ভারতের গত বছরের টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গল্পটা ব্যর্থতায় মোড়ানো। সেই হতাশার গ্লানিকে পেছনে ফেলে নতুন করে ভাগ্য লিখতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত ভারতীয় দল। দলে বদলেছে অধিনায়ক, এসেছে নতুন কোচ। বিরাট পরবর্তী নেতৃত্বের ভারটা এখন রোহিত শর্মার ঘাড়ে। ওদিকে সাবেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়ের ঘাড়ে দলের কোচিং এর দায়িত্বটা তুলে দিয়েছে বিসিসিআই।
দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছে তাঁরা। দল নিয়ে করেছেন নানান পরীক্ষা নীরিক্ষা। খেলেছেন অনেকগুলো টি- টোয়েন্টি সিরিজ। কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেই ফেব্রুয়ারিতেই টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নীল নকশা তৈরি করেছিলেন। ভারত যে ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠেছে দিন দিন, তা কেবল বাঘা বাঘা ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে ওঠেনি। বরং পাশাপাশি দক্ষ ও নিবেদিত ম্যানেজমেন্ট ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাফল্যের অন্যতম টোটকা।
এশিয়া কাপের ফেবারিট যে ভারত এই নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই। আপাতত ভারতীয় দলের লক্ষ্য হলো এশিয়া কাপে সাফল্যের পথ পাড়ি দিয়ে অক্টোবরে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে। ক্রিকেটবিশ্বে টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটের এক নম্বর দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে উৎসুক তাঁরা। এই যে গত ছয় মাসে বিভিন্ন সিরিজে খেলোয়াড়দের বারবার অদল-বদল করা অনেকের কাছে বোধগম্য না হলেও এর বেশিরভাগই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অধিনায়ক, কোচ, কন্ডিশনিং কোচ ফিজিওদের মিটিং হয়েছিলো। তারা তখন পুরো বছরের সময়সূচী চিহ্নিত করার পাশাপাশি অধিনায়ক ও কোচ খেলোয়াড়দের একটি তালিকা দিয়েছিলেন। তখনই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য সেরা আকারে প্রতিটি সিরিজের খেলোয়াড়দের তৈরী করার দিকটি চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড কেবল ১৫ জনের হলেও টিম ম্যানেজমেন্ট মূলত ৩০ জনকে মাথায় নিয়ে কাজ করেছে। যেখানে তাঁদের পরিকল্পনায় প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য বিকল্প খেলোয়াড় ছিলো। উদাহরণস্বরূপ এই যে রবীন্দ্র জাদেজা আবার হাঁটুর ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের বাকি অংশ থেকে ছিটকে পড়েছেন।
জাদেজার বিকল্প হিসেবে শুক্রবার রাতে আরেক ক্রিকেটার অক্ষর প্যাটেল দুবাইতে পৌঁছেছেন। জাদেজা ভারতে ফিরে গিয়েছেন এবং মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে বিশ্রামে থাকবেন। যেন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ফিট হয়ে ফিরে আসতে পারেন।
ভারতীয় ক্রিকেটবোর্ড ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। যেন সিরিজ বা টুর্নামেন্টের মাঝখানে কোন ক্রিকেটার অবসাদজনিত কারণে ভেঙ্গে না পড়ে। তাছাড়া খেলোয়াড়ের প্রয়োজনে তাকে বিশ্রাম দিতেও প্রস্তুত টিম ম্যানেজমেন্ট। যেমনটি এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে হংকং এর বিপক্ষে ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়াকে বিশ্রাম দিয়েছিলো।
রোহিত শর্মা বোলারদের দিকে দারুণ খেয়ালী। যেমন দীপক চাহার স্টান্ডবাই থাকা স্বত্বেও দলের প্রয়োজনে দুবাইতে অবস্থান করছেন। ওদিকে শ্রেয়াস আইয়ার এবং অক্ষর প্যাটেলকে ভারতে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছিল। যেন প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে তাঁরা যোগ দিতে পারেন দলের সাথে। চাহারকে ভুবনেশ্বর কুমারের ব্যাকাপ হিসেবে ভাবা হয়েছে। ভারতের অন্যতম সেরা এই পেসার প্রায় ছয় মাস পর দলে যোগ দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ ভুবি। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট তার অগ্রগতি কড়া নজরে রাখছে। এভাবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট দারুণ দক্ষ হাতে এশিয়া কাপ ও টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দলকে ঢেলে সাজাচ্ছে। সবদিকে ভারসাম্য বজায় রেখে নিজেদের সেরা দল নিয়েই বিশ্ব জয়ের লক্ষে নামবে তাঁরা। হয়তোবা নীল নকশাটা আরেকবার শিরোপা অব্দি নিয়ে যাবে দলটিকে।