কী যে ভর করেছে মরক্কোর ওপর কে জানে!

এই এক দল বটে মরক্কো। কিচ্ছু ভবিষ্যদ্বানী করতে পারবেন না ওই ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের দলটা নিয়ে। স্পেনের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করার পর আগের ম্যাচেই ডিফেন্সিভ মাস্টারক্লাস সুইজারল্যান্ডকে ৬ গোল মারা পর্তুগাল ট্রেনটাকে দড়ি ধরে লাইনচ্যুত করে দেওয়া। ভাবা যায়?

এই এক দল বটে মরক্কো। কিচ্ছু ভবিষ্যদ্বানী করতে পারবেন না ওই ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের দলটা নিয়ে। স্পেনের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করার পর আগের ম্যাচেই ডিফেন্সিভ মাস্টারক্লাস সুইজারল্যান্ডকে ৬ গোল মারা পর্তুগাল ট্রেনটাকে দড়ি ধরে লাইনচ্যুত করে দেওয়া। ভাবা যায়?

এই রেগরাগুই হয়তো চচ্চড়ির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রেঁধে দিয়ে চলে যাবেন আর আপনি বলবেন – কী দারুণ!

আচ্ছা আসুন দলটার কে কোন দলে মানে কোন ক্লাব দলে খেলে একবার দেখে নিই। গোলকিপার বোনো সেভিয়া। রাইট ব্যাক হাকিমি পিএসজি, স্টপারে নায়িফ আগুর্দ, যাঁকে রেগরাগুই পাননি কোয়ার্টারে, তিনি ওয়েস্ট হ্যাম, অধিনায়ক রোমাঁ সাইস বেসিকতাসে, আগুর্দের পরিবর্ত জাওয়াদ আল এমিক রিয়েল ভালদোলিদ, লেফট ব্যাক ইয়াহিদ আল্লাহর নাম মরক্কোর বাইরে কেউ শোনেনি। মাঝমাঠের পিভট সোফিয়ান আমরাবত ফিয়োরেন্তিনা। এই হচ্ছে লিভার, আর ভিত্তিতে ব্যাক ফোর হেলে দোলে নড়ে চড়ে। তার উপরে একজন লালিগা, একজন লিগ ওয়ান আর একজন সেরি আ। নাম না জানলেও চলবে, রেগরাগুইয়ের দলে এঁদের নাম নেই।

বাকিদের মধ্যে ডানদিকে হাকিম জিয়েশ। জিয়েশ হয়তো এই বিশ্বকাপে সেরা পাঁচজন পারফর্মারদের একজন। তিনি আবার চেলসিতে সেট করতে পারছেন না আয়াক্স থেকে গিয়ে। এই বিশ্বকাপের পরেই হয়তো চলে আসবেন এসি মিলানে। সে থাক।

রেগরাগুইএর একটা ইলাস্টিক ব্যান্ড আছে। যেটা দিয়ে তিনি ৪-১-৪-১ সাজান। উপরের চারের যে দুইজন উইঙ্গার, তাঁরা দারুণ দৌড়ন। দৌড়ন হাকিমি আর ইয়াহিদও। আর স্ট্রাইকিং পিভটে আছেন ইউসিফ এন নাসিরি। যা একখান লাফ দিয়েছেন যে এরপরে মরক্কোর অফিশিয়াল এয়ারলাইন্সের নামকরণ এন নাসিরির নামে হয়ে না যায়।

গোল করার আগ পর্যন্ত বল উইং দিয়ে ঠেলে ক্রমাগত জায়গা পাল্টে আক্রমণ করে গিয়েছেন জিয়েশরা। গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি নাভাস, অট্টাভিও বা পেপেরা। একমাত্র ডিয়াজ ঠ্যাকা দিয়ে গিয়েছেন। গোলটা পাবার আগে পর্যন্ত দুরন্ত গতির কাউন্টার অ্যাটাক। আর চারজনের ইলাস্টিক ডিফেন্ডিং। পর্তুগাল বল ডানদিক থেকে ইনভার্ট করলে সেদিকে ওভারলোড আর বাঁ-দিক থেকে করলে সেদিকে।

নাভাস হাঁসফাঁস। গুরেরো দাঁড়িয়ে গিয়েছে। নামলেন ক্যান্সেলো এবং ভিটিনহা। একজন সিটি আর একজন পিএসজি। গোল তুলে নেবার পর রেগরাগুই দ্বিতীয়ার্ধে নামালেন সেন্টারব্যাক বেনাউনকে। মরক্কো চলে গেল ক্লাসিক ৫-১-৩-১ ছকে। ফার্নান্দো স্যান্তোস নামালেন রাফায়েল লিয়াও আর রোনালদোকে। শুরু হল শিবের মাথায় বল ফেলা। আরে সেই রোনালদো কি আর আছেন? সূর্যের এখন রঙ ধূসর।

একটা তাও জায়গা পেয়েছিলেন। দু বছর আগের রোনাল্ডো ১০এর মধ্যে ১১টা আর গত বছরের রোনালদো ১০-এর মধ্যে চারটা গোলে রাখেন। হল না। বোনো ওয়াজ আ রকস্টার। সময়কে কিনে নিয়ে চলে গেলেন রেগরাগুই। যাঁর ডিফেন্সিভ সংগঠন গত বারের রাশিয়ার কথা মনে পড়িয়ে দিল। সেই ৪-৫-১এর ইলাস্টিক ওভারলোডিং। বল ডানদিকে তো সবাই মিলে সেদিকে, বাঁ-দিকে তো সবাই মিলে সেদিকে।

লো ব্লক সিস্টেমে, সবাই সবার কাজ জানে। দ্বিতীয় গোল করার চার নেই, শুধুমাত্র গতি দিয়ে বলটাকে নিজের সীমানার বাইরে করে দেওয়া। আর জিয়েশ জিয়েশ জিয়েশ।

তবে এই যে ডিফেন্সিভ সংগঠন এর ফালক্রাম কিন্তু ওই আমরাবত। তিনি না থাকলে ব্রুনো বা বার্নার্দোর মত ইনভার্টেড ফ্লোটাররা একটা জায়গা বার করে ফেলতেন নিশ্চিত। হয়নি। এমনকি স্পেন হয়তো পর্তুগালের থেকে বেশি সুযোগ পেয়েছিল। সত্যিই ভাবিনি স্পেনের বিরুদ্ধে প্রাণপাত করার তিন দিনের মধ্যেই আবার একটা হাইভোল্টেজ অ্যাকশন প্যাকড ডিফেন্সিভ ফিল্লাম দেখতে পাব রেগরাগুইয়ের কাছ থেকে।

এরপর এমবাপ্পে অ্যান্ড কোং, তা এমবাপ্পের জন্য তাঁর প্রিয় বন্ধু হাকিমি আছেন আর আছেন জিয়েশ। থিও উপরে ওঠার থই পাবেন তো? অবশ্য দেশকে বিশ্বাস নেই, বড় ম্যাচ তরী পার করার বিদ্যা ভাল করেই রপ্ত করে ফেলেছেন। আরেকটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের জন্য তৈরি। কিন্তু কোনও প্রশ্ন নয়, নাহ শনিবার শনিবার ফুল দিলেও শনি-মনসা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নয়। রেগরাগুই নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী হয় না। কী যে ভর করেছে মরক্কোর ওপর কে জানে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...