টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার দ্বারপ্রান্তে ফ্রান্স। ইতালি এবং ব্রাজিলের পর তৃতীয় দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার সুযোগ তাঁদের সামনে। অন্যদিকে, বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে মরক্কো। ইতোমধ্যেই ইতিহাস গড়া দলটি চাইবে স্বপ্নের বিশ্বকাপে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দলগত লড়াইয়ের পাশাপাশি থাকবে খণ্ডযুদ্ধও। তাতে মধুর এক সমস্যায় পড়েছেন মরক্কোর ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। বন্ধু কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সামলানোর দায়িত্বটা যে বর্তাবে তাঁর কাঁধেই।
গত মৌসুমে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বড় অংকের বিনিময়ে ইন্টার মিলান থেকে পিএসজিতে নাম লেখান রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি। রিয়াল মাদ্রিদ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও মূলত ইন্টারের হয়েই ইউরোপে আলো ছড়ানো শুরু হাকিমির। অন্যদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পে আগে থেকেই ছিলেন পিএসজিতে। হাকিমি আসার পর থেকেই দুজনের মাঝে গড়ে ওঠে মধুর বন্ধুত্ব। মাঠের বাইরে দুজনকে একত্রে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকবার। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে দেশের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে একে অন্যের বিপক্ষে লড়বেন এই দুই বন্ধু।
কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য এবারের বিশ্বকাপটা মহাতারকা হয়ে ওঠার। আগের বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনী বার্তার। এবারের বিশ্বকাপেও ইতোমধ্যেই পাঁচ গোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। সেমিফাইনালে লাইমলাইট থাকবে তাঁর উপরেই। তবে মরক্কোর বিপক্ষে কাজটা সহজ হবে না মোটেই। সবাইকে চমকে দিয়ে স্পেন এবং পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল।
আর তাঁদের এই যাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাকিমি। স্পেনের বিপক্ষে ঠান্ডা মাথায় জয়সূচক পেনাল্টি নিয়েছেন। আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণেও ভূমিকা রাখতে সমান পটু এই রাইট উইংব্যাক। তাছাড়া সেমিফাইনালে নিয়মিত অধিনায়ক রোমান সাইসের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে হাকিমির কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব থাকবে ফরাসি আক্রমণভাগ সামলানোর।
হাকিমি এবং এমবাপ্পের বন্ধুত্ব দানা বেঁধেছে সময়ের সাথে সাথে। এমনকি দুজনের গোল উদযাপনের ভঙ্গিও একই রকম। এবারের বিশ্বকাপেই দেখুন না, স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারের শেষ শটটা পানেনকা স্টাইলে জালে জড়িয়ে পেঙ্গুইন স্টাইলে উদযাপন করে বন্ধু এমবাপ্পেকে উৎসর্গ করেন হাকিমি। পরবর্তীতে এমবাপ্পেও একই ভঙ্গিতে উদযাপন করেন।
হাকিমি ফ্রান্সে পা রাখার পর থেকেই নানাভাবে তাঁকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন এমবাপ্পে। গত সেপ্টেম্বরের এক ভিডিওতে দেখা যায় এই দুই বন্ধু একত্রে ভিডিও গেম খেলছেন। এমনকি গেমের মাঝে তাঁকে পাস না দেয়ায় খুনসুটি করতে দেখা যায় এমবাপ্পেকে। এছাড়া দুই বন্ধু একসাথে স্পেনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।
এমবাপ্পের ফুটবলশৈলীর দারুণ ভক্ত হাকিমি। এই স্ট্রাইকারের প্রতি তাঁর ভীষণ মুগ্ধতা। সংবাদ মাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে হাকিমি বলেন, ‘তাঁর সাথে একই দলে খেলা ভীষণ আনন্দের। সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের মাঝে একজন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সে আমার খুবই কাছের বন্ধু। আমি তাঁকে ভালোবাসি।’
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে এই দুই বন্ধু এবারে মুখোমুখি হবেন বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে। সেদিন কাতারের আল বাইত স্টেডিয়ামে নিশ্চিতভাবেই মাঠে একচুল ছাড় দেবেন না কেউই। সেদিনের ম্যাচে হয়তো শেষ হাসি হাসবেন যেকোনো একজন, কিন্তু মাঠের বাইরে তাঁদের বন্ধুত্ব টিকে থাকুক আরও বহুদিন।