‘সুন্দর’ আগামীর রবি শাস্ত্রী!

টেস্ট ক্রিকেটে শতরান মানেই একটা বাড়তি পালক। বিশেষ করে একজন বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য সেটা বড় পাওয়া।

খুব কাছে গিয়েও এই পালকটা দু’বার মিস করেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে এতে সুন্দরের খুব বেশি দোষ আছে এমনটা বলা যাবেনা। ইংল্যান্ডের সাথে একবার ৮৫ আর আরেকবার ৯৫ রানে অপরাজিত থেকে তিনি শতক মিস করেছেন সঙ্গীর অভাবে। শতক মিস করলেও ২১ বছর বয়সী ওয়াশিংটন সুন্দর একটা বার্তা কিন্তু দিয়েছেন, টেস্টে নামের পাশে শতক আসা তাঁর জন্যে স্রেফ সময়ের ব্যাপার।

‘এটা ঠিক আছে। আমি যদি এভাবে খেলতে থাকি তাহলে সামনে আরো সুযোগ আসবে’- বলছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর।

সুন্দরের এই ব্যাটিং প্রতিভা যে এবারই প্রথমবারের মত নজরে এসেছে তা কিন্তু নয়। অস্ট্রেলিয়ার সাথে গ্যাবা টেস্টেই সুন্দর দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। গ্যাবা টেস্টের কথা যেহেতু তোলাই হল, তাহলে একটা গল্প বলে নেওয়া যাক।

গ্যাবা টেস্টের আগে সুন্দর তাঁর বাবাকে বলেছিলেন ভারত জিততে যাচ্ছে। তাঁর বাবা সে টেস্টের পর তা মিডিয়াতে বলেছেনও, ‘আমরা সবাই ভাবছিলাম ড্রই হবে সবচাইতে ভাল ফলাফল। কিন্তু ও তা ভাবেনি।’

ওয়াশিংটন সুন্দর মূলত একজন স্পিনার; বিশেষায়িত করে বললে একজন অফ স্পিনার। তবে স্পিনের পাশাপাশি সুন্দরের এই ব্যাটিং প্রতিভা টিম ভারতকে নিশ্চিত স্বস্তি দেবে। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে পারেন। আবার বোলিংটাও দারুন সার্ভিস দিতে পারে। ভারত তো এমন একজন অলরাউন্ডারকে খুজছে অনেকদিন ধরেই। রবি শাস্ত্রীই যেমনটা বলেছেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা আছে, যেমনটা আমারও ছিল না। সে যদি সাদা পোশাকে তাঁর বোলিং নিয়ে আরো কাজ করে তাহলে বিদেশের মাটিতে সে ভারতের জন্যে ছয় নম্বরে একটি কার্যকরী অস্ত্র হতে পারে।’

মজার ব্যাপার হল, ওয়াশিংটন সুন্দরের কাছে শাস্ত্রী যেমন রোল চাইছেন , খেলোয়াড়ি জীবনে শাস্ত্রির রোল ঠিক এমনটাই ছিল, ‘আমি মনে করি এভাবেই হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া আর স্পিনে উইকেট নেওয়া- সুন্দরের জন্যে এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ১৯৮০ র দিকে আমার রোলটাও এমনই ছিল।’

শাস্ত্রী আরো বলেছেন তিনি রঞ্জি ট্রফিতে তামিলনাড়ুর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের সাথে কথা বলবেন যেন সুন্দরকে দলে চারে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়।

অফ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর যে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দারুণ কার্যকরী সেটা প্রথম টের পেয়েছিলেন সুনীল সুব্রামানিয়াম। ষোল বছর বয়সে ওয়াশিংটন সুন্দর তার কাছেই ক্রিকেটের পাঠ নিতের গেছিল। তিনি বলেছেন, ঠিক তখন থেকেই তিনি সুন্দরের ব্যাটিংয়ে টেম্পারমেন্টের ছাপ দেখতে পেয়েছিলেন। আর এরপর জাতীয় দলের ম্যানেজার থাকাকালে যখন সুন্দর দলে আসে, তিনি রবি শাস্ত্রীকে বলেছিলেন- ভারত এক দুর্দান্ত প্যাকেজ পেতে যাচ্ছে।

তবে রবি শাস্ত্রী যেমনটা বলেছেন, ছয় নম্বরের জন্যে সুন্দর কার্যকরী হবেন কিনা এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলতে সুনীল আরেকটু অপেক্ষা করতে চান, ‘ব্যাকফুটে ও অসাধারণ, যেমনটা অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা গেছে। ও স্পিনটাও ভাল খেলে। কিন্তু টার্ন নেওয়া বলের জন্যে ও কেমন ব্যাটসম্যান সেটা বলতে এখনও পর্যাপ্ত ম্যাচ ও খেলেনি। ওর আরো সময় দরকার আর এরপরই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে।’

এখন তো টি-টোয়েন্টির যুগ। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের যুগে সুন্দর তাঁর টেম্পারমেন্টের লালন কতদিন করতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে ভারতের বেশিরভাগ পিচ যেভাবে ঘাসে ছেয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে সুন্দর কেমন করবেন এমন প্রশ্নে সুনীল বলেন, ‘ও তখনও উইকেট নেবে। ও কঠোর পরিশ্রমী আর নিশ্চিত ভাল করবে।’

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link