এবারের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের শেষ চারে উঠার আশা ফুরিয়েছে আগেই। তবু হেনরিখ ক্লাসেনের দম ফেলার ফুসরত কই! প্রতি ম্যাচেই ধ্বসে পড়েছে হায়দ্রাবাদের টপ অর্ডার এবং একাকী সৈনিকের ন্যায় টেনে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।
দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাসেনের আবির্ভাবের সময়টাতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে তারার মেলা। মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলারের মতো তারকারা। সেই তারকাখচিত একাদশে ক্লাসেনের মতো তরুণের জায়গা কই? ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানকে।
তবে ক্লাসেন হাল ছাড়েননি। সাধারণত উপমহাদেশের বাইরের ব্যাটাররা পেসের বিপক্ষে সাবলীল হলেও স্পিনের দুর্বল হন। ক্লাসেন যেন ব্যতিক্রম, ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো থেকেই স্পিনারদের বিপক্ষে দারুণ সাবলীল এই তারকা। পেশির জোরের পাশাপাশি সুইপ কিংবা রিভার্স সুইপ খেলতে দারুণ পটু এই ব্যাটার। ইনিংসের শেষদিকে নেমে ঠান্ডা মাথায় দলকে ম্যাচ জেতাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁকে ডাকা হয় ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ধোনি’ নামে।
২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরকালে কুইন্টন ডি ককের ইনজুরির সুবাদে কপাল খোলে ক্লাসেন। তিনি তো কেবল একটি সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। প্রথম সুযোগেই আলো ছড়ান, দ্বিতীয় ম্যাচেই খেলেন ২৭ বলে ৪৩ রানের ম্যাচজেতানো এক ইনিংস। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে জার্সিতে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করেছেন ক্লাসেন।
আইপিএলে ২০১৮ মৌসুমেই তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু দলটির হয়ে দুই মৌসুমে মাঠে নেমেছেন মাত্র সাত ম্যাচে। অবশ্য পারফরম্যান্সও ক্লাসেনের পক্ষে কথা বলবে না, এই সাত ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ মোটে ৬৬ রান। ফলে গত তিন মৌসুমে তাঁকে দলে ভেড়াতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো দলই।
এবারের মৌসুমের নিলামে অবশ্য ক্লাসেনকে দলে ভেড়াতে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে বেগ পোহাতে হয়েছে ভীষণ। সাড়ে পাঁচ কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়ে হায়দ্রাবাদের দলটিতে এসেছেন এই তারকা। তাছাড়া ক্লাসেনের জন্যেও এবারের আইপিএল ছিল নিজেকে চেনানোর মৌসুম। আর সেই মিশনে দারুণ সফল এই তারকা।
মৌসুমের শুরু থেকেই নিয়মিত রান পেয়েছেন। হায়দ্রাবাদের বাকি ব্যাটাররা যেখানে রানখরায় ভুগেছেন, সেখানে একাকী সৈনিকের ন্যায় লড়াই করে গেছেন এই তারকা। গত দুই ম্যাচে অবশ্য খানিকটা বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আম্পায়ারদের সমালোচনা করায় গুণতে হয়েছে জরিমানাও। তবে সবকিছুর জবাব যেন ব্যাট হাতেই দিলেন এই তারকা।
ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে রীতিমতো অতিমানবীয় ব্যাটিং করেন এই তারকা। ব্যাটিং অর্ডারে খানিকটা উপরে উঠে এসেছিলেন, ইনিংসের শুরু থেকেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। অপরপ্রান্তে কেউই যোগ্য সঙ্গ দিতে না পারলেও একপ্রান্তে ক্লাসেন ছিলেন অবিচল। উইকেটের চারপাশে অনবদ্য সব শট খেলে তুলে নেন আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আট চার এবং ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে ৫১ বলে ১০৪ রান করার থামে ক্লাসেন ঝড়।
বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে একজন ফিনিশারের আক্ষেপ দক্ষিণ আফ্রিকার বহুদিনের। ক্লাসেন তাই চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে বছর শেষের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের চোকার তকমা ঘুচিয়ে দিতে।