ধারাবাহিকতার ব্যাপারটা নিজের নামের সাথে পাঁকাপোক্ত করেছেন বেশ আগেই। দলের ব্যর্থতায়ও হেসেছে রুটের ব্যাট। বাকিদের ব্যর্থতার খাতাটা ভারী হলেও, রুটের ব্যাটে রানের ফোয়ারা দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ সেরার পুরষ্কারটা নিজের নামেই করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক জো রুট।
জনি বেয়ারস্টোর বিধ্বংসী ব্যাটিং, বেন স্টোকসের ফেরা, ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটির প্রত্যাবর্তন, নতুন অধিনায়ক, নতুন কোচ – এই সব কিছুর আড়ালে যেন আলোচনায় খানিকটা পিছিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক জো রুট।
লম্বা সময় ব্যর্থতার সাগরে ডুবতে থাকা ইংল্যান্ড দলের হাল ছেড়েছেন এক সিরিজ আগে। অধিনায়কের গুরুদায়িত্বটা তুলে দিয়েছেন বেন স্টোকসের হাতে। দলের ব্যর্থতায় রুটের আদৌ কিছু করার ছিল কি-না সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকে! ওয়ান টু ইলেভেন – রুট বাদে বাকি সবাই একে একে নাম লিখাচ্ছিলেন ব্যর্থতার খাতায়। যার কারণে একের পর এক ম্যাচ আর সিরিজ হারে বিধ্বস্থ হয়ে পড়ে ইংলিশ শিবির।
কিন্তু ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ভাবে রান করছিলেন রুট। সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি দেখা মিলছিল রুটের ব্যাটে। দলের ব্যর্থতার দায় তো অধিনায়কের উপরই বেশিরভাগটা বর্তায়। ব্যতিক্রম হয়নি রুটের ক্ষেত্রেও। টানা ব্যর্থতায় নিজ থেকেই সরে দাঁড়ালেন।
তিন টেস্টে ৯৯ গড়ে ৩৯৬ রান। লর্ডসের পর ট্রেন্ট ব্রিজেও প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। এরপর হেডিংলিতে শেষ টেস্টে ৮৬ রানের অপরাজিত ম্যাচজয়ী এক ইনিংস।
এই রুটকে নতুন করে চেনার নেই কিংবা চেনানোর নেই। সাদা পোশাকে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সেরা ব্যাটার সে নিয়েও কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সদ্যই উঠে এসেছেন শীর্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে স্পর্শ করেছেন দশ হাজার রানের মাইলফলকও। চলতি বছর টেস্টে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতে জনি বেয়ারস্টোর সাথেই শীর্ষে আছেন তিনিও।
তবে এই সিরিজে রুটের মাঝেও আগ্রাসী মনোভাবের দেখা মিলেছে। নিল ওয়াগনারের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা রিভার্স স্কুপে ছক্কা! টেস্ট ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির শট! রুট এমনিতেই ছিলো রানের ধারায়। নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের কাছ থেকে ব্যাটাররা যে পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছেন, সেটাও আর বলার অপেক্ষা রাখে না; ব্যাটারদের ব্যাটিং স্টাইল, আগ্রাসনেই তা স্পষ্ট।
সেই আগ্রাসনের ছাপটা দেখা গেছে রুটের মাঝেও। অধিনায়কের টুপিটা মাথায় নেই, চাপের সাগর শুকিয়ে গেছে। দলেও বিরাট এক পরিবর্তন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দেখা মিলেছে ভিন্ন এক ইংল্যান্ড দলের। ব্যাটে-বলে সবাই যেন উড়ন্ত ফর্মে। এত পরিবর্তনের মাঝেও আপন গতিতে, পুরনো ধারায় ছুঁটেছেন রুট। আবারও ব্যাটে রানের ফোয়ারা, আরও একটি সিরিজ; আরও একবার সিরিজ সেরা রুট।
তিনি ২২ গজের এক সুনিপুণ চিত্রকর। ব্যাট হাতে বাইশ গজে নিজের প্রতিভার ছাপ এঁকে যাচ্ছেন প্রতি সিরিজেই। রুট ছিলেন দলের বিপদে, রুট এখনো আছেন। সাদা পোশাকে দলকে কাঁধে চাপিয়ে ছুঁটেছেন লম্বা পথ। দলের গুরুদায়িত্বটা এখন আর নেই। কিন্তু ব্যাট হাতে হাস্যজ্বল রুট আর থামেননি। সাদা পোশাকে রান পাহাড়ের চূঁড়ায় উঠতে তিনি ছুঁটে চলেছেন অদম্য গতিতে।