ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে এখন পর্যন্ত অবিশ্বাস্য কিছু ইনিংসের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্টে এবারের আসরেও মাঠ মাতাচ্ছেন বিশ্বের নামি-দামি তারকা ক্রিকেটাররা। এরই মধ্যে এবারের আসরে বেশ কিছু দুর্দান্ত ইনিংস দেখেছে ক্রিকেট প্রেমীরা। এখন পর্যন্ত চলতি আসরের সেরা পাঁচ ইনিংসগুলো দেখে নেওয়া যাক।
- প্যাট কামিন্স – কলকাতা নাইট রাইডার্স, প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অলরাউন্ডার। ম্যাচে যখন ব্যাকফুটে দল, ঠিক তখনই ব্যাট হাঁতে ত্রাতা হয়ে আসেন কামিন্স। মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর চালালেন তাণ্ডব! আর এই তাণ্ডবের অধিকাংশ ছিল নিজ দেশের সতীর্থ ক্রিকেটার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর।
১৫ ওভার শেষে কামিন্সের তখন ৮ বলে ২২ রান। শেষ ৫ ওভারে দরকার মাত্র ৩৫ রানের। সেই ৩৫ রান তুলতে খুব বেশি বল নষ্ট করেননি কামিন্স! এরপর ১৬ তম ওভারে অজি অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর চড়াও হয়ে চার ছক্কা, দুই চার ও নো বল থেকে আদায় করেন মোট ৩৫ রান!
স্যামসের এক ওভারে ৩৫ রান নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মাত্র ১৪ বলেই পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন কামিন্স! আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটিতে লোকেশ রাহুলের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন কামিন্স।
- আন্দ্রে রাসেল – কলকাতা নাইট রাইডার্স, প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব কিংস
ইনজুরির কারণে গেল মৌসুমে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। অনেক ম্যাচেই একাদশে ছিলেন না তিনি। তবে চলতি মৌসুমে ব্যাট হাতে ইতিমধ্যেই তাণ্ডবময় ইনিংস খেলেছেন ক্যারিবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেল। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৩১ বলে ৭০ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংসে দলকে জয় এনে দেন এই তারকা। ৮ ছক্কা ও ২ চারে ২২৫ স্ট্রাইক রেটে ১৫ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রাসেল। রাসেলের তাণ্ডবে পাত্তাই পায়নি পাঞ্জাবের বোলাররা।
- রাহুল তেওয়াতিয়া – গুজরাট টাইটান্স, প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব কিংস
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শেষ ২ বলে ২ ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন রাহুল তেওয়াতিয়া। রাহুলের ম্যাজিকে জয় পায় গুজরাট টাইটান্স। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিয়াম লিভিংস্টোনের ২৭ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৯ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় পাঞ্জাব কিংস।
লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুভমান গিলের ৫৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৯৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে গুজরাট। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে ৯৬ রানে আক্ষেপ নিয়ে গিল ফিরলে সাত বলে দরকার ছিল তখন ২০ রানের! সেখান থেকে তিন বলে প্রয়োজন ১৩ রানের! স্ট্রাইকে ছিলেন ডেভিড মিলার।
স্মিথের চতুর্থ বলটা ঠিকভাবে মারতে পারেননি মিলার। স্মিথের হাতেই আসে বল! কিন্তু রান নেওয়ার জন্য ক্রিজ ছেড়ে খানিকটা বেরিয়ে আসেন বোলিং প্রান্তে থাকা তেওয়াতিয়া। আর তাঁকে আউট করার নেশায় মত্ত হয়ে থ্রো করেন স্মিথ। ব্যাস, ওভারথ্রো থেকে পেয়ে গেলেন একটি রান। এই এক রানই কাল হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও পাঞ্জাবের জন্য।
শেষ ২ বলে প্রয়োজন ১২ রানের। ম্যাচে পাঞ্জাবের জয় প্রায় নিশ্চিত। যদি-কিন্ত থাকলেও দুই বলে দুই ছক্কা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সেই অসাধ্যই যেন সাধন করে ফেললেন তেওয়াতিয়া। শেষ দুই বলই ইয়োর্কার লেন্থে করতে যান স্মিথ। কিন্তু দুই বলই পড়ে যায় ফুলার লেন্থে। সেখান থেকেই উঠিয়ে নিয়ে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে পর পর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেন তেওয়াতিয়া। তেওয়াতিয়ার ৩ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় গুজরাট টাইটান্স।
- জশ বাটলার – রাজস্থান রয়্যালস, প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
এবারের আইপিএলে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনার জশ বাটলার। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান এই ইংলিশ ওপেনার। ৫ ছক্কা ও ১১ চারে ৬৮ বলে খেলেন ১০০ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। বাটলার ঝড়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ২৩ রানের জয় পায় রাজস্থান। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করা বাটলারের মাথায় আছে ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’।
- দীনেশ কার্তিক – রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু, প্রতিপক্ষ রাজস্থান রয়্যালস
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় কার্তিকের ব্যাট। ২৩ বলে ১ ছক্কা ও ৭ চারে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে জয় এনে দেন কার্তিক।
রাজস্থান রয়্যালসের দেওয়া ১৭০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটিং শিবির। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে শাহবাজ আহমেদের সাথে ৩২ বলে ৬৭ রানের তাণ্ডবময় জুটির পথে জয়ের ভিত গড়ে দেন কার্তিক। শাহবাজ ২৬ বলে ৪৫ রানে ফিরলেও ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই তারকা।