এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ৩২ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডেও ছিলেন না এনামুল হক বিজয়। তারপরও লিটনের ইনজুরিতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে মূল স্কোয়াডে ঢুকে পড়লেন এ ওপেনার।
প্রশ্নটা বিজয়ের সংযুক্তিতে নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, প্রাথমিক স্কোয়াডের বাইরে থেকেও কিভাবে বিজয় ঢুকে পড়লেন এশিয়া কাপের মূল দলে? যেখানে লিটনের অবর্তমানে ফর্ম কিংবা প্রতিভার বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন জাকির হাসান। তারপরও কেন ব্রাত্য হয়ে রইলেন এ ব্যাটার?
দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কণ্ঠে মিলেছে এর স্বপক্ষে যুক্তি। তাঁর ভাষ্যমতে, দলে আরেকজন উইকেটরক্ষকের চাওয়াতেই মূলত বিজয়ের অন্তর্ভূক্তি। তাছাড়া, লিটন টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে, বিজয়ও টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে। আবার খেলার মধ্যে মুশফিকের যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে কনকাশন সাব হিসেবে বিজয় হতে পারেন সেই সমস্যার সমাধান।
কিন্তু এই যুক্তিতে তো সুযোগ পেতে পারতেন জাকিরও। কারণ তিনিও একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মূলকথা, বাঁ-হাতি ব্যাটার হওয়াতেই কপাল পুড়েছে জাকিরের। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছে ইনিংসের শুরুটা যেন ডান হাতি – বাঁহাতির সমন্বয়ে হয়। আর এ কারণেই জাকির রয়েছে গিয়েছেন দলের বাইরে।
তবে অধিনায়ক কিংবা নির্বাচক শত যুক্তি দাঁড় করালেও, এটা সত্য যে, সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে জাকির হাসানকে কোনো ভাবে অগ্রাহ্য করা যায় না।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলেছে লঙ্কানদের মাটিতে। সুপার ফোর নিশ্চিত হলে নিশ্চিত ৩ টি ম্যাচ খেলতে এই লঙ্কানদের দূর্গেই। আর এই কন্ডিশনেই কিছুদিন আগেই ইমার্জিং এশিয়া কাপ খেলে গিয়েছিলেন জাকির। যেখানে সেমিতে ওঠার ম্যাচে আফগানিস্তান এ দলের বিপক্ষে ৬২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
জাকির হাসান শেষ দুই বছরে ব্যাট হাতে কতটা দুর্দান্ত ছিলেন তা পরিস্কার হবে আরেকটি পরিসংখ্যানে। ২০২১-২২ মৌসুমে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রান, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) চার ম্যাচে তিন শতক— জাকির হাসান রান করে গিয়েছেন নিয়মিতই। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন, সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন। ফরম্যাটের রঙ বদলে টি-টোয়েন্টিতেও দেখিয়েছেন খ্যাপাটে ব্যাটিংয়ের পারদর্শিতা।
সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মাত্র ৫ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। জাকির হাসানের ব্যাটে তাতেও মিলেছিল ব্যাটিং আগ্রাসনের ছাপ। ১ সেঞ্চুরি আর ১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৪.৬০ গড়ে করেছিলেন ২২৩ রান।
এরপরও অবশ্য আক্ষেপই সঙ্গী হচ্ছে জাকির হাসানের। স্রেফ বাঁ-হাতি ব্যাটার হওয়ার কারণেই ব্রাত্য হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
জাকির হাসানের ভাগ্যটাই আবার এমন। ২০২১ থেকে টানা দুই বছর ধরে রানের ভেলায় ভাসলেও জাতীয় দলের স্বপ্নের দরজাটা খুলছিল না জাকিরের। এমনকি সে সময় ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সিরিজেও তিনি স্কোয়াডে ছিলেন না।
তবে,ভাগ্যটা খুলে যায় তাওহিদ হৃদয়ের চোটে। ম্যাচের ঠিক আগের দিন ডাক পড়ে জাকিরের। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেলেন এ ব্যাটার। সুযোগ পেয়েই খেলেন ম্যাচ বাঁচানো ১৭৩ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস।
ব্যাস। এরপরের লাইম লাইটে চলে আসেন জাকির। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। মজার ব্যাপার হলো, ২০২২ এর শেষ দিকে এসে টেস্ট অভিষেক হওয়া জাকিরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল তারও প্রায় ৫ বছর আগে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় জাকিরের। তবে ঐ এক ম্যাচ পরেই তিনি বাদ পড়ে যান।
জাকির হোসেনকে প্রমাণ করেই বারবার সবার নজরে আসতে হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত কোনো এক কারণে তাঁর উপর সেই নজর ঠিক দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত হয় না।
জাকির নিশ্চয় ভবিষ্যতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয়েই এগিয়ে যাবেন। কারণ জাতীয় দলের দরজার প্রবেশদ্বার উন্মোচিত হলেও, তিনি যে সেখানে এখনো স্থায়ী বসতি গড়ে তুলতে পারেননি। জাকিরের ভাবনায় নিশ্চয় সেটিও বাস করে।