আইপিএলের পারিশ্রমিক: কী ও কীভাবে

বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সময়ের পরিক্রমায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এর পেছনে ভারতের ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অবদান নেহাৎ কম নয়। সেই ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ক্রমশ মান বেড়েছে আইপিএলের। সেই সাথে বেড়েছে জৌলুশ, কদর আর আগ্রহ। ক্রিকেটের বর্ষপঞ্জিকায় গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গা করে নিয়েছে আইপিএল।

এত জাকজমকপূর্ণ এক টুর্নামেন্টে অর্থের ছড়াছড়িও তো কম হয়। আইপিএলের নিলামে কোটি কোটি রুপির বিনিময়ে খেলোয়াড় বিক্রি হওয়া যেন এখন এক অন্যরকম বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় মানুষের মনে নানানরকম প্রশ্ন জাগায়। হরহামেশাই প্রশ্ন ওঠে আইপিএলের বেতন কাঠামো ঠিক কি রকম। সেই প্রশ্নের জবাব আজকে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

সোজাসাপ্টা কথা বলতে গেলে আইপিএলের নিলামে ঠিক যত পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে একজন খেলোয়াড়কে কেনা হয় সেটাই এক মৌসুমে তাঁর জন্যে নির্ধারিত পারিশ্রমিক। পুরোটাই খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক, তবে ক্রয়কৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স সেই খেলোয়াড়কে তাঁর পারিশ্রমিক থেকেই পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া তাঁর সেই পারিশ্রমিকের ভাগিদার অন্য কেউ থাকে না।

একটা ফ্রাঞ্চাইজি নির্দিষ্ট কোন খেলোয়াড়কে তিন বছরের চুক্তিতে দলে ভেড়ালে সেই খেলোয়াড় নিলামে ক্রয়কৃত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ প্রতি আসরে পাবেন পারিশ্রমিক হিসেবে। অর্থাৎ একটি খেলোয়াড়কে যদি ১০ কোটি রুপিতে নিলাম থেকে ক্রয় করা হয় তবে সেই খেলোয়াড় পরবর্তী তিন আসরে দশ কোটি করে মোট ৩০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক পাবেন তিন বছরের চুক্তিতে।

এখানে একটি সূক্ষ্ম হিসেব কাজ করে। সেই খেলোয়াড় এক আসরে কতগুলো ম্যাচ খেলতে পারবেন তাঁর উপরও পারিশ্রমিকের তারতম্য হয়। আরো কিছু হিসেবের মারপ্যাঁচ রয়েছে। একটা খেলোয়াড়কে যদি পুরো একটা মৌসুমে পাওয়া যায় তবে তাঁকে তাঁর পারিশ্রমিকের পুরো অর্থই ফ্রাঞ্চাইজিকে পরিশোধ করতে হয়।

সেক্ষেত্রে সেই খেলোয়াড় একাদশে সুযোগ পেলেন কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয় হবে না। আবার যদি কোন খেলোয়াড়ের সাথে ফ্রাঞ্চাইজি চুক্তি বাড়াতে চায় সেক্ষেত্রেও আগের বছরের সমপরিমাণ পারিশ্রমিকেই নতুন চুক্তি সাক্ষর করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় পারিশ্রমিকের অর্থ বৃদ্ধি সাপেক্ষেই খেলোয়াড়রা চুক্তি নবায়ন করে থাকেন।

এখন হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে একজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়লে সেক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের হিসেব নিকেশ কি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নেয় তবে ফ্রাঞ্চাইজিকে সেই খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হয় না। তবে যদি টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় যদি ইনজুরিতে পড়েন তাহলে তাঁর চিকিৎসার পুরো দায়ভার ফ্রাঞ্চাইজিকে বহন করতে হয়।

আর সে কারণে যদি খেলোয়াড়টির টুর্নামেন্টের বাকি অংশ খেলতে না পারেন তবে পারিশ্রমিকে একটা অংশ কর্তন করার সুযোগ থাকে। এখন যদি কোন খেলোয়াড় যদি চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই দল ছেড়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে ফ্রাঞ্চাইজির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সে ছেড়ে যেতে পারে। কিন্তু ফ্রাঞ্চাইজি কোন খেলোয়াড়কে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই যদি ছেড়ে দিতে চায় তবে মৌসুমের পুরো পারিশ্রমিকই খেলোয়াড়কে পরিশোধ করার বিধান রয়েছে।

তবে একবারেই পারিশ্রমিকের পুরো অর্থেই ফ্রাঞ্চাইজিগুলো পরিশোধ করে দেয় এক দফায়? না এমনটা সাধারণত হয় না। সবচেয়ে ধনী ফ্রাঞ্চাইজিগুলোও এ কাজ করতে পারেন না। কেননা এত বিপুল পরিমাণ অর্থ একবারে পরিশোধ করা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। তবে শোনা যায় ধনী ফ্রাঞ্চাইজিগুলো প্রথম অনুশীলনের আগেই পারিশ্রমিকের অর্ধেক অর্থ পরিশোধ করে দেন। বাকি অর্ধেক পরিশোধ করেন টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে।

বাকিদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ব্যতিক্রম। তাঁরা মূলত ১৫-৬৫-২০ এই ফর্মুলা ব্যবহার করে থাকেন। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে খেলোয়াড়দের হাতে তুলে দেওয়া ১৫% পারিশ্রমিক। চলাকালীন সময়ে ৬৫% এবং শেষের দিকে বাকি ২০% পারিশ্রমিক পরিশোধ করে থাকেন।

ঠিক এমন একটা পারিশ্রমিক কাঠামো মেনেই সেই ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চলছে আইপিএল যাত্রা। বিরতিহীন এ যাত্রায় পারিশ্রমিক নিয়ে বিশাল গণ্ডগোলের মুখে আইপিএল গভর্নিং বডিকে পড়তে হয়নি কখনোই। আর ফ্রাঞ্চাইজিগুলো তাঁদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তাবায়নে ছিলেন সদা সচেষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link