দ্য মাস্টারশেফ!

সাল ১৯৮৪, ২৫ ডিসেম্বর। গ্লস্টারশায়ার শহর সেজেছে বড়দিনের সাজে। কুক পরিবারে উৎসব তখন বড়দিনকেও ছাপিয়ে গেছে। স্টেফানি কুক ও গ্রাহাম কুক তখন স্বর্গীয় এক অনুভূতিতে ভাসছেন। কারণ সেদিন তাদের ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে একটি ছেলে। মা স্টেফানি আদর করে নাম দিলেন অ্যালিস্টেয়ার। অর্থাৎ দৈব উপহার। স্বয়ং খ্রিষ্ট’র জন্মদিনেই জন্ম নেয়ায় দেয়া হয়েছিল এমন নাম। পুরো নাম অ্যালিস্টেয়ার নাথান কুক।

সাল ১৯৮৪, ২৫ ডিসেম্বর। গ্লস্টারশায়ার শহর সেজেছে বড়দিনের সাজে। কুক পরিবারে উৎসব তখন বড়দিনকেও ছাপিয়ে গেছে। স্টেফানি কুক ও গ্রাহাম কুক তখন স্বর্গীয় এক অনুভূতিতে ভাসছেন। কারণ, সেদিন তাদের ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে একটি ছেলে।

মা স্টেফানি আদর করে নাম দিলেন অ্যালিস্টেয়ার। অর্থাৎ দৈব উপহার। স্বয়ং খ্রিষ্ট’র জন্মদিনেই জন্ম নেয়ায় দেয়া হয়েছিল এমন নাম। পুরো নাম অ্যালিস্টেয়ার নাথান কুক।

ইঞ্জিনিয়ার বাবা ও শিক্ষিকা মায়ের বড় ছেলে অ্যালিস্টার কুক বেশ আনন্দেই বেড়ে উঠতে লাগলেন ভাইবোনদের সাথে। ভাই লরেন্স কুক ও বোন আদরিন কুকের সাথে থাকতো রাতদিন খুনসুটি।

দুরন্ত কুক ৭ বছর বয়সে পড়লেন গানের নেশায়। গানের সিডি সংগ্রহে তিনি কোথা থেকে কোথায় চলে যেতেন তাঁর বেশ কিছুক্ষণ হদিশ থাকতো না পরিবারের কাছেও। মায়ের কাছে কম বকুনি খাননি সেজন্য।

শেষে দুরন্ত কুককে সামলাতে না পেরে আট বছর বয়সে গ্রাম্য পাঠশালা থেকে ছাড়িয়ে লন্ডনের অন্যতম কড়া স্কুল সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হল। পরিবার চলে এল এসেক্সে।

গান-বাজনার সুযোগ সেখানে খুব কম। পড়ালেখার চাপে হাঁপিয়ে ওঠা কুক খুঁজতে লাগলেন কীভাবে নিজেকে একটু বিনোদন দেয়া যায়। বাবা বেশ ভাল ক্রিকেট খেলতেন। নিজের গ্রামের দলে নিয়মিত এই খেলোয়াড়ের আফসোস ছিল কেন তিনি জাতীয় দলে খেলতে পারলেন না।

তাঁর এই আফসোসকেই যে শক্তিতে রূপান্তর করে তাঁরই সন্তান ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসেই নিজের নাম লিখে ফেলবেন – তা কেইবা জানতো! ছোট্ট কুক বাবাকে দেখেই পড়েন ক্রিকেটের নেশায়। তাঁর নতুন খেলা হল, নিত্য নতুন ব্যাটিং ট্রিক্স দেখিয়ে স্কুলের বন্ধুদের চমকে দেয়া। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে হাজির হলেন প্র্যাকটিস এর জন্য আলাদা জায়গা করে দিতে হবে, যা তখন ছিল না।

