অবশেষে থেমেছে ভারতের জয়রথ। নিজ দেশে এক যুগ পর বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন রোহিত শর্মারা, এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন শত কোটি ভারতীয় সমর্থক। তবে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে অজিদের প্রতাপে। ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শিরোপা অস্ট্রেলিয়া শিবিরে।
গোটা টুর্নামেন্টে ভারতের আধিপত্য নিয়ে যেমন চর্চা নিয়ে, তার চেয়ে মুখরোচক কথা বেশি ছড়িয়েছে পিচ নিয়ে কারসাজিতে। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় ভারত নাকি ইচ্ছামতো পিচে খেলেছে পুরো টুর্নামেন্টে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক, বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। এমন প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মিলেছিল আইসিসির কাছ থেকেই। তাতে অবশ্য মন গলেনি অনেকেরই। পিচ বিতর্কের গুঞ্জনের স্রোত গড়িয়ে এসেছিল ফাইনাল পর্যন্তও।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, রান প্রসবার এই বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত এমন উইকেটের যৌক্তিকতা কোথায়? আগেই জানা গিয়েছিল, আহমেদাবাদের উইকেট হবে স্পোর্টিং। রান হবে, তবে টানা বাউন্ডারির ম্যাচ হবে না। প্রথমে ব্যাট করা দলের জন্য ৩১৫ রানই ছিল যথেষ্ট। ভারত সেই রান তো দূরে থাক, আড়াইশো রানও টপকাতে পারেনি।
তাছাড়া আহমেদাবাদের উইকেট দেখে মনেও হয়নি, এটি তিনশো পেরোনোর মতো পিচ। বল থেমে এসেছে, অনাকাঙ্খিত বাউন্স দেখা গিয়েছে, পেসারদের গতির তারতম্যও মিলেছে এই পিচ থেকে। সব মিলিয়ে ব্যাটারদের জন্য ব্যাটিং করাটা কঠিনই হয়েছে বেশ। পরে ব্যাট করতে নেমে ট্রাভিস হেড যদিও বা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তবে ডিউ ফ্যাক্টরের কিছুটা সুবিধা আদায় করেই অস্ট্রেলিয়া ছুটেছে জয়ের পথে। দিনশেষে জয়ের পুষ্পমাল্যও পেয়েছে তাঁরাই।
ভারতের ব্যাটিং সমৃদ্ধ লাইনআপ। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার, সবাই ছিলেন ফর্মে। প্রশ্ন হচ্ছে, পিচ পরিবর্তনের অভিযোগ কিংবা ইচ্ছামতো উইকেটে খেলাই যদি ভারত খেলে থাকে, তাহলে উইকেট বানানোর বুদ্ধিটা কার? সম্পূরক প্রশ্ন, এবারের বিশ্বকাপের শেষটা এমন উইকেটে মঞ্চায়ন করার পরিকল্পনাটাই বা কার?
এমন প্রশ্নের উত্তর অজানা। তবে ভারতের বিশ্বকাপ খোয়ানোতে ভারতীয় সমর্থকরা যখন হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আছে, তখন এমন উইকেটে ফাইনাল গড়ানোর ব্যাপারটা অনেকের কাছেই হয়ে রইল বিস্ময়ের বিষয়। অবশ্য আহমেদাবাদের পরিসংখ্যানটাই তো বলে, প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২৩৭। ভারত সেই পার স্কোর পেরিয়েছে বটে। তবে বিশ্বজয়ের পথে শেষ বাঁধাটা আর টপকাতে পারলো না। তবে বিশ্ব ক্রিকেট নিশ্চিতভাবেই হাই স্কোরিং বিশ্বকাপে লো স্কোরিং ফাইনালের অপেক্ষায় ছিল না।