লেগ স্টাম্পের উপর করা বলটাকে ডিপ মিড উইকেটের উপর সজোরে মেরে রশিদ খানকে ছক্কা হাঁকালেন – দুর্দান্ত এক শটে দেখা পেলেন ফিফটির। রশিদ খানের বিপক্ষে এটিই ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম ছক্কা। পঞ্চাশ ছুঁতেই আকাশ পানে তাকিয়ে ইশারা করলেন। ঈশ্বরকে হয়ত ধন্যবাদ জানালেন, হয়ত বাবাকে নিজের ফর্মে ফেরার আভাসটা দিলেন। ৫৪ বলে ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস শেষে যখন ফিরছিলেন – ডাগ আউটে সতীর্থরা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন।
৫৪ বলে ৭৩ রান – একজন তারকা ক্রিকেটারের জন্য খুব বড় কিছু নয়; একটা ভাল ইনিংস এইতো? কিন্তু বিরাট কোহলির জন্য এই ইনিংসটা যেন দীর্ঘ ব্যর্থতা আর আক্ষেপের অবসান। একের পর এক ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে চাপিয়ে তিনি ছুঁটছিলেন সফলতার আলোর দিশা পেতে। কিছুতেই ব্যর্থতার আঁধার পাশ কাটিয়ে মিলছিল না সেই আলোর দেখা। কিন্তু ব্যর্থতার বেড়জাল থেকে তিনি ঠিক বেড়িয়ে এলেন। দলের প্রয়োজনে আবার হাসলো বিরাটের ব্যাট।
ম্যাচের আগে ঘন্টা দেড়েকের মত নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করলেন। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ। প্লে অফের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। সেই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ব্যাট হাতে দাপুটে প্রত্যাবর্তন করলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ওপেনার বিরাট কোহলি।
পুরো মৌসুম জুড়ে ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে। এক একটি ম্যাচ যেন এক একটি ব্যর্থতা ছিল ব্যাঙ্গালুরুর সাবেক এই অধিনায়কের জন্য। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করতে পারছিলেন না, সাদামাটা মানের বোলারের সামনেও ছিলেন অসহায়। এক অচেনা বিরাটকে দেখছিল সমর্থকরা। তবে সব ব্যর্থতা ছাপিয়ে রান খরা কাটিয়ে আবার তিনি ফিরেছেন স্বরূপে।
এইতো কয়েক ম্যাচ আগে পর পর দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে ফিরেছিলেন সোনালি হাঁসের লজ্জায়। তাও আবার ক্যারিয়ারে প্রথমবার এমন লজ্জার মুখে পড়েছেন এই তারকা ক্রিকেটার। ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে মাথা নুইয়ে গুটি গুটি পায়ে বিরাট হেঁটে চলছিলেন ডাগ আউটের দিকে।
বিরাটের অংকটা ভুল হচ্ছিলো বার বারই। কিন্তু এর সমাধানও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। ধৈর্য্য ধরেছিলেন, পরিশ্রম করছিলেন; গুনছিলেন অপেক্ষার প্রহর। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই প্রহরের দেখা মিলেছে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে। পেয়েছেন ব্যর্থতার অংকের সমাধানও।
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে বিরাটের ৭৩ রানের দাপুটে ইনিংসে দুর্দান্ত এক জয়ে প্লে অফের আশা টিকিয়ে রেখেছে ব্যাঙ্গালুরু। ৫৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৮ চার ও ২ ছক্কা; টি-টোয়েন্টির অন্যতম সেরা বোলার রশিদ খানকেই হাঁকিয়েছেন দুই ছক্কা। ছিল না ভয়ডর, চোখে-মুখে ছিল না ক্লান্তির কোনো ছাপ। গুজরাটের বিপক্ষে যেন দেখা গেল পুরনো বিরাটকেই। আত্মবিশ্বাস, নিখুঁত শট – সব যেন স্পষ্ট বিরাটের এই ইনিংসে।
ব্যর্থতার স্রোতে ভাসছিলেন বিরাট। এই ব্যর্থতার স্রোতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ার গ্রাফটাও ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। একটা ভাল ইনিংস বিরাটকে আবার ফেরাতে পারে স্বরূপে – সমর্থকদের প্রত্যাশাও ছিল এমন। নিজেদের শেষ ম্যাচে সেই ইনিংসের দেখা যেন পেলেন এই ভারতীয় তারকা।
বিরাট ফুরিয়ে গেছেন – এমনটাই বলছিলেন অনেকে। এখান থেকে বিরাট হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল, সমালোচনা কি-না হয়েছে বিরাটকে নিয়ে। ফর্ম ক্ষণস্থায়ী, ক্লাস চিরস্থায়ী – বিরাটের ব্যাটে প্রমাণ হল আরও একবার। ঘুরে দাঁড়ালেন ঠিকই। প্লে অফে যেতে পারবেন নাকি সেটা এখনও নিশ্চিত না। তবে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বিরাটের এই ইনিংস সমর্থক সহ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য স্বস্তির নি:শ্বাস।