বিরাট-সৌরভ ও বিসিসিআইয়ের ভিতর-বাহির

ভারতীয় ক্রিকেট যেন আজ দ্বিধাবিভক্ত। কেউ সৌরভপ্রেমী তো কেউ বিরাটপাগল। আর যারা আদ্যোপান্ত ক্রিকেটপাগল কষ্টটা তাদেরই সবচেয়ে বেশি। একটু পিছিয়ে থেকে শুরু করা যাক। ২০০৩ বিশ্বকাপের সময় যখন সৌরভের ভারত রানার্স হয়ে ফিরছে তখন বছর পাঁচেকের আমার তেমন ক্রিকেট বোঝার ক্ষমতা ছিল না।

২০০৫-০৬ থেকে অল্প অল্প করে ক্রিকেটকে জানা, ভালোবেসে ফেলা। ভারতীয় ক্রিকেটে তখন সচিন-রাজ চলছে আর ঠিক সেই সময়ে দাদার কামব্যাক। এর আগে পর্যন্ত প্রচুর কিছু শুনেছি সৌরভের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে, কিভাবে মানুষটা দুর্নীতি থেকে বের করে এনে কতকগুলো নতুন আনকোড়া খেলোয়াড়কে সুযোগ দিয়ে দলকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছিল।

কোনো সন্দেহ নেই ক্যাপ্টেন্সিতে অন্যতম সেরা, অভূতপূর্ব লেফট হ্যান্ড-আই কোর্ডিনেশন। ২০০৬ তে সেই সৌরভ যখন সাউথ আফ্রিকা সিরিজে কামব্যাক করলো, পাশে বসে বাবা খেলা দেখতে দেখতে বলেছিল এই না হলে ‘বাঘের বাচ্চা’।

সত্যিই তাই, নিজে বাঁহাতি বলে কিনা জানি না, সৌরভের ব্যাট থেকে বেরিয়ে কভার আর এক্সট্রা কভার দিয়ে বলটা ছুটে চলে যেত অমন কভার ড্রাইভ তারপরে সাঙ্গাকারা ছাড়া আর কাউকে মারতে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না (বাঁ-হাতি)। পরে আইপিএলে কেকেআরের খেলা দেখতে গিয়ে গোটাকতক বাপি বাড়ি যার পরে সৌরভ যখন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে, গোটা ইডেন গার্ডেন্স চিৎকার করেছিল সেই ‘বাঘের বাচ্চা’। আদতেই তাই, বাঘের বাচ্চা না হলে বাংলা থেকে এসে ভারতীয় ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন হয়ে এখন বিসিসিআই সভাপতি হওয়া যায় না।

এবার একটু আজকের সময়ে ফিরি। বিরাট, এই মুহূর্তে বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ক্যাপ্টেন্সির রেকর্ড বলছে একমাত্র ক্যাপ্টেন যে তিনটে ফরম্যাটেই ৫০-র বেশি ম্যাচ জিতেছে। তবে হ্যাঁ, কোনো আইসিসি ট্রফি নেই ওর ঝুলিতে। সেদিক দিয়ে দেখলে আমি একজন বিরাটভক্ত হয়েও বলছি ওর টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি অনেক বেশি কার্যকরী যা সাদা বলে নয়। রোহিতকে সাদা বলে ক্যাপ্টেন করা নিয়েও আমি সহমত।

সৌরভ নিজে ভীষণ অ্যাগ্রেসিভ ক্যাপ্টেন ছিল আর বিরাটের কথাতেও উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ বারবার। সেই সৌরভ-বিরাট দ্বন্দ্বই আজ খবরের শিরোনামে, টুইটার ট্রেন্ডে। এক একদিন একজনের বক্তব্য উঠে আসছে আর বিতর্ক বেড়েই চলেছে। বিশ্বাস করি সৌরভ যে মানের প্লেয়ার ও ক্যাপ্টেন ছিলেন সেই উচ্চতায় প্রশাসনিকভাবে কোনোদিনই পৌঁছতে পারেননি।

আর রাজনৈতিক দল যখন সেখানে অঙ্গুলিহেলন করে তখন স্বচ্ছতার বালাই থাকে না। বিরাট যে মাপের প্লেয়ার স্বভাববশতই তিনি এক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক হবেন। বোর্ডের উচিৎ ছিল না কি একটু সম্মানের সাথে তাকে জানানো তার চ্যাম্পিয়নসুলভ মানসিকতা এটুকু দাবি করতেই পারে।

সে যতই সৌরভভক্তরা দাদার দাদাগিরি বলে ঢেরা পেটাক কিংবা বিরাটপ্রেমীরা কিং কোহলি বলে গর্জে উঠুক দিনের শেষে তো দুজনেই ভারতীয় ক্রিকেটের সেবক। একজন মাঠে আর একজন মাঠের বাইরে, প্রশাসনিকভাবে। তো তাদের কি উচিৎ ছিল না এই বিতর্কটাকেও অভ্যন্তরীণভাবে মিটিয়ে নেওয়া।

সমস্যা তো হতেই পারে, মতের অমিলও হতে পারে তবে তাই বলে সেই সমস্যাকে এভাবে ভারতের মতো দেশের সমর্থকদের সামনে নিয়ে আসা যেখানে ক্রিকেটকে ধর্ম বলে ভাবা হয়। বিরাটের ব্যাটেও বহুদিন বড়ো রান নেই, তারও উচিৎ এই সময়ে এসব প্রত্যুত্তরে না মেতে খেলাতে ফোকাস করা। চলুক না দাদাগিরি মাঠের বাইরে বিশ্বক্রিকেটে সেরা হয়ে উঠুক ভারতীয় ক্রিকেট সাথে পাশাপাশি চলতে থাকুক বিরাট রাজার ব্যাটে রানের ফুলঝুড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link