যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ বার ফাইনাল খেলা দলটির নাম কি আপনি জানেন? না জানলেও যে খুব বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। তবে চমকপ্রদ এক তথ্য জেনে রাখা তো ভাল। ভণিতা বাদ দেই। মূল কথায় ফিরি। সর্বোচ্চ দশবার বার যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে ভারতীয় যুবারা। ১৫ টা আসর বসছে এখন অবধি। এযার মধ্যে সাতবার শিরোপা জয়ের উল্লাস করেছে তাঁরা। সেটাও কিনা যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এই যুব বিশ্বকাপ পর্যায়ে বরাবরই ভারত বেশ শক্তিশালী এক দল। তা হয়ত পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শুধু যে যুব বিশ্বকাপ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে ভারতীয় যুবারা তা নয়। তাঁরা সময়ে সময়ে জাতীয় দলের এসেছেন, আলো কেড়েছেন, দলের জন্যে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে বনে গেছেন তারকা। সেই সকল তারকা ক্রিকেটারদের কারা কারা খেলেছিলেন একসাথে যুব বিশ্বকাপ সে তথ্যই রয়েছে আজকের আয়োজনে।
- বীরেন্দ্র শেবাগ, হরভজন সিং ও মোহাম্মদ কাইফ (১৯৯৮)
জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি খেলা দুইজন খেলোয়াড় একসাথে খেলেছিলেন যুববিশ্বকাপও। বীরেন্দ্র শেবাগ ও হরভজন সিং ছিলেন ১৯৯৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া যুব বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে। তাঁদের সাথে ছিলেন ব্যাটার মোহাম্মদ কাইফও।
- মোহাম্মদ কাইফ ও যুবরাজ সিং (২০০০)
ভারতের যুব বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা জেতা দলের অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ কাইফ। ২০০০ সালের খেলা নিজের দ্বিতীয় যুব বিশ্বকাপেই শিরোপা জিতিয়েছিলেন কাইফ। তবে তাঁকে সহয়তা করে যুব বিশ্বকাপ থেকেই বেশ আলোচনায় চলে এসেছিলেন যুবরাজ সিং। যে কিনা পরবর্তী সময়ে দীর্ঘকাল ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
- পার্থিব প্যাটেল, ইরফান পাঠান ও স্টুয়ার্ট বিনি (২০০২)
২০০২ সালের যুব বিশ্বকাপ খেলার পরপরই জাতীয় দলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার পার্থিব প্যাটেল। সে যুব দলের তাঁর সতীর্থ ছিলেন দুই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান ও স্টুয়ার্ট বিনি। তারাও পরবর্তীতে খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। এমনকি ইরফান পাঠান জাতীয় দলের হয়ে জিতেছিলেন ২০০৭ সালে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
- দীনেশ কার্তিক, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, আম্বাতি রাইডু, আরপি সিং ও রবিন উথাপ্পা (২০০৪)
২০০৪ সাল সম্ভবত ভারতকে দিয়েছিল একঝাঁক তারকা ক্রিকেটার। সেই দলে থাকা শিখর ধাওয়ান ৫০৫ রানে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের একটা রেকর্ড গড়ে গিয়েছিলেন যা কিনা টপকাতে লেগে গেছে দীর্ঘ ১৮ বছর। সে দলে থাকা দীনেশ কার্তিক, শিখর, সুরেশ রায়না, আম্বাতি রাইডু, আরপি সিং ও রবিন উথাপ্পা অন্তত একটি আইসিসির শিরোপা জিতেছেন নিজেদের ক্যারিয়ারে। এখন ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন ২০০৪ ব্যাচের বেশ কিছু খেলোয়াড়।
- রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পুজারা, রবীন্দ্র জাদেজা, পিযুষ চাওলা (২০০৬)
ভারত জাতীয় দলের সাদা বলের ক্রিকেটের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। সেবার তিনি এবং তাঁর দল ফাইনাল অবধি গিয়েছিল। পাকিস্তানের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের মিশনে তাঁদের কাছে ফাইনাল হেরেছিল ভারত। সেই দলে থাকা চেতেশ্বর পুজারা পরবর্তীতে ভারতীয় টেস্ট দলের ব্যাটিং স্তম্ভ। তাছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা ও পিযুষ চাওলা জাতীয় দলের স্পিন বোলিং অ্যাসেটে পরিণত হয়েছিলেন।
- বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা ও মানিশ পান্ডে (২০০৮)
বিরাট কোহলি ২০০৮ সালে ভারত যুব দলকে শিরোপা জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেবার শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিল ভারত। সেই দলের প্রতিনিধি হয়ে দ্বিতীয় দফা যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। অন্যদিকে, মানিশ পান্ডের মতো খেলোয়াড়ও ছিলেন সেই বিশ্বকাপ জয়ী দলে।
- লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও হার্শাল প্যাটেল (২০১০)
ভারত যুব বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম খারাপ একটা সময় পার করেছিল ২০১০ সালে। সেবার সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পারেনি দল। তবে সেবার যুবদলে থাকা লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল পরবর্তীতে আলো ছড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আর আইপিএলে নিয়মিত মুখ হার্শেল প্যাটেল সম্প্রতি গায়ে জড়িয়েছেন জাতীয় দলের জার্সি।
- শ্রেয়াস আইয়ার, সাঞ্জু স্যামসন, কুলদ্বীপ যাদব, দীপক হুদা (২০১৪)
চায়নাম্যান কুলদ্বীপ যাদব ভারতের বোলিং আক্রমণে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। তাছাড়া শ্রেয়াস আইয়ার এবং সাঞ্জু স্যামসনদের মতো ব্যাটাররা নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করবার সংগ্রাম চালাচ্ছেন। ২০১৪ যুব বিশ্বকাপ খেলা এই তরুণ ক্রিকেটাররা হয়ত অচিরেই জাতীয় দলের দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে।
- ঋষাভ পান্ত, ঈশান কিষাণ, ওয়াশিংটন সুন্দর (২০১৬)
ঋষাভ পান্ত ও ঈশান কিষাণ দুইজনই ছিলেন ২০১৬ সালে খেলা যুব বিশ্বকাপে ভারত দলের অন্যতম সদস্য। ঋষাভ পান্ত নিজেকে ইতোমধ্যেই ভারত জাতীয় দলের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করে ফেলেছেন অন্যদিকে, ঈশান কিষাণ নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ২০১৬ সালের সেই দলে থাকা আরেক তরুণ ওয়াশিনটন সুন্দরও খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে।