রোহিত বনাম বিরাট গ্রুপিং, মধ্যস্থতাকারী শাস্ত্রী

বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। ভারতের ক্রিকেট আকাশে বড় দুই নাম। দুজনই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন আঁকেন। তবে গুঞ্জন আছে, একটা সময় এ দুই ক্রিকেটারের বিরোধের সুর গড়িয়েছিল গোটা দল পর্যন্ত।

কোহলি গ্রুপ, রোহিত গ্রুপ নিয়ে ভারতের পুরো দলটা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ভারতের তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী দলের মধ্যে সেই নৈরাজ্য সর্বপ্রথম দূর করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। প্রাক্তন ফিল্ডিং কোচ রামকৃষ্ণান শ্রীধর তাঁর বই ‘কোচিং বিয়ন্ড’- এ সেই সব ঘটনাই তুলে ধরেছেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘একটা সময়ে রোহিত বিরাটের দ্বন্দ্ব দলের প্রকাশ্যেই চলে এসেছিল। রবি শাস্ত্রী সেটা ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টা সর্ব প্রথম আমাদের সামনে আসে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর। দলের মধ্যে একটা গ্রুপিং হচ্ছে, এমন একটা ব্যাপার সম্পর্কে আমরা অবগত হই। দুজন দুজনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন ফলো করেছেন – সেটাও প্রকাশ্যে আসে। তাদের এই বিরোধের কারণে দলের অবস্থাও তখন বেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। এখান থেকে বেরোনোর জন্য তাদের দুজনকে নিজের রুমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী।’

নিজের বইয়ে সেই কথা টেনে শ্রীধর আরো লিখেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে তখন সিরিজ চলছে। রবি শাস্ত্রী তখন নিজের রুমে বিরাট আর রোহিতকে ডাকেন। এরপর তিনি তাদের বলেন, তোমরা দুজন দলের সিনিয়র ক্রিকেটার। এখানে তোমাদের দায়িত্বটাই বেশি। সোশ্যাল মাধ্যমে যাই হোক, তোমরা নিজেদের মধ্যে সমস্যা ঠিক করে ফেল। আমি চাই তোমরা এখন সামনের পথ চলবে কোনো রকম বিরোধ ছাড়াই।’

কোচের এমন তদারকিতে এর বৈপরীত্বও ঘটতে পারতো। বিরাট রোহিতের সম্পর্ক আরো খারাপ হতে পারতো। এমন শঙ্কার কথাও লিখেছেন রামকৃষ্ণান শ্রীধর। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘তখন পর্যন্ত বিরোধের ব্যাপারটা কেউ আঁচ করেনি। তাই রবি শাস্ত্রীর এমন সরাসরি জিজ্ঞাসায় আরো খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা ছিল। আগের চেয়ে আরো বাজে অবস্থায় যেতে পারতো তাদের সম্পর্ক। কিন্তু রবি শাস্ত্রী ভাগ্যবান ছিলেন। রোহিত, বিরাট দুজনেই সেখানে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করে ফেলেন।’

শ্রীধরের লেখা অনুযায়ী, বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা যেন এখন একদম কাছের বন্ধু। বৈরিতার সে সময় বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর রোহিত শর্মার বিরাটকে বুকে জড়িয়ে  কোলে উঠানোর দৃশ্যটা এখন পর্যন্ত তাজা স্মৃতি। তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাতের যে গুঞ্জন ডাল পালা মেলেছিল তা নিঃশেষ হওয়ার জন্য ঐ একটা ছবিই যথেষ্ট।

বিরাট-রোহিতের বিরোধ ইস্যুতে অবশ্য রবি শাস্ত্রী একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। কারণ তাঁর কল্যাণেই গুঞ্জনের মধ্যেই আঁটকে থাকতে থাকতে মিলিয়ে গেছে তাদের বিরোধ। রোহিত-বিরাট, বিরোধের সুর বেশিদূর আর গড়ায়নি।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link