৪৬ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। তাতেই ছুঁয়েছেন আইপিএল ক্যারিয়ারে ৭০০০ রানের মাইলফলক। যে দৌঁড়ে তিনিই প্রথম এবং তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র। তারপরও দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে কোহলির এমন একটা ইনিংসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই হচ্ছে। হয়তো বিজিতদের দলে ঠাঁই হয়েছে বলেই সমালোচনাটা আরো তীব্রতায় রূপ নিচ্ছে।
দলের স্কোরকার্ডে ১৮১ রান। অর্থাৎ গড়ে প্রায় ১৫০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছে ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটাররা। সেখানে দলের সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটার কিনা ব্যাটিং করলেন ১১৯.৫৭ স্ট্রাইক রেটে। এমন একটা ইনিংস নিয়ে চুলচেরা সমালোচনাপূর্ণ বিশ্লেষণ অনুমেয়ই।
কোহলির এমন মন্থরতম ইনিংসের ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর আরেল ব্যাটার মাহিপল লোমরর। সে ম্যাচে ২৯ বলে ৫৪ রান করা এ ব্যাটারের মতে, ‘মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট খুব স্লো ছিল। আর ওরকম উইকেটে রান বের করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাই কোহলি কিছুটা সময় নিচ্ছিলেন।’
কোহলি অবশ্য এমনই ব্যাটার যিনি ইনিংস বিল্ডআপ করেন। একদম মোক্ষম সময়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হন। কিন্তু দিল্লীর বিপক্ষে সেই মোক্ষম সময় আর আসেনি। অ্যাঙ্করিং রোল প্লে করা কোহলি ফিরে যান নিজের খোলস ছাড়ানোর আগেই।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের প্রাক্তন কোচ টম মুডি মনে করেন, এই সময়ে এসে এটা কোনো ভাবেই টি-টোয়েন্টি সুলভ ইনিংসের কাতারে পড়ে না। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অজি এ কোচ বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে কোহলির স্ট্রাইকরেট ১৩০ এর আশেপাশে। তাঁর গেমসেন্স দুর্দান্ত। কিন্তু যে আইপিএলে আমরা অহরহ ২০০+ দলীয় সংগ্রহ দেখছি সেখানে আসলে আপনাকে ১৫০ স্ট্রাইকরেটেই ব্যাট করতে হবে।’
টম মুডির কথাতেই স্পষ্ট, এই সময়ে এসে আসলে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অ্যাঙ্করিং রোল প্লে করলেই বিপত্তি। বিরাট কোহলি অবশ্য রান বিবেচনায় এবারের আইপিএল রীতিমত রানফোয়ার ছোটাচ্ছেন। ১০ ম্যাচের ৬ টিতেই ছাড়িয়েছেন পঞ্চাশ।
আগের দুই বছরের ১১৫ আর ১১৯ স্ট্রাইক রেট টপকে এবার ব্যাট করছেন ১৩০ এর উপরে ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট রেখে। তারপরও এবারের আইপিএলে এমন স্ট্রাইকরেটও ঠিক আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে না। কারণ এবারের আসরে স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় ভারতীয়দের মধ্যেই কোহলির অবস্থান প্রায় তলানির দিকেই।
বিরাট কোহলি অবশ্য এই সাম্প্রতিককালেই একবার বলেছিলেন, তিনি ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট নিয়ে কখনোই চিন্তা করেন না। জিও সিনেমার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ম্যাচ পরিস্থিতি যা ডিমান্ড করবে আমি সেভাবেই ব্যাট করতে চাই। আমি সবসময় আমার দলের জন্য খেলি, নিজের জন্য নয়। দলের লক্ষ্য ২৩০ হলে আমি সেভাবেই খেলব।’
কোহলির এমন ভাষ্যের প্রতিফলন অবশ্য দিল্লীর বিপক্ষে ম্যাচে ঘটেনি। যদিও তাঁর সতীর্ত দায়টা দিয়েছেন উইকেটের। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ঐ একই উইকেটে আবার লোমরার ২৯ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন।
আর ব্যাঙ্গালুরুর দেওয়া ১৮২ রানের লক্ষ্যে ২০ বল হাতে রেখেই ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় দিল্লী। কোহলির ৪৬ বলে ৫৫ রানের ইনিংসের বিপরীতে ঐ একই উইকেটে দিল্লীর ফিলিপ সল্ট খেলেন ৩৯ বলে ৮১ রানের ইনিংস। তাই দিনশেষে কোহলির অ্যাঙ্করিং রোল প্লে’র পিছনে শুধু উইকেটের দায় দেওয়াটা ধোপে টেকে না।
দিল্লী ক্যাপিটালসের কোচ, অজি কিংবদন্তি রিকি পন্টিং বিশ ওভারের এই সংস্করণে অ্যাঙ্করিং প্লে’র কোনো জায়গাই দেখেন না৷ তাঁর মতে, একটি দলের নিরব ঘাতক হতে পারে এই ধরনের ব্যাটাররা।
এই আইপিএল চলাকালীন সময়েই একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আক্রমণাত্বক কিংবা পাওয়ার হিটিংয়ে দক্ষ ব্যাটাররা দলের চেহারা পরিবর্তন করে দিতে পারে। একজন অ্যাঙ্করিং রোল প্লে করা ব্যাটার কখনো ২০০ স্ট্রাইকরেটধারী ব্যাটারের মতো ম্যাচ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। এই যে আজিঙ্কা রাহানের কথাই ধরা যাক। পাওয়ার হিটিং দিয়েই কিন্তু ও নিজেকে বদলে ফেলেছে ৷ একই সাথে তাঁর সৌজন্যে দলও কিন্তু সাফল্য পাচ্ছে।’
মোদ্দাকথা, ক্রিকেটের ঐ ক্ষুদ্র সংস্করণে সময়ের বহমান ধারায় অ্যাঙ্করিং রোল প্লে করা ব্যাটাররা যে নিরবে দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান তা এক প্রকার এখন প্রমাণিতই। আর সেই বেড়জালে কোহলিও এক প্রকার বন্দী রয়েছেন।
যদিও, নড়বড়ে শুরুর পরে বিধ্বংসী ভূমিকায় কোহলিও অনেক ম্যাচে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশ্ব ক্রিকেট ঠিল সে রকম কোহলিই দেখতে চায়। কারণ এই সময়ে সম্মর্থকদের তৃষ্ণাটা ঐ পাওয়ার হিটিংয়েরই সৌন্দর্যেই, রয়েশয়ে খেলার বিরক্তিকর ব্যাটিং ডিসপ্লেতে নয়।