যে খেলায় বুঁদ আমেরিকা

আমেরিকান স্পোর্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএফএ) মতে ২০১৯ এবং ২০২০ এর মাঝে পিকলবল খেলার হার ২১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে কলেজ থেকে ১১ লাখ ৯৩ হাজার স্নাতক পিকাবল খেলোয়াড় বেরিয়েছে।

বর্তমান সময়ে আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয় একটি খেলা পিকলবল। টেনিস, ব্যাডমিন্টন এবং পিং-পং খেলার কিছু অংশের সমন্বয়ে মূলত পিকলবল খেলা। দিন দিন আমেরিকায় এই খেলার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি বিশ্বের অনেক দেশেই এখন পিকলবল খেলা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মে আমেরিকান ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ জোয়েল প্রিচার্ডের বাড়িতে প্রথম পিকলবল খেলা আবিষ্কার হয়। জোয়েলের দুই বন্ধু বিল বেল ও বার্নি ম্যাককালাম তাঁর বাড়িতে আসে। তাঁরা দেখলেন বাড়ির সবাই বসে অবসর সময় পার করছে। সেখানে এক রুমে ব্যাডমিন্টন কোর্ট ছিল। কিন্তু ব্যাডমিন্টন খেলার সব সরঞ্জাম তখন পাওয়া যাচ্ছিল না।

এরপর তারা একটি বুদ্ধি বের করলো। ব্যাডমিন্টনের জাল কিছুটা নামিয়ে ব্যাডমিন্টন প্যাডেল দিয়ে প্লাস্টিকের ছিদ্রযুক্ত বল একদিক থেকে আরেকদিকে মেরে খেলতে লাগলো। সপ্তাহখানকের মধ্যে খেলাটি বেশ সাড়া ফেললো। নামকরণ করা ‘পিকলবল’! এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে এই খেলার নিয়ম আবিষ্কার করা হল। মূলত ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম থেকেই পিকলবলের নিয়ম তৈরি করা হয়।

১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মত পিকলবলের জন্য আলাদা কোর্ট তৈরি করা হয়। খেলার উদ্দেশ্যেটা ছিল, ‘একটি পরিবারের সবাই যাতে একসাথে মিলে খেলতে পারে।’

২০০৬ সালে এই খেলার প্রতি উৎসাহী হয়ে কানাডা থেকে সুনিল ভালাভলকর নামের এক ভারতীয় নাগরিক কিছু প্যাডেলস এবং বল নিয়ে আসেন পিকলবল খেলার জন্য। মুম্বাইয়ে প্রথমবার তিনি চালু করেন এই খেলা। অল ইন্ডিয়া পিকবল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ভারতের ১৬টি রাজ্যে এখন পিকলবল খেলা হয় যেখানে প্রায় ৩ হাজার নিবন্ধিত খেলোয়াড় আছে!

আমেরিকান স্পোর্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএফএ) মতে ২০১৯ এবং ২০২০ এর মাঝে পিকলবল খেলার হার ২১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে কলেজ থেকে ১১ লাখ ৯৩ হাজার স্নাতক পিকাবল খেলোয়াড় বেরিয়েছে।

আমেরিকান পিকলবল অ্যাসোসিয়েশন এক বার্তায় জানান, ‘গেল দুই বছরে দেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খেলা পিকলবল।’ ২০২২ পর্যন্ত আমেরিকায় ৪.৮ মিলিয়ন মানুষ এই খেলার সাথে যুক্ত হয়েছেন। এবং এর বর্ধনশীলতা এসে ঠেকেছে ৩৯.৩ শতাংশতে!

ব্যাডমিন্টন সাইজের কোর্টের মাঝেমাঝিতে ৩৪ ইঞ্চি উচ্চতার জাল লাগানো থাকে। ছিদ্রযুক্ত একটি প্লাস্টিক বল দিয়ে মূলত এই খেলা হয় এবং কাঠের প্যাডেলস দ্বারা বল দুইপ্রান্তে মারা হয়। দু’জন কিংবা চারজনে এটি খেলা যায়।

২০০৯ সালে আরিজোনার বাকিয়েতে প্রথমবার চারশোর বেশি খেলোয়াড় নিয়ে জাতীয় পিকলবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। আমেরিকান স্পোর্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মতে এর মাঝে ৬১ শতংশ পুরুষ এবং ৩৯ শতাংশ ছিল মহিলা খেলোয়াড়। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ৩৮.১ বছর।

বছরে আটবারের বেশি খেলেছেন এমন খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৪৭.৫ বছর। আটবারের বেশি খেলা ৬০ শতাংশ খেলোয়াড়ের ৫৫ বা তারও বেশি! অপরদিকে, বছরে ১ থেকে ৭ বারের মত খেলেছেন এমন খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৩৩.৬ বছর। এর মধ্যে ৭৯% শতাংশ খেলোয়াড়ের বয়স ৫৪ বা তার কিছুটা কম!

পিকলবলের নামকরণ নিয়েও আছে খানিকটা বিতর্ক। পিকলবল অ্যাসোসিয়েশনের মতে এর নামকরণ নিয়ে দু’টি ঘটনা আছে। জোয়েল প্রিচার্ডসের একটি কুকুর ছিল পিকলস। তাঁর নামানুসারেই এই খেলার নাম পিকলবল রাখা হয়। আবার ওই রাজ্যের ক্রুদের ‘পিকল বোট’ দেখে জোয়েলের স্ত্রী এই খেলার নাম পিকল বল রাখেন এমনও কথিত আছে। যদিও দুটো ঘটনাই জোয়েলের সাথে সম্পর্কিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...