সাবেক ভারতীয় রোহান গাভাস্কার ক্রিকেট পাড়ায় একেবারেই যে অপরিচিত মুখ এমন নয়। মোটামুটি ক্রিকেট ও ক্রিকেদারদের ব্যাপারে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা রোহানকে চিনতে অসুবিধে হওয়ার কথা না। রোহান গাভাস্কারের বাবা সুনিল গাভাস্কার ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি এক তারকা। বাবার হাত ধরেই ক্রিকেটে আসা রোহানের। বাবার নামের ছত্রছায়ায় পুরো ক্যারিয়ারটাই কেটেছে রোহানের।
বাবার মত প্রতিভা ছিল না, রোহান ছিলেন মিডিওকর একজন। কিন্তু বাবার নামের কারণে কখনোই নিজেকে আলাদা ভাবে চেনাতে পারেননি রোহান। জুনিয়র গাভাস্কারের মতই যেন অবস্থা শচীন পুত্র অর্জুন টেন্ডুলকারের। বাবা শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেট ইতিহাসের জীবন্ত এক কিংবদন্তি। বাবার মত ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে অর্জুন আসেননি। কিন্তু বাবার নামের কারণে ক্রিকেটের বিভিন্ন পর্যায়ে সুযোগ পাচ্ছেন – এমন কথা তিনি হরহামেশাই শুনছেন সেটা নিশ্চিত।
এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে নজরকাড়া কিছুই করে দেখাতে পারেননি অর্জুন। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েক আসরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দল পেয়েছেন। ম্যাচ না পেলেও বড় বড় ক্রিকেটারদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুযোগটা হয়েছে তাঁর। কিন্তু সেই সুযোগই বা ক’জন পায়? ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে অর্জুনের চেয়েও প্রতিভাবান ক্রিকেটার আরও আছেন।
একটা সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনে চলেছেন বহু ক্রিকেটার। কিন্তু সেদিক থেকে ব্যতিক্রম অর্জুন। খুব বড় কোনো অর্জন ছাড়াই ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে অনেকটা সহজেই উঠে আসছেন তিনি। আর এতেই যেন সব বিপত্তি। ক্রিকেট সমর্থকদের মতে স্রেফ শচীনপুত্র হওয়ার কারণেই বিশেষ সুবিধা পান অর্জুন; অনেকাংশে যে এই কথা সত্যি নয় সেটাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আবার এও অস্বীকার করার সুযোগ নেই শচীনপুত্র হবার কারণে অতিরিক্ত চাপে থাকেন তিনি।
আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে ত্রিশ লক্ষ রুপিতে অর্জুনকে দলে নিলেও এক ম্যাচেও একাদশে সুযোগ দেয়নি মুম্বাই। এতে অবশ্য সমর্থকরাও চটেছেন। দলের ভরাডুবিতেও সুযোগ পাননি ২২ বছর বয়সী অর্জুন।
সাবেক বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় তারকা কপিল দেব মনে করেন শচীন যা করে গেছেন সেটা অর্জুন তো দূর আধুনিক ক্রিকেটের কোনও ব্যাটারের পক্ষেও সম্ভব না। আর বয়স বিবেচনায় মোটেও অর্জুনকে বাবার সাথে তুলনা করাটা ঠিক হবে না। এক সাক্ষাৎকারে কপিল বলেন, ‘ ওকে নিয়ে সবাই কেন এত কথা বলছে? ওকে নিজের মত করে খেলতে দিন। শচীনের সাথে তুলনা করবেন না। টেন্ডুলকার নামটা সুবিধা আর অসুবিধা দুটোই আছে। ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলেও নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন; কারণ এই চাপই তিনি নিতে চাননি। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘অর্জুনের উপর চাপ দিবেন না। এখনও ওর অল্প বয়স। যেখানে ওর বাবা কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার – সেখানে আমরা কিছু বলার কে? আমি শুধু ওকে একটা কথাই বলতে চাই, নিজের খেলা উপভোগ করো, তোমার কিছু প্রমাণের দরকার নেই। তুমি যদি তোমার বাবার ৫০ শতাংশ হতে পারো – এর চেয়ে ভাল কিছুই নেই। টেন্ডুলকার নামটা আসলেই আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়, কারণ শচীন দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার ছিলেন।’
মুম্বাইয়ের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছে খুব বেশি সময় হয়নি। তবে অর্জুনের মধ্যে এখন অবধি আহামরি কিছুই দেখা মেলেনি। অবশ্য এই কারণে ভবিষ্যতে তিনি ক্যারিয়ারে যতদূরই যাবেন, একটা কথাই বার বার কানে বাজবে – ‘শচীন পুত্র হওয়ার কারণেই তোমার এত দূর আসা।’