আইপিএল আইয়ারের ফেরার মঞ্চ

আইপিএলের মঞ্চে পারফর্ম করেই তাঁর উত্থান। জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও জায়গা পাকা করতে পারেননি। বছর পেরিয়ে বিশ্বকাপ কড়া নাড়তেই ফিরে আসার জন্য আইপিএলকেই বেছে নিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। 

করোনা মহামারী গোটা বিশ্বের জন্য অভিশাপ হয়েই এসেছিল। কিন্তু সেই স্থবির সময়টাই যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিল আইয়ারের জন্য। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে সেবারের আইপিএলের শুরুর ম্যাচগুলোতে সুযোগ পাননি। হয়তো পেতেন না গোটা মৌসুমেই, কিন্তু করোনার সুবাদেই আইপিএলই বন্ধ হয়ে যায় মাঝপথে। 

সেই ফাঁকা সময়েই নিজের ব্যাটিং যেন বদলে ফেলেন আইয়ার। শটের পরিধি বাড়ান, নজর কাড়েন কলকাতার কোচের। আইপিএলের আরব আমিরাত পর্বে একাদশে সুযোগ মেলে, এরপর আর ফিরে তাকানো নয়। ২০২১ আইপিএলের দ্বিতীয় ভাগ পুরোটাই আইয়ারময়। 

ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে মারকুটে ব্যাটিংয়ের প্রতিপক্ষের বোলিংয়ের উপর রীতিমতো ধবংসলীলা চালাতেন এই তারকা। তাঁর ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে। কেবলমাত্র ব্যাটিং নয়, মাঝের ওভারে তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিংও দারুণ কার্যকরী। গতি কম থাকলেও নিয়ন্ত্রিত লাইন লেন্থ ব্যাটসম্যানদের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে বারবার। 

তাঁর পারফরম্যান্সের সুবাদেই কিনা সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেবারে দুর্বল এক দল নিয়ে ফাইনালে উঠেছিল কলকাতা। যদিও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি, তবে আইয়ার চমকে দিয়েছিলেন গোটা বিশ্বকে। এরপর জাতীয় দলে জায়গা করে নিতেও সময় লাগেনি এই তরুণের। 

সবাই ভেবে নিয়েছিলেন আইয়ারের জন্য সামনের দিনগুলো কেবলই এগিয়ে যাবার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রেখেই আইয়ার বুঝতে পারেন এ মঞ্চটা বড়ই কন্টকাকীর্ণ। জাতীয় দলের তারকাবহুল টপ অর্ডারে সুযোগ মিললো না, বরং তাঁকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় বিস্তর। কখনো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, আবার কখনো ফিনিশার হিসেবে খেলানো হলো তাঁকে। ফলে ফর্ম হারিয়ে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তেও সময় লাগেনি।

২০২২ আইপিএলে রীতিমতো দুঃস্বপ্নের এক মৌসুম কাটান এই তারকা। ব্যাট হাতে মাত্র ১৬ গড়ে ১৮২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে দেখা পাননি কোনো উইকেটেরই। সবাই ভেবে নিয়েছিলেন আরো এক তরুণ প্রতিভা হয়তো হারিয়ে গেলো অকালেই। 

তবে কলকাতা নাইট রাইডার্স কখনোই আস্থা হারায়নি এই তরুণের উপর। গত মৌসুমেও নিলামের আগেই আট কোটি রুপির বিনিময়ে দলে ভেড়ায় এই অলরাউন্ডারকে। এবারের মৌসুমে তাই ছোটবেলার কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত কলকাতার কোচ নিযুক্ত হবার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি আইয়ারকে। 

পুরনো কোচের সাথে মিলে কাজ করেছেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে। অহেতুক ঝুকিপূর্ণ শট খেলার চাইতে বরং মনোযোগ দিয়েছেন ইনিংস বড় করায়। এবারের মৌসুমে তাই পরিণত এক আইয়ারকেই দেখছে গোটা বিশ্ববাসী। শুরু থেকেই ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। 

রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের ঝড়ে শুরুতেই দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরলে পাল্টা আক্রমণের শুরুটা হয় তাঁর ব্যাট থেকেই। শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক থাকলেও বাজে শট খেলেননি।

ভালো বলকে যেমন সম্মান দেখিয়েছেন, তেমনি বাজে বলকে সীমানাছাড়া করতে দুবার ভাবেননি। দুই চার এবং চার ছক্কায় সাজানো তাঁর ৪২ বলে ৫৭ রানের ইনিংসের সুবাদেই লড়াকু এক সংগ্রহ পায় কলকাতা। 

শেষ চারে পা রাখতে টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতে জয়ের বিকল্প নেই কলকাতার। আইয়ার তাই চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে দলকে আরো একবার নক আউট পর্বে নিয়ে যেতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link