নজরে পড়ে গেলেন সবার। স্কুল ক্রিকেট দলে সুযোগ হল অচিরেই। শুরুতে ছিল মিনি অলরাউন্ডার। ছিলেন মিডিয়াম পেস বোলার, ছিলেন পার্টটাইম অফ স্পিনার, ছিলেন পার্টটাইম লেগ স্পিনার। তবে মূলত ছিলেন বোলারদের ত্রাশ একজন ব্যাটসম্যান। ওপেনিং, টপ অর্ডার, মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছেন স্কুল ক্রিকেটে।

রানের বন্যা ছোটাতে লাগলেন স্কুল ক্রিকেটে। মাত্র ১১বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী ম্যালডন ক্রিকেট ক্লাব তাঁকে নিয়ে যায়, এবং মূল দলে খেলায়! প্রায় সাত বছর তাঁদের হয়ে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি সেখানে একজন সম্মানিত সদস্য। নীতিনির্ধারণী যেকোন মিটিংয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

১৩ বছর বয়সে কুকের সংগীতের মেধা তাঁকে বেডফোর্ড স্কুলে স্কলারশিপ এনে দেয়। তিনি সেখানে ভর্তি হন। তাঁর অভিনয় গুণও ছিল। তাঁর অভিনয় প্রতি বছর স্কুল-নাটকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেত। বেডফোর্ড স্কুলে তিনি স্যাক্সোন ও পিয়ানো বাজানোতে বেশ হাত পাকিয়েছিলেন।

এরই মধ্যে এমসিসি একাদশ একবার বেডফোর্ড একাদশের বিপক্ষে খেলতে এলো। সবাইকে চমকে দিয়ে ১৪বছরের পুঁচকে কুক সেই প্রায় কিংবদন্তী ক্লাবের বিপক্ষে শতক হাঁকান। এমসিসির প্রত্যেকটি সদস্য স্কুলের কোচ ও ম্যানেজমেন্টকে বলে যান, ‘এ ছেলেটি একটি রত্ন, একে যত্ন নাও, নষ্ট করো না। সে তোমার দেশের খুব দামী সম্পদ হবে!’

আজ আমরা জানি তাদের কথা কতটুকু সত্য ছিল! পরের চার বছরে তিনি ১৭টি সেঞ্চুরি এবং দুই ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে ৮৭.৯০ গড়ে ৪৩৯৬ রান করেন। কোচ জেমি মরিসের তাই কুককে অধিনায়ক করে দিতে খুব বেশি ভাবতে হয়নি।

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা টেস্ট অধিনায়কের সেটাই প্রথম অধিনায়কত্ব প্রাপ্তি। অধিনায়কত্ব পাবার পর তিনি একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান, ২০০৩ সালে যখন বেডফোর্ড স্কুল থেকে যান, তাঁর গড় ১০০+! ২০০৩ সালটিতে তাঁর গড় ছিল ১৬০.৮৭!

স্কুল পাশ করেই কুক একটি ব্যান্ড দল গড়েন। তবে মূল ফোকাস করে রাখেন ক্রিকেটে। ১৭ বছর বয়সে কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স তাঁকে কিনে নেয়। তাঁর ট্যালেন্টেড ব্যাটিংয়ে তৎকালীন বেশ কিছু খেলোয়াড় বোর্ডকে অনুরোধ করতে থাকেন হাইপারফরম্যান্স টিমে কুককে নিয়ে নিতে। তাঁর প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে।

ফলে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে দ্রুতই সুযোগ মেলে, নিজেকে প্রমাণ করতে থাকেন কুক। কাউন্টি ও বয়সভিত্তিকে রানের বন্যা ছুটিয়ে নিজেকে যথেষ্ট প্রমাণ করেন তিনি। ২০০৬ সালে ১ মার্চ ভারতের বিপক্ষে অপেক্ষার প্রহর ফুরোয় তাঁর, টেস্ট ক্যাপ পান অ্যালিস্টার কুক। মূলত ট্রেসকোথিকের ইনজুরিতে তড়িঘড়ি করে উড়িয়ে আনা হয় কুককে।

