সিটি-লিভারপুল: শিরোপার দৌঁড়ে এগিয়ে কে!

যেই পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল দুই দল, তা নিয়েই ম্যাচ শেষ করে তারা। নিশ্চিতভাবেই লিগের বাকি ম্যাচগুলোর জেতার পরিকল্পনা থাকবে দুই দলের। কারণ কোনো ম্যাচে পয়েন্ট হারালেই শিরোপার দৌঁড় থেকে ছিটকে পড়তে হবে।

‘লিভারপুল-ম্যানচেস্টার সিটি ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র এবং সর্বোচ্চ মানের লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে । ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এটি।’ – বলছিলেন সাবেক ইংল্যান্ড তারকা ও ফুটবল পন্ডিত জ্যামি কারাগার। তার কথায় নিশ্চিতভাবেই সুর মেলাবেন বিশ্বের অধিকাংশ ফুটবল সমর্থক।

কেনই বা মেলাবেন না। গত কয়েক মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপ ও পেপ গার্দিওলা প্রিমিয়ার লীগে যতটা দাপট দেখিয়েছেন তা আর কখনো দেখাতে পারেনি কোন দলই। দুই দলের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু ইংলিশ ফুটবলকেই আলোড়িত করেনি, করেছে পুরো ইউরোপকে। লিভারপুল ও সিটি এখন তর্কসাপেক্ষে ইউরোপ তথা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই ক্লাব।

শ্রেষ্ঠ দুই দল, শ্রেষ্ঠ দুই ম্যানেজার, শ্রেষ্ঠ লড়াই; লিভারপুল বনাম ম্যানসিটি’র এই লড়াই হয়ে উঠেছে অলিখিত ‘ইংলিশ ক্লাসিকো’। আর শিরোপা জেতার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে শেষ হাসি হাসতে পারেনি কেউই। ২-২ গোলে নিষ্পত্তি হয়েছে এমন হাইভোল্টেজ এই লড়াইয়ের।

কি ছিল না ইতিহাদে? এটাক, কাউন্টার এটাক তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল বল দখলের শক্ত লড়াই, ছিল ট্যাকেল আর ফাউল। সালাহ মানে কিংবা ডি ব্রুইনা, জেসুসরা বারবার বল নিয়ে হানা দিয়েছিল প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে। সমান পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ভ্যান ডাইক, স্টোন্সরা ও।

ম্যাচের মাত্র পাঁচমিনিটেই স্বাগতিক দের এগিয়ে দেন সিটি অধিনায়ক কেভিন ডি ব্রুইনা। বার্নান্দো সিলভা’র পা থেকে বল এসেছিল তার পায়ে, বক্সের বাইরে থেকেই বাম পায়ের দুর্দান্ত এক শটে লিভারপুলের জাল কাঁপিয়ে দেন এই বেলজিয়ান।

তবে লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি সিটি, মাত্র আট মিনিট পরেই এন্ডি রবার্টসনের ক্রস থেকপ আসা বল ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড বাড়িয়ে দেন স্ট্রাইকার দিয়েগো জোতা’র দিকে। ডান পায়ের শটে এরপর সিটি গোলরক্ষক’কে পরাস্ত করতে কোন সমস্যা হয়নি এই পর্তুগিজের।

প্রথমার্ধের বাকি সময়ে দুই দলই বলার মতো বেশ কিছু আক্রমণ করে। তবে সিংহভাগ আক্রমণ আসে স্বাগতিকদের পক্ষ থেকেই। লিভারপুলের হাই লাইনকে ফাঁকি দিয়ে দুই উইং দিয়ে বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত বল বের করে সিটিজেনরা। এরকম একটি বল থেকেই দ্বিতীয় গোল করে তারা।

ক্যান্সেলো’র বাড়ানো এক থ্রু বল পেয়ে যায় আনমার্ক অবস্থায় থাকা গ্যাব্রিয়েল জেসুস। অফসাইড ট্র্যাপ ফাঁকি দিয়ে অলরেড গোলরক্ষক অ্যালিসনকে বোকা বানিয়ে দল-কে লিড দেন এই ব্রাজিলিয়ান। ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতি-তে যায় ম্যানসিটি।

বিরতি থেকে ফেরার পরেই চনমনে হয়ে উঠে লিভারপুল, বাড়তে থাকে আক্রমণের ধার। রাইট উইং থেকে অল্প ভিতরে ঢুকে দুর্দান্ত এক বাঁকানো বলে বক্স অভিমুখে রওনা দেওয়া মানেকে খুঁজে নেন সালাহ। জন্মদিনে খেলতে নামা মানে ওয়াকারকে পাশ কাটিয়ে দুর্দান্ত এক শটে সমতায় ফেরান তার দলকে।

এমন সুপার ক্ল্যাশে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) এর সিদ্ধান্ত থাকবে না, সেটি হয় না। ৬৪ মিনিটে লিভারপুলের হাই লাইন ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকা বল পেয়ে যান স্টার্লিং। বক্সে ঢুকে গোলও করেন এই ইংলিশ তারকা। কিন্তু ভিএআরে অল্পের জন্য অফসাইড ধরা পড়ায় বাতিল হয় এই গোল।

পুরো ম্যাচ জুড়ে বিশবার ফাউলের বাশি বাজাতে হয়েছিল রেফারি’কে, পাঁচবার বুক পকেট থেকে বের করতে হয়েছিল হলুদ কার্ড। আগ্রাসন আর আক্রমণে দর্শকদের বারবার রোমাঞ্চিত করেছিল দুই সুপার জায়ান্টের লড়াই।

তবে ড্র হওয়াতে লিগ টেবিলে এখনও আগের অবস্থায় রয়েছে দুই দল। সিটি’র চেয়ে এক পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের দুইয়ে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। শিরোপা জিততে চাইলে এখন থেকেই তাদের সিটির হোঁচট প্রত্যাশা করতে হচ্ছে।

যেই পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল দুই দল, তা নিয়েই ম্যাচ শেষ করে তারা। নিশ্চিতভাবেই লিগের বাকি ম্যাচগুলোর জেতার পরিকল্পনা থাকবে দুই দলের। কারণ কোনো ম্যাচে পয়েন্ট হারালেই শিরোপার দৌঁড় থেকে ছিটকে পড়তে হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...