জামাল ভূঁইয়ার ৫০ ও তারিক কাজীর স্বপ্ন

অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তারিক নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘ক্লাব ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছে আমার। আর এটা আমার জাতীয় দলে প্রথম কোনো অভিযান। যদি খেলার সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো। আমার কাছে দলের জয়ই বড় বিষয়। নিজের সুযোগ পাওয়াটা এখানে বড় কোন বিষয় নয়।’

নেপালে ত্রিদেশীয় সিরিজেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে অভিষেক হতে পারত কাজী তারিক রহমানের। কিন্তু ইনজুরির কারণে স্বপ্নপূরনটা বিলম্বিত হয়ে যায়। এবার বহুদিনের লালিত সেই স্বপ্নটি পূরণ হতে যাচ্ছে তার। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লাল সবুজ জার্সি গায়ে চাপানোর অপেক্ষা পূরণের সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলার।

অন্যদিকে তারিকের পূর্বসুরী হিসেবে যাকে ধরা হয় সেই জামাল ভুইয়া আজ তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামবেন। একটা জায়গায় দুজনের মধ্যে দারুণ মিল, সেটি একই স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তারা। একজনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে বড় স্বপ্নের পথে হাটছেন আর আরেকজনের স্বপ্ন পূরণ হলো বলে।

  • জামাল ভূঁইয়ার হাফ সেঞ্চুরি

জামাল জামাল ভূঁইয়াকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুটবলের পোষ্টারবয়। যে ছেলেটি ছোটবেলায় গোলাগুলিতে পড়ে গুলি খেলেছিলেন সেই ছেলেটি এখন বাংলাদেশের ফুটবলের প্রাণভোমড়া। বাংলাদেশে যদিও তার শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি। আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণে ফিরে গিয়েছিলেন জন্মভুমি ডেনমার্কে। আবার যখন বাংলাদেশে আসেন তখন আর কোন পিছুটান ছিল না। এখন তো এদেশের মাটি-আলো-বাতাস সবকিছুই যেন তার নিজের।

ক্লাব ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের হাতে এখন জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড। আজ কাতারে বিশ্বকাপ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের খেলায় ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামছেন জামাল। ২০১৩ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০২১ সালে কাতারের দোহায় সেটি এখন মধ্যগগনে।

দশরথের রঙ্গশালা ষ্টেডিয়াম থেকে জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়াম, তাঁর ক্যারিয়ারের অনন্য দুটি অর্জনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দুটি নাম। বর্তমানে জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র তিনি। আট বছর আগে ২০১৩ সালের ৩১ আগষ্ট নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। এরপরের সময়টা শুধুই উপভোগের।

বাবা-মায়ের কাছে মাতৃভূমি বাংলাদেশের গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া জামাল এক দশক আগে গায়ে লাল সবুজ জার্সি গায়ে চাপানোর লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলেন। ২০১১ সালে জাতীয় দলের জন্য ট্রায়াল দিতে এসে কোনভাবেই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ডেনমার্কে ফিরে যেতে হয়েছিল জামালকে। এরপর জামালের আবারো বাংলাদেশে আগমন এবং ২০১৩ সালে স্বপ্ন পূরণ হওয়া।

সবশেষ ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং এ খেলেছেন। সুনামের সহিত খেলা জামালকে পরের মৌসুমের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশের ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের কাছে চেয়ে রেখেছে মোহামেডান। ২০১৪-১৫ মৌসুমে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের হয়ে অভিষেকের পরের মৌসুম খেলেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে। এরপরই বনে যান সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ঘরের ছেলে।

সাইফ থেকেই ধারে কলকাতা মোহামেডানে ১২ ম্যাচ খেলে এসেছেন জামাল ভূঁইয়া। ৮ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করে এখন জাতীয় দলের ৫০তম ম্যাচ খেলবেন মধ্যমাঠের এই প্রাণভোমরা। যাকে বাংলাদেশের পথ দেখিয়েছিলেন সেই ডাচ কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফও নিশ্চয়ই এখন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন নিজ দেশে বসে।