এমনিতেই ভ্রমণক্লান্তি তার উপর ইংলিশদের চিরভয়ের বস্তু ভারতের স্পিন নির্ভর উইকেট! এসব প্রতিকূলতা পাশ কাটিয়ে অভিষেক ইনিংসেই ক্লাসিকাল ৬০ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১০৪* রান। হরভজনদের অসাধারণভাবে সামলে তাঁর এই সেঞ্চুরি ও তাঁর স্পিন খেলার ধরণ সবাইকে জানান দেয় তিনি পরবর্তী ইংলিশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটিং ভরসা হতে যাচ্ছেন।

সেই শুরু। ইংল্যান্ড এর অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছেন ক্রমে ক্রমে। শুরুতে ট্রেসকোথিকের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি, ট্রেসকোথিক দলে থাকলে খেলেছেন ৩নাম্বারে। টিম কম্বিনেশন এর জেরে ফর্মে থাকলেও দ্বাদশ ব্যক্তি হয়ে থাকতে হয়েছে।

তবে যখনই যেখানে খেলেছেন আলো ছড়াচ্ছিলেন। তবে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাশেজ সেঞ্চুরির পর। ২০০৬-০৭অ্যাশেজে বেশ বৈরী অবস্থায়ই পড়েছিল ইংল্যান্ড। কুকের অবস্থাতো আরো সঙিন।

গ্ল্যান ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, স্টুয়ার্ট ক্লার্করা শর্ট বলে আর অফ স্ট্যাম্প এর বাইরে বল দিয়ে দিয়ে তাঁকে পাগল করে দিচ্ছিল। পুরো সিরিজে তাঁকে ভোগাচ্ছিল সেই পেস এটাক। সেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৫৫৭ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড এর মান বাঁচাতে কুক খেললেন কুল হেডেড ইনিংস। ২২ তম জন্মদিনে ২২৯ বলে ১১৬ রান করেন তিনি। টেস্ট হয়তো বাঁচাতে পারেননি কিন্তু দেখিয়েছিলেন তাঁর সাহস।

২০০৮সালের দিকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় তিনি টিকে থাকতেই এসেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রায় সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ফেলেন ২৬ বছর বয়সের আগেই।

শচীন টেন্ডুলকারের পর তিনি দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম ব্যাটসম্যান যিনি ৫০০০ রান করেছেন (২৬বছর বয়সে)। এ রেকর্ডটা তিনি করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১০ সালে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ছুটি নিলে কুককে অধিনায়ক করে পাঠানো হয় বাংলাদেশে।

১৭৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব প্রাপ্তির উদযাপনটা ভালই করেন কুক। সেই বছরই পাকিস্তান ‘বিখ্যাত’ ইংল্যান্ড সফর করে। সেই সফরে স্পট ফিক্সিংয়ের কুকীর্তি করা আমিরের সুইংয়ে খুব ভুগছিলেন কুক। তবে ওভাল টেস্টের সেঞ্চুরি তাঁর ক্যারিয়ারই বাঁচায় বলা যায়।

তবে অ্যালিস্টার কুককে মূলত বিশ্ব চিনে ফেলে ২০১১ সালের অ্যাশেজে। সেবার কেভিন পিটারসেন রানের ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলেন কিন্তু কুকও কম ছিলেন না। ৭৬৬ রান করেছিলেন পাঁচ টেস্টে।

ভারতের বিপক্ষে গুচের পর দ্বিতীয় ইংলিশ হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। ২৯৪ রানে আউট হওয়ার আগে ব্যাট করেছেন ১২ ঘন্টা!

