কলকাতার স্পিন দূর্গ

ভারতের মাটিতেই যেহেতু এবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) হচ্ছে প্রায় সব দলেই তাদের স্পিন বিভাগটা শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। তবে সব মিলিয়ে বৈচিত্র্য আর স্কিল বিবেচনায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন বিভাগটা বেশ আলাদা।

সাকিব আল হাসান, সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী, কুলদ্বীপ যাদব, হরভজন সিং কিংবা পবন নেগি প্রত্যেকের আলাদা বৈচিত্র্যময় অ্যাকশন আর স্কিলফুল বোলিংয়ে কলকাতার স্পিন বিভাগে যোগ করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। বলা যায়, স্পিন বোলিংয়ের নয়া এক দূর্গ গড়ে তুলেছে কেকেআর।

  • সাকিব আল হাসান

বাঁ-হাতি অর্থডোক্স আর্ম বোলার হিসেবে খ্যাতি আছে সাকিবের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার প্লেতে যেমন উইকেট নিতে পারেন তেমনি মিডল অর্ডারে এনে দিতে পারেন ব্রেক থ্রু৷ প্রতিপক্ষের মাইন্ড রিড করে বল করতে পারাটা তার আরেকটি বড় গুণ। কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন বিভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র সাকিব৷ বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলার অভিজ্ঞতায় টইটুম্বুর সাকিব কলকাতা শিবিরে অন্যতম ভরসার নাম।

  • সুনীল নারাইন

সুনীল নারাইন গত কয়েক আসর ধরেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তবে বোলিং অ্যাকশন নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে নতুন অ্যাকশনে আগের সেই পারফরম্যান্সটা আর করতে পারছেন না তিনি। বোলিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনলেও গত আসরে আবারো তার বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বল হাতে আগের সেই ধারটা নেই নারাইনের।

মূলত নারাইনকে ‘রহস্য বোলার’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তার বোলিংয়ে বৈচিত্র্যময় ভেরিয়শনের জন্য মূলত তাকে মিস্ট্রি বা রহস্যময় বোলার ডাকা হয়৷ ডান হাতি এই অফ স্পিনার মিডল ওভার এবং ডেথ ওভারেই বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে এবারের আসরে কতটা সুযোগ পাবে এবং সেটা কতটুক কাজে লাগাতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দিবে।

  • বরুন চক্রবর্তী

গত আসরের কলকাতার সেরা স্পিনার কিংবা বোলার যাই বলুন না কেনো তার নাম বরুন চক্রবর্তী। ডান হাতি লেগ ব্রেক বোলার হলেও তার অসাধারণ বোলিং অ্যাকশনের জন্য তিনি বেশ পরিচিত। বরুনের মতে তার বোলিংয়ে ৭ ধরনের ভেরিয়েশন আছে! অফব্রেক, লেগব্রেক, গুগলি, ক্যারম বল, ফ্লিপার, টপ স্পিনার ও স্লাইডার – ব্যাটসম্যানের পায়ে লক্ষ্য করে ইয়োর্কার! এই ৭ ধরনের ভেরিয়েশনের কারণে মূলত তার বলে ব্যাটসম্যান বিভ্রান্তিতে থাকে যে কি ধরনের বল ফেস করতে হবে!

এছাড়া বরুনের বলে গতি থাকার কারণে তার ভেরিয়েশন গুলো বেশ কাজে দেয়। তাই ব্যাটসম্যান বেশিরভাগ সময়ই তাকে মারতে গেলে মিস হিটে উইকেট দিয়ে আসেন কিংবা তার স্পিন ভেলকিতে বোল্ড অথবা লেগ বিফোরের শিকার হন। কলকাতা নাইট রাইডার্সে গতবারের মতো এবারো অন্যতম ‘বিগ এসেট’ এই বরুন চক্রবর্তী।

  • কুলদীপ যাদব

কুলদ্বীপ মনে করেন তাঁর বোলিংয়ে কোনো ‘মিস্ট্রি’ নেই! সম্পূর্ণটাই কোয়ালিটি৷ শুধু তারই নন তিনি মনে করেন সুনীল নারাইনের বলেও কোনো মিস্ট্রি নেই, তার কোয়ালিটি দিয়েই তিনি স্পিন ভেলকি দেখান। কুলদ্বীপ মূলত একজন বাঁ-হাতি চায়নাম্যান বোলার। যিনি বা হাতে লেগ স্পিন বল করতে পারেন আবার অফ স্পিনও করেন।

গত আসরেও কলকাতার হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। তবে তিনি স্পিন ভেলকিতে ব্যাটসম্যানদের নাচাতে বেশ পটু। কলকাতা শিবিরে তার মতো বোলার বেঞ্চ গরম করছে, সেটা থেকেই স্পষ্ট কলকাতা স্পিন বিভাগের শক্তিমত্তা।

  • পবন নেগি

বাঁ-হাতি স্লো আর্ম অর্থডোক্স বোলার হিসেবেই মূলত পরিচিত। তবে তিনি একজন অলরাউন্ডার। টিম কম্বিনেশন আর তার চেয়ে হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়েরা থাকায় দলে সুযোগ পান না বলেই চলে। এ আসরে তিনি খেলছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। তবে এখানেও তাঁর সুযোগ পাবার সম্ভাবনা নেই।

যদিও কারো ইনজুরিতে ব্যাকআপ হিসেবে তিনি অসাধারণ একজন অলরাউন্ডার৷ সাকিব, সুনীল নারাইন, বরুণদের ভীড়ে সুযোগ পাবার সম্ভাবনা কম থাকলেও একসময় আইপিএলে ফ্র‍্যাঞ্চাইজিদের পছন্দের শীর্ষে ছিলেন এই অলরাউন্ডার।

  • হরভজন সিং

চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে গত আসরে নাম প্রত্যাহার করেন। এবার নিলামে তাকে কিনে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। হরভজন মূলত আক্রমণাত্মক একজন স্পিনার যে তার লেন্থ এবং গতিটা ভালোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারে। ব্যাটসম্যানকে তার বল খেলতে বাধ্য করে সেখান থেকে উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে তার বেশ সুনাম রয়েছে।

৪০ বছর বয়সী হরভজন ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে খেলছেন একদম শুরু থেকেই৷ কলকাতা শিবিরে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার হলেন তিনি। তিনি থাকায় স্পিন বিভাগে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। ডান হাতি এই অফ স্পিনার নিজের দিনে ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন বহুবার।

কি নেই কলকাতা শিবিরে? লেগ স্পিনার, অফ স্পিনার, লেফট আর্ম অর্থোডক্স, চায়নাম্যান সবই আছে। সবদিক বিবেচনায় নি:সন্দেহে টুর্নামেন্টের সেরা স্পিন বিভাগ কলকাতার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link