স্পেশাল ওয়ান কিংবা নাম্বার ওয়ান

যদি আপনার কাছে থাকে ফেরারি আর আমার কাছে একটা সাধারণ-সাদামাটা গাড়ি আপনাকে আমি যদি গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় হারাতে চাই তাইলে আমার হয়তো আপনার গাড়ির চাকা খুলে দিতে হবে অথবা আপনার গাড়ির ট্যাংকে চিনি ঢেলে দিতে হবে।এছাড়া আপনাকে হারানোর বিকল্প কোনো অপশন আমার কাছে নেই।

উপরের এই কথাগুলো আর কারো নয়, ফুটবল বিশ্বের সেরা ট্যাক্টিশিয়ান হোসে মরিনহোর। প্রতিপক্ষের সহজাত খেলা ভেস্তে দেয়া ছিল যার মূল লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল এই পর্তুগিজ। ক্লাব ফুটবলে পাওয়া যায় সব ট্রফির স্বাদই পেয়েছেন স্পেশাল ওয়ান। এত শিরোপা পাবার পরেও কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য বলেছেন ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় হওয়াকে।

১৯৯৬ সালে তখনকার বার্সেলোনার ইংলিশ কোচ ববি রবসনের অনুবাদক হিসেবে ৩৩ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত পর্তুগিজকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্ত সে পর্তুগিজ শুধু যে স্প্যানিশ ভাষাই জানতেন তা নয়। ফুটবল নিয়েও ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান আর আগ্রহ। কোচ ববি রবসনের সাথে সুযোগ পেলেই ফুটবল নিয়ে কথা শুরু করে দিতেন। কোচ যখন খেলোয়াড়দের ট্যাকটিক্স নিয়ে কথা বলতেন, ওই পর্তুগিজ তাঁর অনুবাদ করতেন খেলোয়াড়দের।

শুধু তাই নয় এই অনুবাদের মধ্যে নিজের ফুটবল নিয়ে ভাবনা বা প্রতিপক্ষকে নিয়েও অনেক কিছু বলতেন মরিনহো। বার্সা সমর্থকদের কাছে শুধু অনুবাদক হিসেবে পরিচিত থাকলেও বার্সার কোচ আর ফুটবলাররা ঠিকই জানত তখনকার বার্সালোনা দলে মরিনহোর কতটা গুরুত্ব ছিল। তখনকার বার্সা অধিনায়ক ছিল বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা কোচ পেপ গার্দিওলা। গার্দিওলার বেশ ভাল বন্ধু ছিলেন এই মরিনহো।

মরিনহোর ফুটবল জ্ঞান মুগ্ধ করেছিল পেপকে। বার্সাকে কিছু ফ্রেন্ডলি ম্যাচে কোচিংও করিয়েছেন স্পেশাল ওয়ান। তার মানে মরিনহোর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় বার্সাকে দিয়েই। ২০০০ সালে অনেকটা নীরবেই কাতালান শহর থেকে চলে যান নিজ দেশে। কোচিং করানো শুরু করলেন পোর্তোকে।

২০০৪ সালে পোর্তো যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ঘরে তোলে তখন বার্সেলোনা ক্লাবে, শহরে সবাই দেখল তাদের পরিচিত এক মুখকে,যে কিনা নিজের কথাই সগৌরবে বলে যাচ্ছেন যা মোটেও বার্সাসুলভ নয়। বার্সার ‘মোর দ্যান আ ক্লাব’ তত্ত্বে বিশ্বাসী না তাদেরই সাবেক এক অতি পরিচিত মুখ। রবসনের অধীনে থাকাকালীন বার্সাকে এত ভাল করে চিনেছিলেন যে ২০০৫ সালে যখন চেলসির হয়ে ন্যু ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন মরিনহো ম্যাচের আগের দিনই বলে দিয়েছিল কেমন হবে বার্সার ট্যাক্টিক্স আর টিম লাইন আপ।

এরপর থেকে মরিনহোর সাথে বার্সালোনার সম্পর্ক আর কখনোই ভাল হল নাহ। পরের বছর আবার যখন চেলসি বার্সালোনায় গেল বার্সা ফ্যানদের ব্যাপক রোষানলের মুখে পড়লেন মরিনহো। ‘অনুবাদক, অনুবাদক’ বলে চেচামেচি করে সমর্থকরা বারবার তাকে তার অতীতের কথা মনে করিয়ে দিল। কিন্ত তাতে মরিনহোর কিছু আসে যায় নাহ।

খুব কম মানুষই জানত, যে ফ্র‍্যাংক রাইকার্ডের চলে যাবার পরে মরিনহোকে বার্সার কোচ হবার জন্য বার্সার দুই কর্মকর্তা দেখা করেছিল মরিনহোর সাথে। মরিনহোও হয়তো শেষ পর্যন্ত রাজি হতেন বার্সাকে কোচিং করানোর জন্য। কিন্ত শেষমেশ বার্সা বোর্ড এর সিদ্ধান্ত ছিল যে পেপ গার্দিওলা জোসে মরিনহোর থেকে ভাল বিকল্প। আবার যখন মরিনহো ন্যু ক্যাম্পে যান ইন্টার মিলানের হয়ে তখন হয়তো টিম ইন্টারের জয় থেকে ব্যক্তি মরিনহোর জয় বড় ছিল। পরবর্তীতে রিয়ালের কোচ হয়ে আবার সেই বার্সার বিপক্ষেই থেকে গেলেন স্পেশাল ওয়ান।

স্পেশাল ওয়ান যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হলেন সেটা স্বয়ং অনেক ইউনাইটেড সমর্থকরাও বিশ্বাস করতে পারেননি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন চলে যাবার পরে নাজেহাল ইউনাইটেড এর হাল ধরার উপযুক্ত আর কেউ ছিল বলে অন্তত আমার মনে নাই। শেষ পর্যন্ত বেশিদিন ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকা হয়নি মরিনহোর। এই থাকা না থাকায় কে বেশি হেরেছে সেটা বলা মুশকিল। ২০২০ সালে এসে যা মনে হয়েছিল তাতে লোকসানটা রেড ডেভিলদেরই বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link