বিশ্বজুড়েই এখন কোচ সংকট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই যুগে জাতীয় দলের জন্য কোচ পাওয়া যেন অসাধ্য এক ব্যাপার এখন। আর কোচ পেলেও তিনি জুড়ে দেন নানান ধরণের শর্ত। পূর্ণকালীন দায়িত্বের জন্য কোচ পেতে তাই গলদঘর্ম হতে হত ক্রিকেট বোর্ড। এমন কোচ সংকটের সময়ে বাংলাদেশ ফিরে গেছে তাদের পুরোনো কোচ হাথুরুসিংহের কাছে।
পাকিস্তানও এবার দেশি কোচের বদলে বিদেশি কোচ নিয়োগ দেবার ধারায় ফিরেছে এনেছে তাদের পুরোনো কোচ মিকি আর্থারকে।তাকে ‘টিম ডিরেক্টর’ পদে নিয়োগ দেবার কথা জানানো হলেও প্রধান কোচের পদে বোর্ড কাউকে না রাখায় কোচিং স্টাফের বাকিদের নেতৃত্ব দেবেন আর্থারই।
এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন মিকি আর্থার। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর তাঁর সাথে আর চুক্তি নবায়ন করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডে কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারের কোচের দায়িত্ব পালন করছিলেন। রমিজ রাজার বদলে নাজাম শেঠি পিসিবির সভাপতির চেয়ারে বসার পরই আর্থারকে আবার পাকিস্তানের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেবার আগ্রহের কথা জানান।
মিকি আর্থারকে নিয়োগ দিতে দল পরিচালনায় অদ্ভুত এক কাঠামো দাঁড় করিয়েছে পাকিস্তান। টিম ডিরেক্টর পদে নিয়োগ পাওয়া আর্থার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন ডার্বিশায়ারের কোচ হিসেবেও। যার ফলে কিছু সিরিজ পাকিস্তান দলের সাথে কাজ করলেও কিছু সিরিজে দলের সাথে থাকবেন না তিনি। টিম ডিরেক্টরের অনুপস্থিতিতে দল সামলাবেন কোচিং স্টাফের বাকি সদস্যরা। তখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দলের ভালো মন্দ দেখভাল করবেন আর্থার। অদ্ভুতুড়ে এই কাঠামো ও ‘অনলাইন কোচিং’ এর ফর্মুলা নিয়ে তাই পাকিস্তান জুড়েই চলছে আলোচনা সমালোচনা।
বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেননি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক। আর্থারকে এভাবে ফিরিয়ে আনাটা পাকিস্তান ক্রিকেটের ওপরই চপেটাঘাত বলে মনে করেন তিনি। ‘একজন উঁচুমানের পূর্ণকালীন কোচ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না—এটা আমাদের ক্রিকেট–ব্যবস্থার ওপর চপেটাঘাত। সেরাদের কেউ আমাদের দলের দায়িত্ব নিতে না চাওয়াটাও লজ্জাকর ব্যাপার। আমরা এমন একজনকে পাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছি, যিনি পাকিস্তানকে দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে দেখছেন।’
২০১৯ সালে মিকি আর্থারের বিদায়ের পর প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান মিসবাহ। শুধু প্রধান কোচই নয়, প্রধান নির্বাচকের ক্ষমতাও ছিলো তাঁর হাতেই। দল পরিচলনায় সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা মিসবাহ বেশিদিন দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেননি। রমিজ রাজা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নেবার পরেই পদত্যাগ করেন তিনি।
কোনো পূর্ণকালীন কোচ না এনে আর্থারকে এমন অদ্ভুতভাবে ফিরিয়ে আনাকে পাকিস্তানের ক্রিকেট ব্যবস্থার জন্য অপমানজনক মনে করছেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘আমাদের নিজস্ব ক্রিকেট–ব্যবস্থাকে দায়ী করব আমি। আমাদের ক্রিকেট–ব্যবস্থায় প্রচুর ফাঁকফোকর আছে, যে কেউ এখানে সুযোগ নিতে পারেন।
আমরা নিজেদের লোকদের অসম্মান করি, বদনাম করি। বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা একে অপরকে সম্মান করে না। মিডিয়া ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সাবেক ক্রিকেটাররা নিজেদের ক্রিকেটের অবমূল্যায়ন করেন, স্থূলভাবে আঘাত করেন, যার ফলে এমন একটা ছাপ পড়ে যে আমাদের সামর্থ্য নেই।’