আইপিএল দ্য ব্র‍্যান্ড

দেখতে দেখতে পঞ্চদশ আসরে পা রেখে ফেলেছে এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। সেই ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ২০২২ দীর্ঘ একটা সময় পার করে ফেলেছে আইপিএল। লম্বা এই সময়ে নিজেদের কে আলাদা এক ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে আইপিএল। শুধু তাই নয় তাঁদের ব্রান্ড ভ্যালু ছুঁয়েছে বিলিয়ন ডলারের ঘর।

তিল তিল করে গড়ে উঠেছে আজকের এই আইপিএল। বিশ্বের নানা প্রান্তের খেলোয়াড়দের মিলনমেলা এখন আইসিসির ক্রিকেট পঞ্জিকায় আলাদা এক জায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া ক্রীড়া টুর্নামেন্টে বিশ্বের সব নামিদামি আয়োজনের সাথে একসাথেই আজ উচ্চারিত হচ্ছে আইপিএলের নাম। সেখানটায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র্যের ন্যাশনাল ফুটবল লিগও রয়েছে।

আইপিএলের ব্রান্ড ভ্যালু বর্তমানে প্রায় ৬.৩ বিলিয়ন ডলার। যা কি না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের থেকেও বেশি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান ব্র্যান্ড ভ্যালু ৫.৩ বিলিয়ন ডলার। ভাবা যায়? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মত এক জনপ্রিয় ফুটবল টুর্নামেন্টকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে আইপিএল। শুধু যে বিশ্বের বুকে নতুন এক ব্র্যান্ড হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে আইপিএল তা নয়। ভারতের জিডিপিতেও বেশ অবদান রাখছে।

২০১৫ মৌসুমে আইপিএল ভারতের জিডিপিতে ১৫০ মিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে বলে জানিয়েছে বিসিসিআই। তবুও ভারত সরকার আইপিএলকে একটা বাণিজ্যিক ক্ষেত্র না বিবেচনা করে বিনোদন হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে। তাতে অতিরিক্ত ট্যাক্স গুণতে হচ্ছে আর ব্যবসার পরিধিও খুব বেশি বিস্তৃতি লাভ করতে পারছে না বলে মত বিসিসিআইয়ের। তবে সে যাই হোক এই যে লম্বা একটা পথ পারি দিতে গিয়ে যে একেবারে বিতর্কমুক্ত ছিল আইপিএল তাও বলার সুযোগ নেই।

এই পঞ্চদশতম আসরে আসতে আসতে সময়ে সময়ে নানান বিতর্ক ছুঁয়ে গেছে আইপিএলকে। যা কিনা আইপিএলের এই সুন্দর এক চিত্রপটে কাল রঙের দাগ ফেলে দিয়ে গেছে। এই যে যেমন ললিত মোদির কথাই ধরুণ। আইপিএলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানকে রীতিমত লজ্জার এক দায় মাথায় নিয়ে সরে যেতে হয়েছে। দুর্ণীতির দায়, সে তো এক বিশাল বড় দায়।

এরপর আবার আইপিএলের দুই দল চেন্নাই সুপার কিংস ও রাজস্থান রয়্যালসকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দুই মৌসুম। সেখানে অবশ্য দোষ ছিল দুই দলের মালিক পর্যায়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিং ও জুয়ার অভিযোগ ছিল। তবে ২০১৩ সালে কেবল শ্রীশান্ত গ্রেফতার হয়েছিলেন ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। পরবর্তীতে বিসিসিআই তাঁকে সবধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। শাস্তি এই দুই দল পায় ২০১৫ সালে গিয়ে।

আবার ২০১১ সালে দুই নতুন দল যুক্ত হয়েছিল আইপিএলে। কোচি তুসকার্স কেরালা ও পুনে ওয়ারিয়ার্স ইন্ডিয়া। বেশ বড় অংকের ফ্রাঞ্চাইজি ফি-এর বিপরীতে। তবে কেরালা ফ্রাঞ্চাইজি ফিয়ের ১০% ব্যাংক স্টেস্টমেন্ট দেখাতে ব্যর্থ হয়। মৌসুম শুরুর আগেই বিদায় ঘটে দলটির। বছর দুয়েক বাদে পুনে ওয়ারিয়র্সও হারিয়ে যায় আইপিএলের মহামঞ্চ থেকে। তবে এসব বিতর্ক বেশ শক্ত হাতেই সামলে নিয়েছিল আইপিএল গভর্নিং বডি।

তবে এসব কিছু ছাপিয়ে আইপিএল মূলত ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে এক বিশাল বড় ভূমিকা রেখে চলেছে একেবারে শুরু থেকেই। বিশ্বের সব তারকা খেলোয়াড়দেরকে আকর্ষণ করছে আইপিএল। সেই সাথে ভারত এবং অন্যসব দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রমাণের একটা মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে আইপিএল। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মানে নিজেদেরকে গড়ে তোলার সুযোগও দিচ্ছে আইপিএল। খেলোয়াড়দের সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে বলেই বাকি বোর্ডগুলো চেষ্টা করে আইপিএলের সময়ে যেন কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কারণে দোলাচলে পড়তে না হয় ক্রিকেটারদের।

মোদ্দাকথা আইপিএল এখন পুরো দুনিয়ার ক্রিড়াপ্রেমিদের মাঝে এক আলাদা আকর্ষণের সৃষ্টি করে ফেলেছে। নিজেদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটা ব্রান্ড হতে যেমন পেরেছে আইপিএল ঠিক তেমনি ক্রিকেটটা ছড়িয়ে দিতেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। সে সাথে স্বদেশের খেলোয়াড়দের উন্নয়নের এক পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link