আয়ুশ বাদোনি, ব্যাটেই আসুক উপেক্ষার জবাব

ভক্তরা তাঁকে ভালোবেসে ডাকে ‘বেবি এবি’ নামে। দেখতে ছোট খাটো গড়নের হলেও কিনা আয়ুশ বাদোনির ছক্কা হাঁকাতে জুড়ি মেলা ভার। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও আইপিএল এলেই যেন জ্বলে ওঠেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।

দিল্লীর বিখ্যাত কোচ তারকা সিনহার একাডেমি থেকে উঠে আসেন বাদোনি। সেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে পটু ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। দিল্লীর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ক্রমশই আলো ছড়িয়ে জায়গা করে নেন ভারতের অনুর্ধব-১৯ দলে। 

ছোটদের দ্বি-পাক্ষীক সিরিজ কিংবা এশিয়া কাপ, দুই জায়গাতেই আলো ছড়ান ব্যাট হাতে। যুব টেস্টে তো শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৮৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর কোনোভাবেই সামনে এগোচ্ছিল না তাঁর ক্যারিয়ার।  

সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে মাত্র একটি ম্যাচে সুযোগ পান দিল্লীর হয়ে। কিন্তু সেই সুযোগ লুফে নিতে ব্যর্থ হলে বাদ পড়েন দল থেকে। কিন্তু বাদোনি হাল ছাড়েননি, নিয়মিত চেষ্টা করে গেছেন ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনার। 

ক্যারিয়ারের এই সময়টাতেই আইপিএলের ট্রায়ালে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর গৌতম গম্ভীরের নজরে আসেন এই তরুণ। প্রস্তুতি ম্যাচে টানা দুই ফিফটি হাঁকানো বাদোনিকে দেখেই চিনে নেয় গম্ভীরের জহুরির চোখ।

এরপর আর ফিরে তাকানো নয়, প্রথম শ্রেণি কিংবা লিস্ট এ ক্যারিয়ারে কোনো ম্যাচ খেলার আগেই আইপিএলের নিলাম থেকে ২০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় লখনৌ। 

নিজের প্রথম মৌসুমেই ব্যাট হাতে জাত চেনান এই তারকা। আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ফিফটি হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, বাদোনি তত উদ্ভাসিত হয়েছেন।

মিডল অর্ডারের যে পজিশনেই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন। লখনৌ ম্যানেজমেন্টও ভরসা রেখেছে তাঁর প্রিয়পাত্রের উপর। 

সবাই ভেবেছিল আইপিএলে আলো ছড়ানোর পর বদলে যাবে বাদোনির ক্যারিয়ার। অন্তত দিল্লীর হয়ে নিয়মিত মাঠে নামবেন এই তারকা এমনটাই ছিল সবার ভাবনা।

কিন্তু, গত এক বছরে লিস্ট এ এবং প্রথম শ্রেণি মিলিয়ে মাত্র আট ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন এই তারকা। অথচ সেসব ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্সও মন্দ নয়। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দিল্লীর নির্বাচকদের কাছে অবহেলিতই রয়ে গেছেন বাদোনি।

এবারের আইপিএল তাই বাদোনির কাছে ছিল নিজেকের প্রমাণের মঞ্চ। আর সেই সুযোগটা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন প্রবলভাবে, জবাব দিচ্ছেন  নিজের প্রতি অবহেলার।

উপরের দিকে ব্যাট করার তেমন সুযোগ পাচ্ছিলেন না, ফলে শেষদিকে নেমে ঝড় তুললেও বড় ইনিংসের দেখা মিলছিল না। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে তিন নম্বরে নেমে যেন সব আক্ষেপ সুদে-আসলে মেটালেন বাদোনি। 

সমান তিনটি করে চার এবং ছক্কায় ২৪ বলে ৪৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন এই তারকা। তাঁর ব্যাটিংয়ের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি রাবাদা, কুরানরা।

সাবলীল গতিতে যেভাবে এগোচ্ছিলেন তাতে তাঁকে আউট করা অসম্ভবই বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু রানের গতি আরো বাড়াতে গিয়েই সীমানার কাছে ক্যাচ দেন এই তারকা। তবে তাঁর আগে দলকে দিয়ে যান ঝড়ো এক সূচনা। 

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারে শূন্যতা বিরাজমান। শ্রেয়াস আইয়ার এবং ঋষাভ পান্তের ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে তাই জাতীয় দলের জায়গা পেতে অসুবিধে হবে না বাদোনির। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link