তাঁর একটা মজার নাম আছে – কুংফু পান্ডিয়া। খেলার আক্রমণাত্মক ধরণের জন্যই এমন নাম দেয়া হয়েছে তাঁকে। ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার এবং ডানহাতি ব্যাটার তিনি। সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব অবসর নেওয়ার পর থেকে ভারত দীর্ঘ সময় ধরে যে দক্ষতার খোঁজ করছে সেই প্রতিমূর্তি যেন হার্দিক পান্ডিয়া।
পান্ডিয়াকে কপিল দেবের প্রতিচ্ছবি মানা হয়। খেলোয়াড়ি স্টাইলে দুজনই হলেন অলরাউন্ডার। কপিলের মতো যে পান্ডিয়ার মধ্যেও নেতৃত্বগুণ আছে আইপিএলের মঞ্চেই তিনি প্রমাণ রেখে এসেছেন।
এদিকে সদ্য শেষ হওয়া ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে পাণ্ডিয়া ভারতকে যেভাবে পাঁচ উইকেটে জেতাতে অবদান রেখেছেন তাতে মুগ্ধ হবেন খোদ কপিল দেবও। পান্ডিয়ার ক্রিকেটীয় পাণ্ডিত্বে বর্তমানে ভারতীয় দলের অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেটার তিনি।
এদিকে রেকর্ড খাতায় ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে অর্ধশতক প্লাস রান ও চারটি উইকেট নেওয়া অলরাউন্ডারের তালিকায় পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নিলেন তিনি। ক’দিন হল, ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের সাথে তৃতীয় ওয়ানডে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেন হার্দিক পান্ডিয়া।
৭ ওভার বল করে ২৪ রানের বিনিময়ে তুলে নেন চারটি উইকেট। পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে করেছেন ৭১ টি রান। আর তাই ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হলেন এই অলরাউন্ডার।
আজকের এই সফল পাণ্ডেয়াকেও কিন্তু কাঠখড় পেরিয়ে আসতে হয়েছে। এইতো ২০১৯ এর অক্টোবরেই তো লন্ডনে পিঠের একটি বড় অস্ত্রোপচার হলো তাঁর। তারপর প্রায় দুইবছর অবধি তিনি কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন।
সম্ভবত লোকজন ভুলে যেতে বসেছিল যে পান্ডিয়া আসলে বোলিংটাও জানেন। সেখান থেকে নিজের ফিটনেস ফিরিয়ে এনে আবার বল হাতে দৌঁড়ানোর জন্য যে কঠিন অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস লাগে, তা ছিল বলেই তিনি নিজের অলরাউন্ডার তকমা ফিরে পেয়েছেন।
‘মে নেহি ভাগনেওয়ালা আব। শট মার অউর রান লে’ – মানে আমি এখন পিছু হটছিনা আর, শট মার এবং রান নে এমন বাক্যে ঋষাভ পান্তকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডেতে মাঠে ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান পান্ডিয়া। এই যে অধিনায়কোচিত যে আচরণ এর শুরুটা হয়েছে এই বছরেরই আইপিএলের মঞ্চে।
সর্বশেষ আইপিএলে নবাগত দল গুজরাট টাইটান্স এর নেতৃত্বের ভারটা তুলে দেয়া হয়েছিল পাণ্ডেয়ার কাঁধে। এবং তিনি জীবনের প্রথম অধিনায়কত্বের সুযোগেই করেছেন বাজিমাত। নতুন দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই পাইয়ে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি।
গোটা টুর্নামেন্টে তার পারফরমেন্সও ছিল নজরকাড়া। পুরো টুর্নামেন্টে ৪৪.২৭ গড়ে ৪৮৭ রান করেন তিনি। তাছাড়া বল হাতেও পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। রবি শাস্ত্রীর মতে, পাঞ্জাব টাইটান্সের হয়ে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ক্রিকেটার হিসেবে পান্ডিয়াকে আরও পরিণত করেছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড অনায়াসে চাইলেই নিশ্চিন্তে টি-টয়েন্টি দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান্ডিয়ার হাতে তুলে দিতে পারে। তিনি যে সেই যোগ্যতাটুকু রাখেন তা হার্দিক পান্ডিয়া ইতোমধ্যেই আইপিএলে প্রমাণ করে এসেছেন। এ বছর শুরু হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ‘কুংফু পান্ডিয়ার উপর ভরসা রাখবে কিনা সেটাই দেখার পালা।