ডাচ কোচের পর যে দেশের কোচই বাংলাদেশে এসেছেন সবারই পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলেন জামাল। নিজের অর্ধশত ম্যাচের মাইল ফলকের সামনে দাড়িয়ে জামাল ভুইয়া বলেন, ’আমার কাছে ৫০ ম্যাচ খেলা দারুণ কিছু, আর সেটি যদি হয় জাতীয় দলের হয়ে তাহলে তো কোন কথাই নেই। আফগানিস্তানের ম্যাচ নিয়ে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত।জাতীয় দলের হয়ে একশ ম্যাচ খেলতে চাই। তবে এই ম্যাচটি স্বরণীয় হয়ে থাকবে যদি বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে পরাজিত করতে পারে।’

জামাল এখন শুধু বাংলাদেশেরই নন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত। রক্ষণভাগ আর আক্রমণভাগের মধ্যে যে সেতুবন্ধন তৈরি হয় সেটিই তার করা। ডিফেন্স আগলে মাঝমাঠ থেকে ষ্ট্রাইকারদের বল যোগান দেওয়ার মূল কাজটিই করে থাকেন তিনি। এমনিতে মাঠে জামালের মতো খেলোয়াড়ের গুরুত্ব সেভাবে বোঝা যায়না। তবে যেদিন মাঠে না থাকেন সেটিন ঠিকই বোঝা যায় কতটা গুরুত্ব রয়েছে তার।

  • অভিষেকের অপেক্ষায় তারিক

জামাল ভুইয়া যে পথ দেখিয়েছিলেন পরে সেই পথের যাত্রী হতে বিশ্বের বিভিণœ দেশের বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত খেলোয়াড়দের লম্বা তালিকার দেখা মেলে। তবে সেখান থেকে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারায় অনেকেই ফিরে গেছেন জন্মভুমিতে। সেখানে ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে কাজী তারিক রহমানকে। জামালের মতোই বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আজকে স্বপ্নপূরণের দোড়গোড়ায় দাড়িয়ে রয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের লাল সজুব জার্সি গায়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন তারিক। বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডারের খেলা এরই মধ্যে কোচ জেমি ডে’সহ সবারই নজর কেড়েছে। এবার জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণের পালা। যদিও অভিষেকটা আরো কয়েকমাস আগেই হয়ে যেত তার। কিন্তু কুচকির ইনজুরির কারণে নেপালে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলা হয়নি তার। কিছুটা সময় অপেক্ষার পর এবার সুস্থ হয়েই অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন।

শুরুর একাদশে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে কোচ জেমি ডের ‘গুড বুকে’ই রয়েছেন তারিক। দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ম্যাচেই রাইটব্যাক তারিকের অভিষেক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। মূলত বিশ্বনাথ ঘোষ ও সাদ উদ্দিনের দলে না থাকার কারণে তারিকের অভিষেকের পালে হাওয়া লেগেছে। ইনজুরির কারণে তো বিশ্বনাথ ক্যাম্পে যোগই দিতে পারেননি।

তারিক ফিনল্যান্ড বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। এ ছাড়া ফিনল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ইলভেস ট্যাম্পেরের জার্সিতে ইউরোপা লিগের বাছাইপর্বে ম্যাচও খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। প্রবাসী এই ফুটবলার গত বছর থেকেই ঘরোয়া আসরে খেলছেন। নানা সমস্যা নিয়ে কাতারে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দ্বিতীয় লেগে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তারিক নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘ক্লাব ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছে আমার। আর এটা আমার জাতীয় দলে প্রথম কোনো অভিযান। যদি খেলার সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো। আমার কাছে দলের জয়ই বড় বিষয়। নিজের সুযোগ পাওয়াটা এখানে বড় কোন বিষয় নয়।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...