ইমামের মত ভাগ্যই তো চাই

ভাগ্যটা আসলে ইমাম-উল হকের মতই হওয়া উচিত। বিপদ আসবে। কিন্তু ছোঁবে না। দারুণভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে বহুদূরে। জীবনটা হবে একেবারে মসৃণ। ঠিক ইমামের খেলা ইনিংসটির মত করেই। ক্রিকেটে তিন দফা বেঁচে ফেরা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। একেবারে সোনায় মোড়ানো ভাগ্য বলতে যা বোঝায় আরকি।

প্রতিবার ডিআরএস এসে হাত বাড়িয়েছে ইমামের উদ্দেশ্যে। কি এক বিচিত্র, বিমোহিত করা ভাগ্য তার! প্রথম দফা তো হাসান মাহমুদের বলটা আঘাত করল প্যাডে। ইম্প্যাক্ট অবশ্য খালি চোখে ইন লাইন। বল পিচ করেছেও স্ট্যাম্প বরাবর। তেমনটাই দেখা গেছে অন্তত খালি চোখে।

কিন্তু ফিল্ড আম্পায়ার হাসান, মুশফিকুর রহিমদের জোড়ালো আবেদনে কোন সারা দেননি তিনি। ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলেন আফগানিস্তানের আম্পায়ার আহমেদ শাহ পাকতিন। তবে হাসান মাহমুদ কোন কিছু বিবেচনা না করেই রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেন। তিনিই আম্পায়রকে উদ্দেশ্য করে তার সিদ্ধান্ত জানান। হাসানের আত্মবিশ্বাস দেখে সাকিব অবশেষে রিভিউ নেন।

আম্পায়ার তখন চলে যান থার্ড আম্পায়ারের কাছে। সেখান থেকে ছবি বিশ্লেষণে জানা গেল বলটা অল্পের জন্যে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছে। কিন্তু ইম্প্যাক্ট স্ট্যাম্পেই ছিল। ক্রিকেটের বাইলজ অনুযায়ী সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন ইমাম।

ঠিক একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি। একেবারে কার্বন কপি। ওভার দ্য উইকেট থেকে তাসকিনের ছোড়া বল। আবারও প্যাডে আঘাত করল ইমামের। এই দফা তাসকিন একটু দ্বিধাগ্রস্ত। পেছন থেকে মুশফিকের অভয়। সাকিবের রিভিউ। এদফাও আম্পায়ার ইমামের পক্ষেই ফলাফল দিলেন। এদফা ল্যাংটন রুসের টিভি আম্পায়ারের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

এদফা আবারও সেই অল্পের জন্যে বল পিচ করেছে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে। দ্বিতীয় দফা বেঁচে গেলেন ইমাম। তিনিও যেন নিজের ভাগ্যের এমন সহয়তা দেখে কিঞ্চিৎ হেসে দিলেন। তবে তখনও তার ভাগ্যের বাকি অনেকটা। দিনটি যেন ছিলই ইমামের জন্যে তোলা।

এবার মেহেদী মিরাজ এলেন প্রথম বারের মত বল করতে। এসেই তার বল সোজা ইমামের প্যাড ছুঁয়ে দেখল। তখন অবশ্য বাংলাদেশের কোন রিভিউ আর বাকি নেই। আগের দু’দফায় শেষ কোটার সবটুকু। তবে এদফা মিরাজের আবেদনে রুসের সম্মতি দিলেন। আঙুল তুলে ইমামকে প্যাভিলনের দিকে হাটতে বললেন। কিন্তু ইমাম নিজের ভাগ্যটা আবার বাজিয়ে দেখতে চাইলেন।

পাকিস্তানের হাতে তখন একটি রিভিউ বাকি। এবার টিভি আম্পায়ার শেষ অবধি গেলেন। কেননা বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছিল। ইম্প্যাক্ট ছিল স্ট্যাম্প বরাবরই। কিন্তু ওই যে দিনটা ছিল ইমামের। ভাগ্য বিধাতা দু’হাত ভরে ইমামকে দেবেন বলেই দিনটি রেখেছিলেন। বেঁচে গেলেন ইমাম। হক আই দেখালো মিরাজের বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যাবে।

ব্যাস তৃতীয় দফা ইমাম বেঁচে গেলেন। এরপর তিনি অবশ্য ফিফটি তুলে নিলেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ তম ফিফটি। ধারণা ছিল, ম্যাচ শেষ করেই ফিরবেন ইমাম। তখন নামের পাশে থাকবে তিন অংকের একটা ফিগার। কিন্তু শেষ অবধি হয়নি তা।

ইমামকে থামতে হয়েছে ৭৮ রানে। ভাগ্যের সর্বোচ্চ সহয়তাটুকু পেয়েও শেষ অবধি শতকের দেখাটি পাননি ইমাম। তাকে বোল্ড আউটই করতে হয়েছে শেষমেশ। মিরাজ তাই তার উইকেট উপড়ে ফেলেও তেমন কোন উদযাপন করেননি। কেননা ততক্ষণে বাংলাদেশের বিপক্ষেই ফলাফল ঢলে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link