টাকার ঝনঝনানির লিগ খ্যাত আইপিএল নিলাম কিন্তু বেশ প্রতিযোগিতামূলক ও কৌশলের খাটানোর জায়গা। খেলোয়াড়ের দাম তাদের মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দলের পরিকল্পনায় তার গুরুত্ব, বানিজ্যিক চুক্তিতে তার ভূমিকা, দর্শক চাহিদার উপরেও নির্ভর করে। এবার আইপিএল নিলামে চড়া দামে বিক্রি হয়েছেন অনেক খেলোয়াড়। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় দামি খেলোয়াড়েরা তাদের দামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন না, পেয়ে যান ওভারপ্রাইজড ট্যাগও।
‘তবে জিনিস যেটা ভালো দাম তার একটু বেশিই’ – কথাটা সত্যও প্রমাণকরেন অনেকে।। তেমনই ৭ জন খেলোয়াড়কে নিয়েই খেলা ৭১-এর এবারের আয়োজন।
- ঋশভ পান্ত (ভারত)
নিলামের সব রেকর্ড দুমড়েমুচড়ে ফেলে ২৭ কোটি রুপিতে লখনৌ সুপার জায়ান্টসে যোগ দিয়েছেন ঋষাভ পান্ত। ১১১টি আইপিএল ম্যাচে ৩৫.৩১ গড় আর ১৫০ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেটে ৩২৮৪ রান। প্রতিটা সিজনেই ছিলেন ধারাবাহিক।
মারকাটারি ব্যাটিং, উইকেটকিপিং কিংবা অধিনায়কত্ব সবটাই তার নখদর্পনে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ভালো, এমনিতেও তিনি বক্স অফিস। তাকে নিয়ে নিলামঘরে কাড়াকাড়ি যে বেশি হবে এটা তো অনুমেয়ই ছিল।
- জশ হ্যাজেলউড (অস্ট্রেলিয়া)
সাড়ে ১২ কোটি রুপিতে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুরতে যোগ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা জশ হ্যাজেলউড। নির্ভুল লাইন লেন্থ আর আগুনে পেসের আরেক নাম হ্যাজেলউড। তার গতিটা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকেও বেশি। তাকে ‘সেট-আপ’ মাস্টারও বলা হয়।
যদিও আইপিএল ক্যারিয়ার তেমন উজ্জ্বল নয় তার, তবে সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজেও বল হাতে আগুন ছড়াচ্ছেন তিনি। অভিজ্ঞ পেসারের অভাবে দীর্ঘদিন ভোগা ব্যাঙ্গালুরুর ত্রাতা হতে পারেন তিনি।
- মিশেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
আরেক অজি গতিদানব মিশেল স্টার্ক ও বিক্রি হয়েছেন চড়া দামেই, ১১.৭৫ কোটি রুপি দিয়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। গত সিজনের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।
১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গতির ঝড় তোলা স্টার্কের গতিটা যদিও এখন একটু কমেছে। তবে, দ্রুত লেন্থ পরিবর্তন, গতি বদল বা ইনসুইংটা আজও ভয়ানক ধারালো। গত মৌসুমের শুরুতে অফফর্মে থাকলেও শেষের দিকে দ্যুতি ছড়িয়ে শিরোপা জিতেয়েছেন কলকাতা নাইট রাইর্ডারসকে। আইপিএলে ৫০ এর উপরে উইকেটের মালিক সেই ধরাই হয়ত ধরে রাখবেন দিল্লিতেও।
- জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার উদীয়মান তারকা মাকগার্কেও দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি। মাত্র ২২ বয়সী এই অজিকে ৯ কোটি রুপি দিয়ে কিনেছে তারা। ২০২৪ আইপিএলে ৯ ম্যাচে ৩৬.৬৭ গড়ে ৩৩০ রান।
স্ট্রাইকরেটটাও চোখ কপালে তোলার মত, ২৩৪.০৪। ক্রিজে যতক্ষন থাকেন মনে হয় তান্ডব চালাচ্ছেন ২২ গজে। আন্তজার্তিক ক্রিকেটেও আছেন দারুন ছন্দে, সুতরাং তিনিও যে দামের প্রতি সুবিচার করবেন এটাই প্রত্যাশা সকলের।
- নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বিধ্বংসী ব্যাংটিয়ের জন্য বিশ্বব্যাপি সুখ্যাতি থাকা পুরান কে ১১ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে পানজাব কিংস।
৭৬ আইপিএল ম্যাচে ১৬২.২৯ স্ট্রাইক রেট আর ৩২.১৬ গড়ে ১৭৬৯ রান। ফিফটি আছে নয়টি। বিধ্বংসী এই ক্যারিবিয়ান একাই ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়।
- স্যাম কারান (ইংল্যান্ড)
২০২৩ আইপিএলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ছিল স্যাম কারান। তবে কারানকে এবার বেশ সস্তাতেই পেয়ে গেছে চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএলে ৫৮ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৩৬.৪৮ স্ট্রাইকরেটে রানও তুলেছেন ৮৮৩। পেস বোলিং, ফিনিশিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দারুন চৌকুশ এই ২৬ বছর বয়সী ইংলিশ তারকা।
- হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড)
ব্যাট হাতে জাতীয় দল ও বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজিতে দাপট তোলা হ্যারি ব্রুক কে পেতেও বেশ মোটা অংক খরচ করতে হয়েছে রাজস্থান রয়ালসকে। পেশাদার ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা সময়টা পার করছেন তিনি। সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজ বা পাকিস্তান প্রিমিয়ার লিগ সবখানেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলছেন তিনি।
গতবার আইপিএলে তেমন ভালো করতে পারেননি তিনি। তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ৯ কোটি রুপিতে বিক্রি হওয়া ব্রুক এবার ব্যাট হাতে তান্ডব তুলবেন এমনটাই প্রত্যাশা ফ্রাঞ্চাইজিটির।