ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ২০২৫ মৌসুমটা কলকাতা নাইট রাইডার্স নিশ্চয় ভুলে যেতে চাইবে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি এবার প্লে-অফের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। তবে চ্যাম্পিয়ন দলের এমন ব্যর্থতার পেছনের কারণ কী?
নতুন অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে নেতৃত্বের ভার পেলেও তাকে ঘিরে থাকা স্কোয়াড ছিল স্পষ্টতই দুর্বল। নিলামের পরই বোঝা গিয়েছিল, কেকেআর এবারের মৌসুমে চাপে থাকবে। শুরুর ধাক্কাটা এসেছিল পুরনো তিন নাম—শ্রেয়াস আইয়ার, মিচেল স্টার্ক ও ফিল সল্টকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায়। অথচ, ২০২৪ সালের শিরোপা অভিযানে এই তিনজনই ছিলেন দলের মেরুদণ্ড।
রাহানে নিজে ব্যাট হাতে ভালো করেছেন, দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। কিন্তু একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অধিনায়কের কাজ কেবল ব্যাটে-বলে সীমাবদ্ধ থাকে না। স্কোয়াড ম্যানেজমেন্ট, সঠিক সময়ে সঠিক খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়াও অধিনায়কের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে রাহানের কৌশল ও টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে।
দলটিতে থাকা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ঝাড়খণ্ডের স্পিন অলরাউন্ডার অনুকূল রায় খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। সেখানে বল হাতে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন একটি উইকেট। কিন্তু ব্যাট হাতে প্রথম বলেই আউট হওয়ার পর তাকে আর দেখা যায়নি পুরো মৌসুমে। যেখানে রামানদীপ সিংয়ের মতো খেলোয়াড় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে অনুকূলকে বসিয়ে রাখাটা ছিল অদূরদর্শিতা।
একই রকম অবহেলার শিকার হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আনরিখ নরকিয়াও। দুই ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ১ উইকেট, যদিও তার ইকোনমি ছিল ১১.৮৬। তবে অভিজ্ঞতা ও আগ্রাসী বোলিংয়ে আইপিএলে নিজেকে পরিচিত করেছেন। তাকে বসিয়ে রেখে খেলানো হয় স্পেন্সার জনসনকে দিয়ে, যিনি চার ম্যাচে দেন ১১.৭৪ ইকোনমি রেটে রান এবং পান মাত্র একটি উইকেট।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোভম্যান পাওয়েলকে ঘিরে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো এই হার্ড হিটারকে রীতিমতো অবহেলা করেছে কলকাতা শিবির। তিনি খেলেছেন মাত্র দুটি ম্যাচ, ব্যাট করেছেন মাত্র একবার, বল হাতে একবারও দেখা যায়নি তাকে।
অ্যান্দ্রে রাসেল যখন ব্যাটে-বলে ছন্দে ছিলেন না, তখন তার জায়গায় পাওয়েলকে সুযোগ দিলে হয়তো ভিন্ন কিছু হতে পারত। বিশেষ করে উইকেটকিপারদের মধ্যে গুরবাজ ও ডি ককের মতো তারকারাও ছিলেন অফফর্মে, সেখানে লভনিথ সিসোদিয়াকে খেলিয়ে বিদেশি কোটায় পাওয়েলকে জায়গা দেওয়া যেত অনায়াসে।
এক মৌসুম আগেই চ্যাম্পিয়ন, এবার পয়েন্ট টেবিলের আট নম্বরে শেষ করা—এটা কেবল পারফরম্যান্সের অবনতি নয়, বরং ব্যবস্থাপনার ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি। তাই তো এমন ‘চ্যাম্পিয়ন টু চ্যাপ্টার ক্লোজ’ গল্পের সাক্ষী হলো কলকাতা নাইট রাইডার্স।