অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দল যখন দুই রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে শ্রেয়াস আইয়ার তখন দায়িত্ব নেয়ার বদলে বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন; ফলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে আনায় কিছুটা কমে আসে সমালোচনার মাত্রা। তবে পরের তিন ম্যাচে ১৯, ৩৩ আর ৪ রান করে আউট হওয়ায় নিন্দুকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
কিন্তু সেটাই শেষ, এরপর আর সুযোগ হয়নি আইয়ারের দিকে আঙুল তোলার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঝড়ো ইনিংস খেলার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাচ্ছেন তিনি। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সব সমালোচনাকে উড়িয়ে মেরেছেন বাউন্ডারির বাইরে।
অবশ্য চাপের মুখে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না তাঁর জন্য; টিম ম্যানেজম্যান্টের ভরসার হাত থাকা সত্ত্বেও এই তরুণের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল। আর সেসময় ত্রাতা হয়ে আসেন ছোটবেলার কোচ প্রবীন আমরে। লঙ্কানদের বিপক্ষে খেলতে ভারত যখন মুম্বাই এসেছিল তখনি আমরে ছুটে গিয়েছিলেন পুরনো শিষ্যের কাছে।
তিনি বলেন, ‘বুঝেছিলাম ওই অবস্থায় আমাকে তাঁর প্রয়োজন, তাই অনুশীলনের সময় গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলি।’ কিন্তু কি এমন বলেছিলেন এই কোচ যে মুহুর্তের মাঝে বদলে গিয়েছে আইয়ারের ফর্ম।’
তিনি নিজেই উত্তর দিয়েছেন; বলেন, ‘আমি তাঁকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিতে চেয়েছি। নিজের প্রতি কোন সংশয় রাখতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম তুমি বাউন্সার খেলতে পারো। আউট নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না, এটা কোন টেকনিক্যাল ভুল নয়। আমি এই কথা নিশ্চিত হয়ে বলতে পেরেছিলাম কেননা তাঁর টেকনিক নিয়ে অনেকদিন কাজ করেছিলাম।’
এই ডানহাতির আত্মবিশ্বাস বাড়াতে নিজের ক্যারিয়ারের কথাও বলেছেন আমরে। তিনি বলেন, ‘দেখো লোকে বলে আমি নাকি পেস খেলতে পারি না। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে ফাস্ট পিচে, সেরা পেসারদের বিপক্ষে অভিষেকে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলাম।’
গুরুর ছোট ছোট কথাগুলো দারুণভাবে কাজে লেগেছে; শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচ দিয়ে নতুন করে শুরু করেছেন শ্রেয়াস। এই টুর্নামেন্টে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি; রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের তৈরি করে দেয়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলোধুনো করে যাচ্ছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। বিশেষ করে স্পিনারদের বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকাতে জুড়ি নেই তাঁর।
ফাইনালেও অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হতে যাচ্ছে অ্যাডাম জাম্পা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। মাঝের ওভারগুলোতে তাঁদের বিপক্ষে রান তোলার দায়িত্বটা তাই নিতে হচ্ছে তাঁকে। সত্যি বলতে, সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না কি না সেটার ওপর ম্যাচের ভাগ্যও অনেকটা নির্ধারণ করছে। অবশ্য প্রবীন আমরের প্রত্যাশা নিজের সেরাটাই দিবেন ভারতের ‘নাম্বার ফোর’।