পূর্ণকালীন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান ২০১৩ সালে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ভারত সফর। সিরিজটি অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের অবসর, মুম্বাই হামলা, পিটারসেন এর টেক্সট গেট কেলেঙ্কারিতে আলোচিত হতে থাকে।

কিন্তু, নিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ২৮ বছর পর ইংল্যান্ডকে ভারতের মাটিতে সিরিজ জিতিয়ে নিজের দিকে সব আলো নিয়ে নেন কুক। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে অ্যাশেজ কেড়ে নিয়ে হয়ে ওঠেন জাতীয় হিরো। কুক যেন জীবনের সেরা সময়ই কাটাচ্ছিলেন।

তবে সবার জীবনেই আসে দুঃসময়। ২০১৩ সালেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়ে অ্যাশেজ খুইয়ে আসেন। কেভিন পিটারসেনের অফফর্ম, কুকের নিষ্প্রভতা, অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের আগুনঝরা বোলিং ছিল তাঁর কারণ। তাঁর অধিনায়কত্ব কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

ব্যাট হাতে কাটাচ্ছিলেন বাজে সময়। তাই সব জবাব দিতে বেছে নিলেন পাকিস্তানকে! সেই সিরিজে ইংল্যান্ড ডমিনেট করে কুকের ব্যাটে ভর করে। ২৬৩ রানের ইনিংসটি সবাইকে মুগ্ধ করে।

২০১৬ সালে যখন ৫৯ টেস্টে নেতৃত্ব দেবার পর ৪-০ ব্যবধানে ভারতের কাছে হেরে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন অ্যালিস্টার কুক, বেশ শক পেয়েছিল ইংলিশ ক্রিকেট ফ্যানরা। ইংলিশ ক্রিকেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস শুধু বলেছিলেন, ‘যাই হোক না কেন, ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের সম্মানটা ওরই প্রাপ্য।’

মানুষের কাছে এ ভালবাসা হঠাৎ একদিনে পাননি কুক, ৬ ফুট ২ ইঞ্চি দীর্ঘকায় মানুষটি নিজেই অর্জন করেছেন ধীরে ধীরে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাদ পড়া নিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বিতর্কে পড়েছিল। কুকের তখনকার বক্তব্যে বোঝা গিয়েছিল, কুকও কিছুটা কষ্টই পেয়েছিলেন।

১০ হাজারি ক্লাবে শচীনের পর তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান। কিংবদন্তি অনেকেই হন, কিন্তু কুক একজন ন্যায়বান, ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সফরে তামিমকে অনেক টিপস দিয়েছিলেন লং টাইম ক্রিজে থাকার উপায় সম্পর্কে। তরুণদের নিয়ে সময় পেলেই কথা বলেন।

অনেকেরই আদর্শ হয়ে উঠেছেন তিনি। বছরটা মোটেও ভাল যাচ্ছিল না তার, ১৪ ম্যাচে ২৫ ইনিংসে ৬৫২ রান , অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪৪* রানের ইনিংসটা বাদ দিলে বাকিটুকু মোটেও কুকসুলভ বলা চলে না। ১২ বছরের অসাধারণ ক্যারিয়ারের যবনিকা পতন যে খুব দ্রুতই আসবে তা বোঝা যাচ্ছিল।

১৬০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২৮৯ ইনিংসে ৪৪.৮৯ গড়ে ১২২৫৪ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ৩২, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬, ডাবল সেঞ্চুরি পাঁচটি। টেস্ট ক্রিকেটে একটি উইকেটও আছে তার। শেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৪ সালে। ৯২ম্যাচে ৩৬.৪০ গড়ে ৩২০৪ রান করেছেন। পাঁচটি সেঞ্চুরি আছে তাঁর ওয়ানডেতে।

পরিসংখ্যানও যেন ব্যর্থ হচ্ছে তার ক্লাসিক ক্যারিয়ারটাকে পুরোপুরি ধারণ করতে! হয়তো অনেকেই রানের দিকে তাকে ছাড়াবে কিন্তু তার ব্যাটিং যারা দেখেছে, তারা তাকে চিরজীবন মনে রাখবে। স্লিপে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত, ইংল্যান্ডকে প্রথম স্লিপে এমন কাউকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে, হবে। বেগ পেতে ‘হচ্ছে, হবে’ এমন এক নির্ভরযোগ্য ওপেনার খুঁজে বের করতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...