ইট টেকস ওয়ানডে, সাকিব!

ধর্মশালা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যারা আগের ম্যাচে খেলা দেখেছেন, গ্যালারি স্ট্যান্ডে একটা লেখা তাদের চোখে পড়ার কথা। ‘It Takes One Day.’ লেখাটা বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি প্রযোজ্য।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপের একটা দিনে, বাংলাদেশী পেসার রুবেলের বলে যখন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যানের উপড়ে গেল, তারপর থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট যেন বদলে গেল। বিগত আট বছরে তারা টেস্ট খেলছে ওয়ানডের মত করে, ওয়ানডে খেলছে টি-টোয়েন্টির মত, আর টি-টোয়েন্টি তো উড়ন্ত খেলা। মিডিয়া এই খেলার নাম দিয়েছে বাজবল। এই বাজবল ক্রিকেট এখন ইংল্যান্ডের রণনীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। প্রতিপক্ষ, মাঠ, বোলার এসব দেখাদেখির কোন বালাই নেই। একটাই স্ট্রাটেজি, বল কে পিটাও।

একটা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল পরের টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ব্যাপারটা কমন। উপরন্ত, এই বিশ্বকাপ নয় ম্যাচের লিগভিত্তিক হওয়ার কারণে প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সাথে হেরে যাওয়ার ব্যাপারটা ইংল্যান্ডের ততটা আঘাত লাগার কথা না। কিন্তু লেগেছে!

এই আঘাতের সহজ একটা ঔষধ হচ্ছে বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দেওয়া। কোন সন্দেহ নেই ম্যাককালাম বাহিনী কাল বাংলাদেশকে পিষে মারতে চাইবে। আর ইংল্যান্ডের এই কৌশল টাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে। যদিও, সাদা বলে ইংলিশদের কোচ ম্যাথু মট, তবে কৌশলে কোনো নড়চড় নেই।

আশ্চর্যজনক হলেও, টসে জিতে প্রথমে বল নেওয়ার পক্ষে আমি। যে ইংল্যান্ড দল প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে খুব নিয়মিতভাবে সাড়ে তিনশ বা চারশ রান করছে, টসে জিতে তাদেরকে প্রথমে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানানোটা অনেকটা বোকামি মনে হতে পারে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে খেলাটা হচ্ছে হিমালয়ের পাদদেশে যেখানে বিকেলবেলা থেকেই কুয়াশা ফ্যাক্টর ভালোভাবে কাজ শুরু করবে।

এখানে প্রতিপক্ষকে আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে দেওয়ার সুযোগটা সাকিবকে অবশ্যই দিতে হবে। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে বাংলাদেশের মাঝামাঝি কোন অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণভাবে আক্রমণাত্মক বোলিং ও ফিল্ডিং সাজাতে হবে। বোলাররা যদি ভালো বল করতে পারে তাহলে ইংল্যান্ডের দশা নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের মত হবে।

কেননা একটানা আক্রমণ একটা কার্যকরী বোলিং ইউনিটের বিপক্ষে করাটা সহজ হবে না। বোলাররা মার খাবে। চার ছক্কার বৃষ্টি হবে। কিন্তু আমার মনে হয় না সাকিব কোনরকম রক্ষণাত্মক ক্যাপ্টেন্সি করবে। বোলার ফিল্ডাররা যদি তাদের সামর্থ্য অনুসারে কাজ করতে পারে, তাহলে ইংল্যান্ড গত ম্যাচের মতই চুপসে যাবে।

ইতিমধ্যে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ওয়ানডে না খেলা বেন স্টোকস ইনজুরি জনিত কারণে খেলবেন না। এও শোনা যাচ্ছে, ওদের মঈন আলী ওপেন কিংবা তিন নম্বরে নামতে পারে। প্রথম ম্যাচ হেরে তারা মরিয়া হয়ে আমাদের উপরে কামড় বসাতে পারে। আমার বিশ্বাস, আমাদের মিরাজের শাফল করা দেখে ওদের এই আইডিয়া এসেছে। ওরা যখন আমাদের স্ট্রাটেজি ফলো করবে, আমরাও কিন্তু ওদের স্ট্রাটেজি ফলো করতে পারি।‌ আর আমার ধারণা, এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে স্ট্রাটেজিক ক্যাপ্টেন হচ্ছে আমাদের সাকিব।

মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে আফগানিস্তান কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ার হিটিং করা একটা দল। সেই দলকে যদি সাকিব তার বুদ্ধিমত্তার ক্যাপ্টেন্সি দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে, তবে ইংল্যান্ডের সাথেও পারা উচিত। কিন্তু যদি টসে হেরে আগে ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে, তাহলে সাকিবের ক্যাপ্টেন্সি স্টাইল পাল্টাতে হবে। তখন বাংলাদেশের পুঁজি দেখে বোলারদেরকে শাফল করতে হবে।

আগামীকাল তাই একটাই ঔষধ কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কাঁটা তুলতে কাঁটা। ওদের আক্রমাত্মক ব্যাটিংয়ের জবাব আমাদের আক্রমণাত্মক বোলিং ফিল্ডিং দিয়ে দিতে হবে। কোনভাবেই রক্ষণাত্মক মানসিকতা দেখানো যাবে না। ইংল্যান্ডের এই দলের সাথে আপনি একবার মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে, আপনি একবার রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজালে, ওরা আপনার উপর চড়াও হয়ে বসবে। সুতরাং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ক্রিকেটের সবচাইতে ক্ষুরধার মস্তিষ্কদের ভিতরে একজন সাকিব, কোনভাবেই রক্ষণাত্মক ভাবে খেলবেন না।

খুব বাজেভাবে হারুক, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে জেতার একটাই উপায়। আপনাকে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। আর এই পরিকল্পনা তো একদিনের জন্যই।

ইট টেকস ওয়ানডে, সাকিব। বাজবল ক্রিকেট কে আমরাও থামাতে পারি, এই বিশ্বাস আমার আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link