দোর্দণ্ড দাপুটে দুবে

লখনৌর বিপক্ষে এক ওভারে ২৫ রান দিয়ে দলকে জয় থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন দুবে। এরপর সমালোচনা ঝড়টাও ছিল তীব্র। ট্রল আর সমালোচনার বৃত্তে ডুবে ছিলেন দুবে। কিন্তু দমে যাননি তিনি। দলের প্রথম জয়টা আসলো সেই সমালোচিত দুবের হাত ধরেই।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের অবস্থা একেবারেই হতাশাজনক। চারবারের শিরোপাজয়ীরা প্রথম চার ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে আছে।

ব্যাটে-বলে হতশ্রী পারফরম্যান্সে এবারের শুরুটা চেন্নাইর জন্য ছিল চরম বাজে। যদিও ব্যাট হাতে চেন্নাইয়ের সেরা পারফরমার এখন পর্যন্ত শিভাম দুবে। বল হাতে উইকেটের দেখা না পেলেও ব্যাট হাতে তিনি এখন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের একজন। দলের বাজে অবস্থায়ও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল শিভাম দুবে।

সবশেষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলেছেন ৪৬ বলে ৯৫ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। দুবের তাণ্ডবে টুর্নামেন্টে এবারের আসরে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে চেন্নাই। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে এদিনও বিপর্যয়ে পড়ে চেন্নাই।

এরপর তৃতীয় উইকেটে রবিন উথাপ্পার সাথে মিলে গড়েন ১৬৫ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি। উথাপ্পার ৫০ বলে ৮৮ ও দুবের ৪৬ বলে ৯৫ রানের হার না মানা ইনিংসে ২১৬ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করে চেন্নাই। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাঙ্গালুরু ৯ উইকেটে ১৯৩ রান করলে ২৩ রানের জয় পায় চেন্নাই।

৮ ছক্কা, ৫ চার! স্ট্রাইক রেট ২১৭ প্রায়! শিভাম দুবের আগ্রাসী রূপটা এবারই প্রথম নয়। চলতি আসরে প্রথম চার ম্যাচের দু’টিতে খেলেছেন ঝড়ো দুই ইনিংস। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেন মাত্র তিন রান। পরের ম্যাচে লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে খেলেন ৩০ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। এরপরের ম্যাচেই আবারও দুবের ঝড়! এবার সমান সংখ্যক বল খেললেও রান তুলেছেন আরও বেশি। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে খেললেন ৩০ বলে ৫৭ রানের ইনিংস।

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে করেন মাত্র তিন রান। এরপর গেল রাতে ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে আবার সেই আগ্রাসী রূপে দেখা গেল দুবেকে। অবশ্য আক্ষেপটা রয়ে গেছে বলতে পারেন। মাত্র ৫ রানের জন্য দেখা পাননি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মেইডেন সেঞ্চুরির। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ৫২ গড়ে ১৭৭ স্ট্রাইক রেটে ১১৭ বল খেলে করেছেন ২০৭ রান। পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন দুইটি।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার দুইয়ে অবস্থান করছেন চেন্নাই সুপার কিংসের এই অলরাউন্ডার। জশ বাটলারের থেকে পিছিয়ে আছেন মাত্র ১১ রানে।

গেল আসরে খেলেছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। তবে সুযোগটা মেলেনি ঠিকঠাক। একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন ৯ ম্যাচে। এই ৯ ম্যাচে ২৯ গড়ে ১১৯ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৩০ রান। ১৫তম আসরের মেগা নিলামের আগে তাঁকে ছেড়ে দেয় রাজস্থান। এরপর নিলাম থেকে ২ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই।

সুযোগও পেয়েছেন প্রথম ম্যাচ থেকেই। বল হাতে সাদামাটা হলেও ব্যাট হাতে এখন পর্যন্ত তিনি দুর্দান্ত। গেল তিন আসরের মধ্যে স্ট্রাইক রেট ও গড়ের দিক থেকে নিজের সেরা অবস্থানে আছেন এই অলরাউন্ডার। আগের তিন আসরে মাত্র এক ফিফটি করা দুবে এই আসরে এখন পর্যন্ত করেছেন দুই ফিফটি। স্ট্রাইক রেট আর গড়টাও আকাশছোঁয়া। গড় ৫২ ও স্ট্রাইক রেট ১৭৭!

লখনৌর বিপক্ষে এক ওভারে ২৫ রান দিয়ে দলকে জয় থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন দুবে। এরপর সমালোচনা ঝড়টাও ছিল তীব্র। ট্রল আর সমালোচনার বৃত্তে ডুবে ছিলেন দুবে। কিন্তু দমে যাননি তিনি। দলের প্রথম জয়টা আসলো সেই সমালোচিত দুবের হাত ধরেই।

বল হাতে সেরাটা না দিতে পারলেও ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের সেরাটাই দিচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। দুবের হাত ধরেই হয়তো আবারও চিরচেনা রূপে ফিরতে পারে চেন্নাই সুপার কিংস। দলের অবস্থা যেমনই হোক দুবের ব্যাটিং আলাদাভাবেই নজরকাঁড়ছে সবার। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...