অভিষেকে তাক লাগিয়ে দেওয়া মুস্তাফিজুরের বন্দনায় ভেসেছিলো বিশ্ব। স্বপ্নের এক যাত্রায় উড়ে বেড়াচ্ছিলেন মুস্তাফিজ। একেবারেই অপ্রতিরোধ্য। তাঁর বিপক্ষে বাইশ গজে ব্যাটারদের খাবি খাওয়া ছিলো অবধারিত। তাঁর ধূর্ততা ধরতে বিশ্লেষণ তো কম হয়নি। তবুও তিনি যেন ছিলেন একেবারেই অভেদ্য। তবুও চললো বিশ্লেষণ। কিন্তু বিশ্লেষণে কুপকাত না হওয়া মুস্তাফিজ থমকে গেলেন ইনজুরিতে।
কাঁধের এক ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে তাঁকে। নিজের পুরোনো ছন্দ তো দূরে থাক ঠিকঠাক বলও যেন করতে পারছিলেন না ‘দ্য কাটার মাস্টার’। ব্যাস! তাতেই গেলো গেলো রবে সরগরম হলো ক্রিকেট দুনিয়া। ইনজুরির কারণে নিজের বোলিং অ্যাকশনে বেশ পরিবর্তনও আনতে হয়েছিলো মুস্তাফিজের। এত সব ঝক্কি সামলে আগের ধারটা আর খুঁজেই পাচ্ছিলেন না মুস্তাফিজ।
যেই মুস্তাফিজের উপর ভর করেই বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দল হওয়ার সেই মুস্তাফিজই কিনা হারিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ ক্রিকেটে দৃশ্যপট থেকে। হয়ত হারিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু না হারিয়ে যাননি। অত্যন্ত সাদা বলের ক্রিকেটেও তিনি এখনও বেশ কার্যকরী এবং বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা প্রকাশিত বর্ষসেরার তালিকা তাতে সম্মতিও দেয়।
দুইদিনের ব্যবধানে আইসিসি প্রকাশ করে ২০২১ বর্ষসেরা একাদশ তিন ফরম্যাটের। দুই ফরম্যাটেই জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন এসেছে মুস্তাফিজ কি করে জায়গা পেলেন বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে একাদশে? কারণটা খুব সহজ। ওই যে কার্যকারীতা। সাদা বলের ক্রিকেটে মুস্তাফিজ বল হাতে দারুণরকমভাবে কার্যকর।
একটু পরিসংখ্যান ঘেটে যদি দেখা যায়, তাহলে বোধকরি বিষয়টা বেশ পরিষ্কার হবে। ২০২১ সালে করোনার নানারকম বিধিনিষেধের মাঝেও ক্রিকেটা চলেছে তাঁর আপন গতিতে। সেই গতিশীল গাড়িতে বাংলাদেশ চড়ে ভ্রমণ করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। সেই সুবাদে মুস্তাফিজুর রহমান টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২০টি। যেহেতু ২০২১ এই হয়েছিলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেই সুবাদে বাকি দলগুলোর মতোই বাংলাদেশেরও এই ফরম্যাটটা খেলা হয়েছে বেশি। মারকাটারি খেলা টি-টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট ঈর্ষণীয়। মাত্র সাত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি ইনিংসের যে সময়গুলোতে বল করেন তখন আসলে ব্যাটারদের মনোভাব থাকে মারমুখি। ইনিংসের শুরুতে এবং শেষের দিকে। সেই সময়ে বোলিং করেও তাঁর এমন ইকোনমি রেট সত্যিকার অর্থেই বেশ প্রসংসনীয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বাকি দুইজন স্পিন বোলার কেবল রয়েছেন তাঁর থেকে উপরে। উইকেট এবং ইকোনমি রেট বিবেচনায়। রানের লাগাম টেনে ধরা ছাড়াও মুস্তাফিজ নিয়েছেন ২৮টি উইকেট। সুতরাং মুস্তাফিজের ধার খানিক কমলেও একেবারেই অকেজো যে হয়ে জাননি তিনি তা বলা বাহুল্য।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের ভীড়ে এই বছর ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ছিলো তুলনামূলক কম। সেই দিক বিবেচনায় ওয়ানডে বর্ষসেরা একাদশে জায়গা পাননি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের কোন খেলোয়াড় জায়গা পাননি ওয়ানডে বর্ষসেরা একাদশে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড খেলেছে মোটে তিন ম্যাচ। বাকিদের ম্যাচের সংখ্যাও ধারেকাছে। সেই ভিন্ন এক আলাপ।
ওয়ানডেতেও মুস্তাফিজের ইকোনমি রেটটা দারুণ। ১০ ম্যাচ খেলে ৫.০৩ ইকোনমি রেট তাঁর। বিপরীতে নিয়েছেন ১৮টি উইকেট। এত সব পরিসংখ্যানই তো কথা বলে মুস্তাফিজের পক্ষে। একটা বড় ইনজুরির ধকল কাটিয়ে উঠতে নিশ্চয়ই সময় প্রয়োজন। সেই সময়টাই হয়ত নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। এখন হয়ত ধীরে ধীরে নিজের পুরানো রুপে। অপেক্ষা করতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু একেবারেই নিস্তেজ হয়ে জাননি মুস্তাফিজ সেই আভাস কিংবা প্রমাণ তো মিলেই গিয়েছে।