কাইল মেয়ার্স, আইপিএলের নতুন গেইল

মৌসুমের শুরুতে কুইন্টন ডি ককের ব্যাকাপ হিসেবেই তাঁকে ভেবেছিল লখনৌ সুপার জায়ান্টস। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ডি কককেই একাদশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন কাইল মেয়ার্স। ক্যারিবিয়ান স্টাইল আর মারকুটে ব্যাটিংয়ের সুবাদে ইতোমধ্যেই সবাই এই বাঁহাতি ওপেনারকে তুলনা করতে শুরু করেছে ক্রিস গেইলের সাথে। 

আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই ছন্দে আছেন মেয়ার্স। সর্বশেষ ম্যাচেও তাঁর ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৭ রানের সংগ্রহ পায় লখনৌ। লোকেশ রাহুল শুরুতে ফিরলেও রানের গতিটা কমতে দেননি মেয়ার্স। বরং তাঁর ২৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের সুবাদেই ঝড়ো সূচনা পায় লখনৌ। তাঁর গড়ে দেয়া ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বাকি কাজটা সারেন মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা। 

অথচ মৌসুম শুরুর আগে তাঁর কথা ভাবেননি কেউই। পাঁচ কোটি রুপির বিনিময়ে মেয়ার্সকে দলে ভিড়িয়েছিল লখনৌ কেবলমাত্র শুরুর দুই ম্যাচে কুইন্টন ডি ককের অনুপস্থিতির কথা ভেবে। কিন্তু নিজের প্রথম ম্যাচেই ঝড়ো ফিফটি হাঁকিয়ে মেয়ার্স বুঝিয়ে দেন তিনিও কম যান না কোনো অংশে। ফলে ডি কক দলের সাথে যোগ দিলেও এখনো একাদশে সুযোগ পাননি। মেয়ার্স বরং নিজের প্রথম আইপিএলকে স্মরণীয় করে রাখছেন আপন মহিমায়। এখনো পর্যন্ত আট ম্যাচে ১৬০ স্ট্রাইকরেটে মেয়ার্সের সংগ্রহ ২৯৭ রান। 

কেবলমাত্র ব্যাট হাতে নয়, ইনিংসের শুরুর দিকে মেয়ার্সের মিডিয়াম পেস বোলিংও সমান কার্যকরী। আহামরি গতি না থাকলেও দুই দিকেই সুইং করাতে জানেন এই তারকা। যদিও ভারতের ধীরগতির পিচে এখনো পর্যন্ত তাঁর খুব বেশি বোলিং করতে হয়নি। এছাড়া কেবলমাত্র ওপেনিং নয়, বরং ফিনিশার হিসেবেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। এবারের আইপিএলে গৌতম গম্ভীরের দলের অন্যতম কার্যকরী অস্ত্র এই ক্যারিবীয় তারকা। 

কেবলমাত্র আইপিএলই নয় বরং সিপিএল কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার টি টোয়েন্টি লিগেও নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। ডারবান সুপার জায়ান্টস এবং বার্বাডোস রয়্যালস দুই দলের হয়েই ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ফলে মেয়ার্স যেন ক্রমেই হয়ে উঠছেন বৈশ্বিক তারকা। 

বয়স ত্রিশ পেরোনোর পর জাতীয় দলে অভিষেক মেয়ার্সের। কেবল সাদা বল নয়, বরং লাল বলের ক্রিকেটেই নিজের অভিষেকটা স্মরণীয় করে রেখেছেন মেয়ার্স। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্টেই অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন এই তারকা।

চতুর্থ ইনিংসে তাঁর ইনিংসে ভর করেই ৩৯৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের শেষদিকে চট্টগ্রামের টার্নিং উইকেটে তাঁর সেই ইনিংস গত বছরের অন্যতম সেরা। সেদিনই সবাই বুঝে গিয়েছিল হারিয়ে যেতে নয়, বরং নক্ষত্র হয়ে দীর্ঘদিন রাজত্ব করতেই ক্যারিবীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব তাঁর। 

আইপিএলের স্লো উইকেটেও তাই স্পিনারদের সামলাতে বেগ পোহাতে হয়নি মেয়ার্সকে। বরং বাকি বিদেশিদের তুলনায় স্পিনারদের তিনি সামলাচ্ছেন সাবলীল ভঙ্গিমায়। আইপিএল অভিষেকেই দিল্লীর বিপক্ষে ২৮ বলে ৭৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছিলেন এই তারকা। সেদিন মোট সাত ছক্কার মাঝে পাঁচটিই হাঁকিয়েছিলেন কুলদ্বীপ যাদব এবং আক্সার প্যাটেলের বলে। 

ক্রিস গেইল, কাইরেন পোলার্ডরা বিদায় জানিয়েছেন। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনরাও শেষের শুরু দেখছেন। তবে কাইল মেয়ার্সের উত্থান যেন জানিয়ে দিল টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসোই শেষ কথা। গেইল না থাকলেও মেয়ার্সই এখন আইপিএলের নতুন গেইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link