আতাপাত্তু হতে পারেননি রাদারফোর্ড

আচ্ছা বলুন তো, টেস্ট ক্যারিয়ারে একজন ব্যাটসম্যানের শুরু ঠিক কতটা বাজে হতে পারে? প্রশ্ন শুনে অনেকেই হয়ত ভাবছেন মারভান আতাপাত্তুর কথা। সাবেক লঙ্কান এই ওপেনারের প্রথম ছয় ইনিংসের মোট রান ছিল ১!

তবে আতাপাত্তু কিন্তু পরে সেটা পুষিয়ে দিতে পেরেছিলেন। ৯০ টেস্ট খেলে তাঁর সংগ্রহ ৫,৫০২ রান। এত জঘন্য শুরুর পরও হাঁকিয়েছেন ৬ টা ডাবল সেঞ্চুরিসহ ১৬ টা সেঞ্চুরি; এভারেজটাও বেশ হেলদি, ৩৯.০২। তবে আতাপাত্তু পারলেও পারেন নি রাদারফোর্ড। হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডের সাবেক ওপেনার কেন রাদারফোর্ডের শুরুটাও ছিল অনেকটা আতাপাত্তুর মতো; কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাঁকে ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে ৫৬ টেস্টে মাত্র ২৭.০৮ গড়ে ২,৪৬৫ রান নিয়ে।

কেইন রাদারফোর্ড নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। কেননা তাঁর অভিষেক হয়েছিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে, আশির দশকে, উইন্ডিজের বিপক্ষে, উইন্ডিজের মাটিতে। একবার জাস্ট কল্পনা করুন দৃশ্যটা — মার্শাল, হোল্ডিং, গার্নারের মত হিংস্র গতি দানবের সামনে সদ্য টিনএজ পেরোনো এক নবাগত ওপেনারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ যেন ক্ষুধার্ত সিংহের খাঁচায় হরিণ শাবক ছেড়ে দেয়ার মতই ব্যাপার!

ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে, অভিষেক টেস্টে রাদারফোর্ডকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছিলেন মার্শাল। ৮ বলে ০! দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্য, এবারে অবশ্য কোন বল না খেলেই রান আউট হয়ে বরং বেঁচে গিয়েছিলেন!

জর্জটাউনে দ্বিতীয় টেস্টেও একই দশা। এবার অবশ্য ইনিংসের চতুর্থ বলেই জোয়েল গার্নারকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। কিন্তু পরের বলেই গার্নার নিলেন প্রতিশোধ, কট বিহাইন্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে রাদারফোর্ড। স্বস্তির খবর এই যে, বৃষ্টি বাঁধায় দ্বিতীয় ইনিংসে আর নামতেই হয় নি তাঁকে।

পরের টেস্টের ভেন্যু ছিল বারবাডোজের কেনসিংটন ওভাল। ৩ ইনিংসে ৪ রান করা রাদারফোর্ডকে এক ধাপ ডিমোশন দিয়ে পাঠানো হল তিন নম্বরে। জন রাইটের সাথে ওপেন করতে নামলেন অধিনায়ক জিওফ হাওয়ার্থ নিজেই। কিন্তু তাতে লাভ হল না বিশেষ। প্রথম ওভারেই ডাক মেরে প্যাভিলিয়নে জন রাইট, অগত্যা রাদারফোর্ডকে তাই নামতেই হল। কিন্তু টিকতে পারলেন কই? ‘গোল্ডেন ডাক’ খাইয়ে ঠিকই তাঁকে বরণ করে নিলেন মার্শাল। রাদারফোর্ডের ক্যারিয়ার গড় তখন ঠিক ১!

ও আচ্ছা বলাই হয় নি, দিনটি ছিল ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৫। আজকের লেখার উপলক্ষ খানা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন এইবার!

প্রথম ইনিংসে মাত্র ৯৪ তুলতেই শেষ কিউইদের ইনিংস, মার্শাল নেন ৪ উইকেট। জবাবে স্যার ভিভ রিচার্ডস একাই করেন ১০৫, উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩৬।

ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ২৪২ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে নিউজিল্যান্ড। এবারে অবশ্য কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রাদারফোর্ড। ওপেনিংয়ে রাইট-হাওয়ার্থ জুটি কাটিয়ে দিল পাক্কা ৪০ মিনিট!

তৃতীয় দিনের খেলা শেষ। চতুর্থ দিন সকালেই আবার ডাক পড়ল রাদারফোর্ডের! হাওয়ার্থকে (৫) সক্কাল সক্কাল ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠিয়ে নিজের ‘প্রিয় শিকার’কে চোখের সামনে দেখার যেন তর সইছিল না মার্শালের!

এবারে রাদারফোর্ড ফিরলেন দুই রানে, যথারীতি মার্শালের শিকার হয়ে। মানে বুঝতে পারছেন তো? ২ রান, কেইনের বর্তমান ক্যারিয়ার গড়ের দ্বিগুণ! ১ থেকে যেটা ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১.২০!

এরপর কী হয়েছিল সেটাও একটু জেনে রাখুন। জন রাইট আর জেরেমি কনি’র ফিফটিতে ব্ল্যাক ক্যাপ্সরা করেছিল ২৪৮ রান। অর্থাৎ কোন রকমে ইনিংস হার এড়িয়েছিল আর কি!

কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্ক, সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি দুই দল। নিউজিল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট এবারে সিদ্ধান্ত নিল রাদারফোর্ড খেলবেন ৬ নম্বরে! কিন্তু ছয়ে নেমেও কি মার্শালের কবল থেকে তাঁর মুক্তি মিলেছিল? না, মেলে নি। ‘নাম্বার সিক্স’ রাদারফোর্ডের ২১ বলে ১ রানের প্রতিরোধটা থেমেছিল মার্শালের হাতেই!

দ্বিতীয় ইনিংসে জেরেমি কনি’র ইনজুরির সুবাদে রাদারফোর্ড নামলেন ৫ নম্বরে। এবারে অবশ্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করলেন, খেললেন ৩৩ বল, একটা চারও মারলেন, কিন্তু লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফিরতে হল মাত্র ৫ রানেই।

ও আচ্ছা, বোলারটা যেন কে ছিল? – কে আবার? ম্যালকম মার্শাল!

দুঃস্বপ্নের মত কাটানো অভিষেক সিরিজে রাদারফোর্ডের সংগ্রহ ছিল ৭ ইনিংসে ১২ রান! গড় মাত্র ১.৭১! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজেই এভারেজটা বাড়িয়ে ১৪-তে উন্নীত করলেও দুর্ভাগ্য যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। দুটো ফিফটির সাথে তিন খানা ‘ডাক’ও যে মেরেছিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link