নিকোলাস পুরান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেন। কিন্তু গল্পটা পুরানকে নিয়ে নয়। গল্পটা সেই ছায়া নিয়ে, যা বহুদিন ধরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের গায়ে লেপ্টে আছে—‘ভাড়াটে’ তকমা।
আসলে, ভুল রোগের ভুল চিকিৎসা করা হচ্ছে। আসল সমস্যা দেখেও সবাই না দেখার ভান করছে। আরেকটা গল্প বলা যাক, দক্ষিণ আফ্রিকার।
হেনরিখ ক্লাসেনকে রব ওয়াল্টার কথা দিয়েছিলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলার ছাড় দেওয়া হবে। ওয়াল্টার চলে গেলেন। এলেন শুকরি কনরাড। বললেন, জাতীয় দল আগে। ক্লাসেন চুপচাপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন। নি:শব্দে বলে গেলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হাতছানি তিনি এড়াতে পারবেন না।
ক্লাসেন-পুরানরা পেশাদার। তাঁদের জন্য দেশের হয়ে খেলাটাই সব কিছু নয়। এগুলা নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যারা বোঝেন, তারা জানেন — একজন ক্লাসেন বা পুরানের বিদায় মানে শুধু একজন তারকার না-ফেরা নয়, মানে বোর্ডের ক্ষতি, স্পন্সর হারানো, দর্শক হারানো, এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমাহীন ক্ষতি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন এমন এক বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে তার নিজের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে। এই সময়ে যদি কেউ আশির দশকের ক্রিকেট ভাবনায় আটকে থাকেন—তাহলে, জেনারেশন জেডের ভিড়ে তার জায়গা নেই। ক্রিকেট এখন ফ্রি মার্কেট ইকোনমির যুগে বন্দী।
প্রতিটা দেশ নিজের লিগ চালু করছে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা—সব বিক্রি করে দিয়েছে ভারতীয় টাকায়। নিউজিল্যান্ড খেলছে আমেরিকান মেজর লিগে। সৌদি আরব ঢুকছে টাকার পাহাড় নিয়ে। যদিও, এর মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটের নামে স্মৃতিচারণায় ব্যস্ত।
শুধু জুন-জুলাইতেই ভারতে ২১ টা রাজ্য ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ হচ্ছে। সবগুলোতেই সম্প্রচার, স্পন্সর, ক্যামেরা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কারও আগ্রহ নেই। কেউ দেখছে না, কেউ দেখাচ্ছেও না।
টেস্ট ক্রিকেট এখন অভিজাতদের খেলায় পরিণত — বিলিয়ন ডলারের ঘড়ি হাতে রাজাদের গলফ খেলার মতো। ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলছে। বাকি দেশগুলো কাটছাঁট তালিকায় — আগে যেখানে ১৯টা টেস্ট ছিল, এখন ১৪টা। জিম্বাবুয়ের টেস্ট বেড়েছে আসলে বাকিদেরটা কমাতে গিয়েই।
এটাই এখন বাস্তবতা। ওয়ানডে অনেক আগে থেকেই বিদায়ের পথে। আসলে, ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই। বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। ২০২৮ সালে আইপিএল হবে ৯৮ ম্যাচের। ইসিবি ফের আনছে টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নস লিগ। সাদা পোশাকের ফাঁক গলে রঙিন জার্সির ঢেউ আসছে।
ইউরো টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়েও আগ্রহ আছে। বহু ছোট দেশের একমাত্র আশা ওখানেই। হ্যাঁ, ব্যবসা আছে। হ্যাঁ, জুয়া কোম্পানি, মাদকের ব্র্যান্ড—সবাই আছে স্পন্সর হিসেবে। চাইলেও আটকানো যাবে না। সুনামির স্রোতের মত বয়ে আসবে। ক্রিকেট নামক শহরটা আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে বানিজ্যের আবরণ।
এখন প্রশ্ন একটাই — আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কি হারিয়ে যাবে আটলান্টিসের মতো? নাকি খুঁজে নেবে কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ?