ে একটি হোস্টেলে তাদের থাকার বন্দোবস্ত করে সরফরাজের অনুশীলন নিশ্চিত করেছিলেন শামির কোচ বদরুদ্দিন।
তবে নওশাদ খান তাঁর দুই ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার ক্ষেত্রে সব সময়ই বড় ভূমিকা রেখেছেন। ম্যাচ না থাকলেও দুই ছেলেকে নিয়ে অনুশীলন করে গিয়েছেন। বাড়িতে অ্যাস্ট্রো টার্ফ উইকেট বানিয়েছেন। আর এতেই সরফরাজের ব্যাটিং আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। তার প্রমাণ তো দেয় পরিসংখ্যানই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচেই সেঞ্চুরি ১৪টি। ব্যাটিং গড় ৬৯.৮৫। প্রথম ব্যাটার হিসেবে রঞ্জি ট্রফির টানা দুই আসরে অন্তত ৯০০ রান করার কীর্তি একমাত্র তাঁরই। এখন দেখার পালা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এই সাফল্য তিনি টেস্ট ক্রিকেটেও রূপান্তর করতে পারেন কিনা।