মেঘে ঢাকা কিংবদন্তি

আফ্রিকা মহাদেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে আলোচনা হলে শুরুর দিকেই থাকবে স্যামুয়েল ইতো, দিদিয়ের দ্রগবা'র কথা। হালের মোহামেদ সালাহ কিংবা সাদিও মানে’র কথাও বলতে পারেন অনেকে। কিন্তু পারফরম্যান্সের বিচারে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন এসব আলোচনায় উঠে আসে না বার্সেলোনা আর ম্যানচেস্টার সিটি’র আফ্রিকান মিডফিল্ডার গেনগিরি ইয়ায়া তোরে’র কথা৷

আফ্রিকা মহাদেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে আলোচনা হলে শুরুর দিকেই থাকবে স্যামুয়েল ইতো, দিদিয়ের দ্রগবা’র কথা। হালের মোহামেদ সালাহ কিংবা সাদিও মানে’র কথাও বলতে পারেন অনেকে। কিন্তু পারফরম্যান্সের বিচারে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন এসব আলোচনায় উঠে আসে না বার্সেলোনা আর ম্যানচেস্টার সিটি’র আফ্রিকান মিডফিল্ডার গেনগিরি ইয়ায়া তোরে’র কথা৷

১৯৮৩ সালের ১৩ মে আইভরি কোস্টের বোয়াক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইয়ায়া তোরে। তোরে’র বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আর মা খামারের কাজ দেখাশোনা করতেন। অন্য অনেক আফ্রিকান শিশুর মতই তোরে’কেও ছোট থেকে লড়াই করতে হয়ে অর্থকষ্টের বিরুদ্ধে। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য জুতা পালিশের মত কাজ করতে হয়েছিল তাকে।

সে সময় থেকেই ইয়ায়া তোরে বড় ভাইদের কাছ থেকে ফুটবলের বিদ্যা আয়ত্ত করা শুরু করেছিলেন। আর মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি আইভরি কোস্টের এএসইসি মিমোসাস ক্লাবের যুবদলে সুযোগ পান। সেই ক্লাবে যুব দল এবং সিনিয়র দল মিলিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ছিলেন তোরে। এরপর ২০০১ সালে বেলজিয়ামের কে.এস.কে বেভেরেন ক্লাবে যোগ দেন ইয়ায়া তোরে।

প্রায় দুই মৌসুমে বেলজিয়ান ক্লাবটির হয়ে ৭০টি ম্যাচ খেলেছিলেন তোরে। নিজের প্রতিভা, পরিশ্রম, ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা সবমিলিয়ে কমপ্লিট মিডফিল্ডার হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল, এই চার বছর ইয়ায়া তোরে ডোনেস্ক, অলিম্পিকোস, মোনাকো’র মত ক্লাবগুলোতে খেলেছিলেন। এরপরই প্রথমবারের মত বড় ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তোরে।

২০০৭ সালে এফ.সি বার্সেলোনা এই মিডফিল্ডারকে নিজেদের দলে ভেড়ায়। লিওনেল মেসি, ইনিয়েস্তাদের নিয়ে গড়া বার্সেলোনার সে-সময়ের একাদশেও তোরে’র আলাদা গুরুত্ব ছিল। বার্সেলোনার হয়ে তোরে ১০০ এর বেশি ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৯ সালে বার্সেলোনার হেক্সা (একই মৌসুমে ছয়টি ট্রফি জয়) জয়ী দলের একজন ছিলেন তিনি।

তবে এই আফ্রিকান ফুটবলার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা সময় কাটান ইংল্যান্ডে। ২০১০ সালে বার্সেলোনা থেকে তোরে’কে নিয়ে আসে ম্যানচেস্টার সিটি। মিডফিল্ডার হওয়া সত্ত্বেও সিটিজেনদের হয়ে ২৩০টি ম্যাচ খেলে ৫৯টি গোল করেছিলেন তিনি। ২০১১ সালে এফএ কাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে তোরে’র একমাত্র গোলেই জয় পেয়েছিল ম্যানসিটি। এছাড়া ক্লাবটির প্রথম লিগ শিরোপা জয়ে অবদান রেখেছিলেন তোরে। ২০১৮ সালে দীর্ঘ আট বছর খেলার পর ম্যানসিটি থেকে বিদায় নেন ইয়ায়া তোরে। এর বছর দুয়েক পরেই তুলে রাখেন নিজের বুটজোড়া।

জাতীয় দল আইভরি কোস্টের হয়ে ১০১বার মাঠে নেমেছিলেন ইয়ায়া তোরে। ২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৪ সালে দেশটির বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনন্য ভূমিকা ছিল তার। এছাড়া আফ্রিকান নেশন্স কাপে একবার চ্যাম্পিয়ন এবং দুইবার রানার আপ হয়েছিল তোরে’র আইভরি কোস্ট।

মূলত স্ট্রাইকার পজিশনেই কিশোর বয়সে খেলতেন ইয়ায়া তোরে। এরপর ডিফেন্ডারও ছিলেন কিছুদিন। কিন্তু পেশাদার ক্যারিয়ারে বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হিসেবেই খেলেছেন। নিজের পজিশনে বিশ্ব সেরাদের একজন আইভরি কোস্টের এই খেলোয়াড়।

শিরোপা উদযাপনের ক্ষেত্রেও অন্য অনেক তারকাদের থেকে এগিয়ে আছেন ইয়ায়া তোরে। নিজের বর্নাঢ্য এক ক্যারিয়ারে দুইবার লা লিগা এবং তিনবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিলেন এই মিডফিল্ডার। এছাড়া বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ কাপ, সুপার কাপ সহ সম্ভাব্য সব ট্রফি নিজের করে নিয়েছেন তোরে। ইংলিশ এফএ কাপ জয়ের স্বাদও পেয়েছেন তিনি।

২০১১ থেকে ২০১৪, টানা চারা বছর আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন আইভরি কোস্টের ইয়াইয়া তোরে। তার আগে কখনো কোনও খেলোয়াড় এমন কীর্তি গড়তে পারেননি। ক্যামেরনের স্যামুয়েল ইতো চারবার এই পুরস্কার জিতলেও একটানা চার বছর জিততে পারেন নি।

ডেভিড সিলভা, ভিনসেন্ট কোম্পানিদের মতই ইয়ায়া তোরে-ও ম্যানচেস্টার সিটির একজন কিংবদন্তি। কিন্তু এদের নিয়ে যতটা ঝড় ওঠে আলোচনার টেবিলে তার সিকিভাগও জোটে না তোরে’র কপালে। আফ্রিকান ফুটবলের আলোচনাতেও তোরে’কে স্মরণ করা হয় কদাচিৎ। কিছু মানুষ হয়তো এমনই হয়, পর্দার আড়ালে নিজের কাজটুকু করে যায় শুধু নিরলসভাবে। তবু ভক্তদের কেউ যদি আইভরি কোস্ট কিংবা ম্যানচেস্টার সিটি’র ফুটবল ইতিহাস জানতে চায় নিশ্চিতভাবেই ইয়ায়া তোরে’র গল্পের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...