হেডিংলির আকাশে তখন সন্ধ্যার মেঘ। দিনের শেষ আলোর মতো ভারতের ইনিংসেও জ্বলে রয়েছে এক নিঃশব্দ দীপ্তি। লোকেশ রাহুল ৪৭ রানে অপরাজিত। তার ব্যাটিং? না, সেখানে বুনো আগ্রাসন নেই, তপস্যার এক সৌম্যভাব সেখানে। পাশে শুভমান গিল, দুজনেই যেন সময়ের ওপরে এক প্রাচীন ধৈর্যের ছায়া।
তবে হঠাৎ করেই আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। আম্পায়ারেরা দিনের খেলার ইতি টানেন। ক্যামেরা ফোকাস করে দুই ভারতীয় ব্যাটারের ওপর। কিন্তু ঠিক তখনই ঘটে যায় সেই মুহূর্ত, যেটি রান বা রেকর্ড দিয়ে মাপা যায় না।
কে এল রাহুল থমকে দাঁড়ান না। তিনি দৌড়ানও না। শুধু হঠাৎ করেই তার ব্যাটটি তিনি তুলেই ঢুকিয়ে ফেলেন নিজের জার্সির ভিতর। জামার তলায় রেখে দেন নিজের অস্ত্রটিকে, যেন বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখলেন কোনো প্রিয়জনকে।
এ দৃশ্য শুধু একটি “মুহূর্ত” নয়। এ এক নি:শব্দ কবিতা। এ এক প্রেমের ছবি। যেখানে ব্যাট কোনো খেলার সরঞ্জাম নয়, সে একজন সাথী, একজন শ্রদ্ধেয়, একজন প্রেমিকা। যার প্রতি প্রতিটা স্ট্রোক এক ভালোবাসার ছোঁয়া, প্রতিটা রান এক সম্পর্কের গভীরতা।
ভিজে না যাক বলে তিনি ব্যাটকে আড়াল করলেন। কিন্তু এই আড়ালের মধ্যেই প্রকাশ পেল এক অনাবিল স্নেহ। এ যেন মা তার সন্তানকে বৃষ্টির হাত থেকে আগলে রাখছে। এ যেন সৈনিক তার অস্ত্রকে বুকের ভেতর লুকিয়ে বলছে, “তুই না থাকলে আমি কেউ নই।”
সোশ্যাল মিডিয়া ছেঁয়ে গেল সেই ছবিতে। কেউ বললেন, ‘ক্রিকেটার নয়, কবি!’ আর কেউ বললেন, ‘আজকের দিনে এমন ভালোবাসা শুধু গল্পেই পাওয়া যায়।’
কিন্তু রাহুল কোনো গল্প নন। তিনি বাস্তব। তিনি নি:শব্দ। তিনি কভার ড্রাইভে প্রেম লেখেন, আর ব্যাটটিকে বুকের ভেতর রেখে সেই কবিতা বলে যান।
একটিমাত্র দৃশ্য, সেই দৃশ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়,ক্রিকেট কখনো শুধুই খেলা ছিল না, হবেও না। এ এক সম্পর্ক, এক আত্মিক বন্ধন, এক ভালোবাসার ধর্ম।
আর সেই ধর্মের এক নি:শব্দ পূজারী, কে এল রাহুল। যিনি ব্যাট দিয়ে খেলার চেয়েও বেশি কিছু করেন, তিনি ব্যাটকে ভালোবাসেন। এমনভাবে, যেভাবে একজন মানুষ আরেকজনকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে, সারাজীবন।