দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প থাকে না। নিজের শেষ চেষ্টাটুকু করে যেতে হয়। কিংসটনে সেটাই করেছে গোটা বাংলাদেশ দল। রোমাঞ্চকর একটা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা। অথচ সবাই তো ভেবে নিয়েছিল আবারও ধবল ধোলাই হতে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঠিক কোথায় ঘুরে গেল ম্যাচের ভাগ্য?
ব্যাটারদের দুর্দশা তো নতুন নয়। স্যাবাইনা পার্কে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পুঁজি মাত্র ১৬৪ রান। সেই রান টপকে যাবে ক্যারিবিয়ানরা। গড়বে এভারেস্ট সম একটা সংগ্রহ। কিন্তু হুট করেই দৃশ্যপটে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন ছয় ফুট তিন ইঞ্চির এক গতিদানব।
২২ বছরের ছোকড়া ঝড় তুললেন বাইশ গজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের চক্ষু ছানাবড়া। বিস্ময় আর ভয়ে বুক দুরুদুরু করে কেঁপেছে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটদের। ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গড় গতি নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের। শ্যামার জোসেফ আর কিমার রোচ হয়ত উপলব্ধি করেছেন গতি ঠিক কতটা ক্ষতি।
নাহিদ রানা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। সেই ভয়ের পরিবেশের ফায়দা তুলেছেন বাকিরাও। স্রেফ ১৪৬ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ পেয়ে গেল ১৮ রানের লিড। সেখান থেকেই ম্যাচের ভাগ্য বদলের শুরু। তবে সেই যাত্রাকে ধরে রাখতে ব্যাটারদের এগিয়ে আসতেই হতো।
কিন্তু ক্যারিবিয়ানরা ভীষণ রেগে ছিল বাংলাদেশের উপর। স্লেজিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে ব্যাটারদের জন্যে দুর্বিষহ করে তোলে পরিবেশ। বাংলাদেশি ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বা মনোযোগ চূর্ণ করে দেওয়ার চেষ্টাই চালিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। কিন্তু সেই অবরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায় শাহাদাত হোসেন দিপুর ব্যাটে।
খুব বড় কোন ইনিংস তিনি খেলেননি। কিন্তু বাইশ গজে এসে ক্যারিবিয়ানদের সকল আক্রমণের জবাবে তিনি পালটা আক্রমণ করে বসেন। তার দেখানো পথ ধরে হেটেছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ব্যাস, ক্যারিবিয়ানদের ফাঁপা উগ্রতা তখন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ওই দু’টো ইনিংস বাংলাদেশকে টিকিয়ে রেখেছিল ম্যাচে।
এরপর অবশ্য জাকের আলী অনিকের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র নয় রানের দূরত্বে থেমেছেন জাকের। কিন্তু তার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে স্বস্তিদায়ক একটা সংগ্রহে।
দুই দলের মোট আটজন পেসার বল করেছেন স্যাবাইনা পার্কের উইকেটে। উইকেটের তাই বেহাল দশা হওয়া ছিল অবধারিত। সেই উইকেটে তাইজুল ইসলাম করেছেন বাজিমাত। চতুর্থ ইনিংসে তিনি দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। তুলে নিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের ১৫তম ফাইফার। তাতেই জয় লেখা হয়েছে বাংলাদেশের নামে।
সেই ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। কিংসটনে দ্বিতীয় টেস্ট বরাবরই বাংলাদেশের জন্যে সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। প্রায় ১৫ বছর পর ব্যত্যয় ঘটেনি। বাংলাদেশ জিতেছে ১০১ রানের বিশাল ব্যবধানে।
প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল, লড়াই করেছে। বাকি তিন ইনিংস নিজেদের করে নিয়েছে। লিখে ফেলেছে আরও এক জয়ের বর্ণিল কাব্য। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এই জয় অবশ্যই খানিক নির্ভার করবে গোটা দলকে। নিজেদের উপর বিশ্বাস করতে সহয়তা করবে। কথা আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।