রোহিত ২.০, এক দশকের পরিচয়!

মহেন্দ্র সিং ধোনির উপর আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতেই পারেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কারণ তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার যে ধোনির এক সিদ্ধান্তেই আমূলে পাল্টে গিয়েছিল। গড়পড়তা এক ব্যাটার থেকে হয়ে উঠেছিলেন সেরাদের সেরা।  

মহেন্দ্র সিং ধোনির উপর আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতেই পারেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কারণ তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার যে ধোনির এক সিদ্ধান্তেই আমূলে পাল্টে গিয়েছিল। গড়পড়তা এক ব্যাটার থেকে হয়ে উঠেছিলেন সেরাদের সেরা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রোহিত শর্মার পদার্পণ ঘটে ২০০৭ সালে। এখন পর্যন্ত ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারকে প্রথম অধ্যায় আর ২০১৩ থেকে চলমান অংশকে দ্বিতীয় অধ্যায় বলে অভিহিত করলে মোটেই ভুল হয় না। রোহিতের শুরুর ক্যারিয়ারটা বড্ড সাদামাটা, কিন্তু রোহিত ২.০ এর যাত্রাপথ ঠিক তার উল্টো, একদম রাজকীয় বলতে যেমন বুঝায়। আর রোহিত শর্মার এ জাগরণের গল্পের আড়ালের নায়ক ছিল তখনকার অধিনায়ক ধোনির একটি সিদ্ধান্ত।

শুরুর দিকে মিডল অর্ডারের ব্যাট করতেন রোহিত শর্মা। ব্যাটিং গড়টা কোনোমতে ত্রিশের উপরে ছিল সে সময়। যা ভারতীয় ব্যাটারদের সাথে বড্ড বেমানান। দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মত কোনো অর্জনই ছিল না রোহিতের। তাই অনুমিত ভাবেই ২০১১ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেলেন না।

এর ঠিক ১৮ মাস পরের গল্প। রোহিত শর্মা তখনও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। কোনো ভাবেই রান পাচ্ছিলেন না। ভারত উত্তাল হয়ে উঠল রোহিতকে বাদ দিয়ে মানোজ তিওয়ারিকে দলে ঢোকানোর বাকযুদ্ধে।

কিন্তু, ধোনি চাইলেন রোহিতকেই। নিজ সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে এবার ধোনি রোহিত শর্মাকে নিয়ে অন্য একটা ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটাতে চাইলেন। সেটাকে এক প্রকার জুয়া ধরা বললেও ভুল হয় না। মিডল অর্ডারে ব্যাট করা রোহিত শর্মাকে ব্যাটিং লাইন আপে তুলে আনলেন সরাসরি ওপেনিংয়ে।

ব্যাস। ঐ এক সিদ্ধান্তেই ভিন্ন দিকে মোড় নেয় রোহিত শর্মার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমে সে ম্যাচে খেললেন ৮৩ রানের ইনিংস। আর এর পর থেকেই পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রোহিত শর্মাকে। বছরের পর বছর ব্যাটিং দ্যুতি ছড়িয়ে শক্ত ভাবে ধরে রাখলেন নিজের জায়গা। ২০১৩ সালে ২৩ জানুয়ারিতে যে রোহিত ২.০ এর জন্ম হয়েছিল ২০২৩ সালের এই ২৩ জানুয়ারিতে এসে তার এক দশক পূরণ হল।

এই এক দশকে রোহিত বাইশ গজে কেমন আধিপত্য দেখিয়েছেন তা একটু পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই হয়। ক্যারিয়ারের প্রথম ৬ বছরের যেখানে তাঁর সেঞ্চুরি ছিল মোটে ২ টি, সেখানে এই ১০ বছরে শুধু ওয়ানডেতেই হাঁকিয়েছেন ২৭ টি সেঞ্চুরি আর ৩ টি ডাবল সেঞ্চুরি।

ওপেনিংয়ে এসে এই দশ বছরে প্রায় ৫৬ গড়ে করেছেন ৭৬৬৩ রান। আর এতেই এক সময়ের ত্রিশ গড়ের ব্যাটারের গড় ১০ বছর বাদে ৪৮ এ গিয়ে ঠেকেছে। এক দশকের ব্যবধানে সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে রীতিমত সেরাদের কাতারে নিয়ে গিয়েছেন তিনি।

শুধু ওয়ানডে নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও গড়েছেন রেকর্ড। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪ টি সেঞ্চুরির রেকর্ড তাঁর। এ ছাড়া প্রথম ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩০০০ রানের মাইল ফলক স্পর্শ করার কীর্তিও রোহিতের। সাদা বলের ফর্ম টেনে এনেছেন লাল বলের ক্রিকেটেও।

বেশ খানিকটা দেরিতে টেস্ট অভিষেক হলেও তাতে মানিয়ে নিয়েছেন ঠিকঠাক ভাবে। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৮ টি সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪১ টি সেঞ্চুরির মালিক রোহিত শর্মা। অথচ ১০ বছর আগেও তাঁর ঝুলিতে ছিল মাত্র ২ টি সেঞ্চুরি।

সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপ। ২০১১ সালে ঘরের মাটিতে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। কিন্তু সে দলে ছিলেন না রোহিত। এক যুগ বাদে আবারো ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ। এবার ভারতকে নেতৃত্ব দিবেন সেই এক যুগ আগের বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া রোহিত শর্মা। ওয়ানডে বিশ্বকাপ কখনোই জেতা হয়নি রোহিত শর্মার। এবার নিশ্চয়ই সেই আক্ষেপটা ঘোচাতে চাইবেন রোহিত ২.০।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...