একটা ম্যাচ নিয়ে এতটা আগ্রহ খুব কমই থাকে। বলতে দ্বিধা নেই ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের গুরুত্ব আর মহাত্ব একেবারেই অন্যরকম। বর্তমানে দুই দলের খেলাটা কম হয় বলেই মানুষ বেশি অপেক্ষায় থাকে। গত আট বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক কোন সিরিজ নেই। তাই অপেক্ষায় থাকতে হয় বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে চিরবৈরীর দুই দেশের ম্যাচের জন্য।
আজ তেমনি একটা ম্যাচে আবারো মাঠে নামতে যাচ্ছে বিরাট কোহলি আর বাবর আযমের দল। বিশ্বকাপের ম্যাচ বলে পরিস্কার ব্যবধানেই এগিয়ে থাকবে ভারত। কারণ এখনো বিশ্বসেরা আসরে জয়ের দেখা পায়নি ইমরান খানের উত্তরসূরীরা। মাঠের লড়াইয়ের বাইরে এই ম্যাচটি টাকা অংকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে যে কোন দুই দেশের লড়াইকে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে টিকিট তাই যেন সোনার হরিণ।
শুধু ক্রিকেট নয়, খেলাধুলার যে ইভেন্টেই ভারত-পাকিস্তান থাকুক, তা থাকে আগ্রহের তুঙ্গে। আর ক্রিকেট হলে তো উত্তেজনার আচটা ক্রিকেটপ্রেমিদের গায়ে এসে পড়ে! কারণটা হতে পারে তাদের মাঠে দেখা হয় এখন কালেভদ্রে। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষবার তারা মাঠে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল।
তারও আগে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত আসরে। দীর্ঘদিন পর আজ আবার মাঠে নামছে রাজনৈতিকভাবে দুই মেরুতে অবস্থান করা দেশ দুটি। সবচেয়ে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ভরপুর এই ম্যাচের সাক্ষী হতে টিকিটের পেছনে লাখ টাকা দিতেও কার্পণ্য করছেন না খেলাপ্রেমী অনেকে। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞাপনের বাজার দরও হয়ে যায় আকাশচুম্বী। স্টার স্পোর্টস এই ম্যাচের সম্প্রচারকারী হিসেবে কিনে নিয়েছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনের যে দর ঠিক করা হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতি ১০ সেকেন্ডে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ধার্য করেছে সম্প্রচারকারী সংস্থাটি! তাতে করে এই দিনে বিজ্ঞাপনের জন্য ৯০০ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখার আশা করছে সম্প্রচারকারী সংস্থা।
যা অনেকেরই চোঁখ কপালে উঠে যাবার মতো অবস্থা হতে পারে। অর্খকড়ির তালিকায় আরো রয়েছে ব্রডকাস্টার ও আইসিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ স্পন্সররাও। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে বিজ্ঞাপনের জন্য ২৭৫ কোটি টাকা লাভের আশা সংস্থার। এছাড়া কো প্রেজেন্টিং স্পনসরশিপ এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকায়।
এর বাইরে অ্যাসোসিয়েট স্পনসরশিপের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে যা দাড়াচ্ছে, তাতে করে বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় হবে তা নিশ্চিতভাবে ভেঙে দিবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পূর্বের যাবতীয় রেকর্ড। স্বাভাবিকভাবে আয়ের এই পরিমাণ দেখে খুশিতে আত্মহারা হতে পারেন স¤প্রচারকারী সংস্থা থেকে শুরু করে আয়োজকরাও।
ক্রিকেটীয় লড়াই বাদেও এই ম্যাচ ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যে পারদ তাই অনেকটা আকাশছোঁয়া। শুধু কি তাই! এ ম্যাচের টিকিটের মূল্য যে রেকর্ড ছুয়েছে আরও আগো! জানা গেছে, কালোবাজারে ম্যাচের আগের দিন একেকটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ টাকায়। ইতোমধ্যে প্রায় সব টিকিটই নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। এছাড়া অনলাইন বুকিং শুরু হওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট শেষ হয়ে যায়।
এখন কালোবাজারে দেদারসে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ ২ লাখ ও সর্বনিম্ন সাড়ে ১২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে আলোচিত ম্যাচের টিকিটগুলো। এছাড়া ৩১,২০০ ও ৫৪,১০০ টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি টিকিটও নাকি আছে। অন্যান্য যে কোন সময়ের চেয়ে তুলনামূলক ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচের বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৩৩৩ গুণ বেশি দামে!
এই ম্যাচের স্বাক্ষী হতে তাই টাকা নিয়ে ভাবতে চান না কোন সমর্থকই। পাশাপাশি একাধিক টেলিভিশনে দেখানো হবে এই ম্যাচ। যে কারণে বিজ্ঞাপণদাতারা লাইন ধরেছে অনেকটা আগেভাগে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালে টিভিতে ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন দেখানোর যে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে তা সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। দশ সেকেন্ডের স্পটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। তাও আবারো সুযোগই পাচ্ছেন না বিজ্ঞাপনদাতারা।
সবদিক বিবেচনায় ক্রিকেটভক্তদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, একথা বলতে দ্বিধা নেই। ক্রিকেট বিষয়ক বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, ম্যাচ ভেন্যু দুবাইয়ের বার ও রেস্তোরাগুলোতে পান ভোজনের দামও নাকি প্রচুর বেড়েছে। তবুও পানশালা ও রেস্তোরাগুলোতে ভিড় বাড়ছে অন্যান্য যে কোন সময়েল তুলনায়।
যেন এই একটি ম্যাচই দুবাইয়ের মানচিত্রটাই বদলে দিতে যাচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে আমিরশাহী ভ্রমণের প্যাকেজ ট্যুর নিয়ে হাজির হয়েছেন আমেরিকা ও ইংল্যান্ড থেকে ক্রিকেটভক্তরা। সব মিলিয়ে অর্থেল হিসাবে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এক ম্যাচের এই লড়াইটা।
ভারত-পাকিস্তান মহারণটচা যে মাঠের খেলা সেটা অনেকেই ভুলে যান। এই যেমন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তার দল জিতবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ তো বটেই, এমনকি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচটা জিততে পারলে ক্রিকেটারদের জন্য বোনাস ঘোষণা করেছে পিসিবি।
ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ খেলোয়াড়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারত-পাকিস্তান টোয়েন্টি-২০ লড়াইয়ে ভারতীয়রা অনেক এগিয়ে। দুই দল এর আগে ৮ বার মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে ৬ বারই জিতেছে ভারত। একবার মাত্র জিতেছে পাকিস্তান। অতীতের এই রেকর্ড বিবেচনায় আজ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ সতর্ক থেকেই খেলতে নামবে বিরাট কোহলির দলা।
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে পরিসংখ্যানে আবার এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। ১৩২ ওয়ানডে লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয় যেখানে ৭৩ বার, সেখানে ভারত জিতেছে ৫৫ বার। ৫৯ টেস্ট লড়াইয়ে পাকিস্তানের ১২টিতে আর ভারত জিতেছে ৯টিতে। তবে টোয়েন্টি-২০ তে ভারতের একাধিপত্য চমক জাগানিয়া। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে পাকিস্তান মাত্র একবারই ভারতকে হারিয়েছে। ২০১২ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের পর আর কোন ম্যাচ জেতেনি। আজ সেই গ্যারো কাটাতে চায় বাবর আজমের দল।