দ্য নেক্সট জেনারেশন ক্যাপ্টেন

নবাগত দল, নতুন অধিনায়ক। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের শুরু থেকেই গুজরাট টাইটান্সের উপর সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদটা খুব বেশি উপরে ছিল না। প্রথমবারের মত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। কোচ হিসেবে আশিষ নেহেরে – যিনি কোচিং প্যানেলে এখনও সফলতার দেখা পাননি। আনকোরা অধিনায়ক থাকায় টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই যেন সমর্থকদের একাংশ গুজরাটকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন।

তবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে সবার আগে প্লে অফ নিশ্চিত করেছে হার্দিকের গুজরাট টাইটান্স। প্রথম নয় ম্যাচে মাত্র এক হার! আসরের শুরু থেকেই গুজরাট একপ্রকার অপ্রতিরোধ্যই ছিল। পারফরম্যান্স দিয়েই সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দেন হার্দিক।

ইনজুরি, অফ ফর্ম – সব মিলিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটেই ছিলেন হার্দিক। প্রথমবার অধিনায়কত্ব করাটা হার্দিকের জন্য অতিরিক্ত চাপের হতে পারে, দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে – এমন নানান সমালোচনা ছিল আসর শুরুর আগে। তবে ব্যক্তিগত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর বিচক্ষণ নেতৃত্ব দিয়ে এবার বিশেষ নজর কেড়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

দল হিসেবে গুজরাট কাগজে কলমে বেশ ভালই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ড্রাফট থেকে হার্দিক, রশিদ খান ও শুভমান গিলকে দলে ভেড়ায় গুজরাট। এরপর নিলাম থেকে লকি ফার্গুসন, আলজারি জোসেফ, ডেভিড মিলার, মোহাম্মদ শামি, ঋদ্ধিমান সাহা, রাহুল তেওয়াতিয়া, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ম্যাথু ওয়েডদের দলে ভেড়ায় এই নবাগত দলটি। তবে দেশি ক্রিকেটারদের দিক থেকে গুজরাট খানিকটা পিছিয়ে এমনটাই ছিল সবার ধারণা। শুভমানের স্লো ব্যাটিং, হার্দিকের অফ ফর্ম – সব মিলিয়ে ব্যাটিং বিভাগে ভারতীয়দের পারফরম্যান্স নিয়ে খানিকটা সংশয় তো ছিলই।

তবে সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে দুর্দান্ত পারফরম করেছেন গিল-পান্ডিয়ারা। সেই সাথে তরুণ অভিনব মনোহর, সাই সুদর্শনরাও দলের প্রয়োজনে দিয়েছেন নিজেদের সেরাটা। বোলিং বিভাগে ফার্গুসন-শামি জুটিতে প্রতিপক্ষ মুখ থুবড়ে পড়ে। ডেভিড মিলার, রাহুল তেওয়াতিয়ারাও দেখিয়েছেন অনবদ্য পারফরম্যান্স। আর রশিদ খান তো বরাবরের মতই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ম্যাথু ওয়েড চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও সেই জায়গায় সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেছেন ঋদ্ধিমান সাহা।

সব মিলিয়ে দলীয় পারফরম্যান্সের জেরে এবার অপ্রতিরোধ্য দল হিসেবে দাঁড়িয়েছে গুজরাট। অধিনায়ক হিসেবে হার্দিকের ভূমিকাও নজরকাড়া। বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছেন এই অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলেও অসাধারণ পারফরম করেন। প্রায় ৪২ গড়ে ৩৩৩ রান আর বল হাতে শিকার করেছেন চার উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন তিন ফিফটি। বল হাতে উইকেট কম পেলেও দারুণ ইকনমিতে (৭.৫৭) বল করেন গুজরাটের এই অধিনায়ক।

ব্যাটে-বলে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। ১২ ম্যাচে ৯ জয় নিয়ে শীর্ষে আছে তাঁর দল গুজরাট। সমালোচনা সব রূপ নিয়েছে প্রশংসায়। কাগজে কলমে অনেক শক্তিশালী দলকে মাত দিয়েছেন সহজেই।

অধিনায়ক হিসেবে হার্দিকের জন্য চ্যালেঞ্জটা অনেক কঠিনই ছিল। ব্যর্থ হলে সমালোচনার পাহাড় তার মাথায় ভেঙে পড়বে সেটাও জানতেন। তবে সব সংশয় আর সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন শীর্ষে। কঠিন চ্যালেঞ্জটা সহজেই যেন উতরে গেছেন তিনি। সেই সাথে ব্যাটে-বলে হার্দিকের ফর্মে ফেরাও ভারতের জন্য স্বস্তি।

নতুন দল, নতুন আসর – নতুন ভূমিকায় বদলে গেলেন হার্দিকও। হতাশা কাটিয়ে হার্দিকের মুখে দেখা মিলল সাফল্যের হাসি। দল যে তাঁর উপর আস্থা রেখেছিল – সেই আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন বেশ ভালভাবেই। অলরাউন্ডার পান্ডিয়ার সাথে এবারের আসরে দেখা মিলল অধিনায়ক পান্ডিয়ারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link