একসময় তাঁকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখা হতো, বাঘা বাঘা বোলারদের শাসন করার খ্যাতি ছিল তাঁর; কিন্তু সেসব এখন অতীত। বাইশ গজে দাপট দেখানো তো দূরে থাকুক, ঠিকঠাক রানও করতে পারেন না তিনি। এতক্ষণে নিশ্চয় বোঝা গিয়েছে যে সৌম্য সরকারের কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আক্ষেপ ভাবা হয় যাকে।
সৌম্য সরকারের অতীতের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের ছিটেফোঁটাও এখন নেই, তাতে অবশ্য শিষ্যের প্রতি ভালবাসা কমেনি কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের। দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে ফিরতেই তাঁর মনে পড়েছে এই বামহাতির কথা। তাই তো নির্বাচকদের ভাবনায় না থেকেও ফিরে এসেছেন জাতীয় দলের আশেপাশেই; সুযোগ পেয়েছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপেও।
ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততে হেরে গিয়ে ইমার্জিং টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছিল বাংলাদেশ। হতাশা নিয়ে মিশন শেষ করলেও কয়েকজনের পারফরম্যান্সে ছিল সম্ভাবনার ছাপ। এই যেমন তানজিদ হাসান তামিম তিন ফিফটিতে করেছেন ১৭৯ রান, পেসার তানজিম হাসান সাকিব ঝুলিতে পুরেছেন নয় উইকেট। তবে এই পারফর্মারদের লিস্টেও জায়গা পাননি ৩০ বছর বয়সী সৌম্য সরকার।
এতে অবশ্য কিছু যায় আসে না; পেস বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজতে থাকা টিম ম্যানেজম্যান্টের সামনে ঘুরে ফিরে একটা নামই আসে, সেটি সৌম্য সরকার। যদিও মূল কারণ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সৌম্য-প্রীতি, এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে সাত নম্বরে খেলিয়ে ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে চান লঙ্কান হেডকোচ। একই সাথে পেসার সৌম্যকে ছয় নম্বর বোলার হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও আছে।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স না করেই সৌম্য সরকার পেয়ে গিয়েছিলেন ইমার্জিং এশিয়া কাপের টিকিট; চান্দিকা হাতুরুসিংহে তাঁকে বাজিয়ে দেখতে চাওয়ায় এমন সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ছয় নাম্বারে ব্যাটিং করে সবমিলিয়ে করেছেন ৯৫ রান; জাতীয় দলে ফেরার জন্য সেটা যে যথেষ্ট নয় তা স্পষ্ট। কিন্তু হাতুরুসিংহের ইশারাতে লাল-সবুজের জার্সিতে হয়তো দেখা যাবে সৌম্যকে।
বিশ্বকাপ দলে যদি রাখতেই হয় তাহলে আগে ফর্মে ফেরাতে সৌম্য সরকারকে। কিন্তু এশিয়া কাপ আর নিউজিল্যান্ড সিরিজ ছাড়া কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই টাইগারদের, তাই হয়তো যথেষ্ট পারফর্ম না করেও এশিয়া কাপে মাঠে নামবেন সৌম্য।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হাসেনি তাঁর ব্যাট, তবু খেলতে পেরেছেন উদীয়মানদের এশিয়া কাপে। মূল এশিয়া কাপে আরো একবার নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন সৌম্য – এমন সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
আর এশিয়া কাপে ভাল করতে পারলে তো বটেই, গড়পড়তা পারফর্ম করলেই হয়তো বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও জায়গা পাবেন এই বামহাতি। সবকিছু অবশ্য নির্ভর করছে পুরনো শিষ্যকে ফেরাতে কতটা মরিয়া হাতুরু সেটির উপরে।
এসব নিয়ে যদিও মন্তব্য করতে রাজি হননি নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলেন, ‘অনেকের পারফরম্যান্স নিয়ে যা বলার, আমি কলম্বোতেই বলে এসেছি। এখন দল নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই কাউকে নিয়েই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
নির্বাচকের এমন রহস্যময়ী উত্তর সৌম্য সরকারের ফেরার ইঙ্গিত কি না – সেটা জানতে অবশ্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।