বাতাসে উড়ুক বিজয় নিশান

ডারবানে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে সে কথা সত্য। তবে চারটা দিন ক্রিকেটাররা চোখে চোখ রেখে লেড়েছে সেটাও অনস্বীকার্য। হয়তো কিছু ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা একটা সেশনে পুরো ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে গিয়েছিল। এই ম্যাচ হারের পরেও গত কয়েকমাসে টেস্ট দলের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা আভাষ মিলছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে পেসারদের জ্বলে উঠা পুরো দলকে সাহস জোগাচ্ছে।

বাংলাদেশ তাঁদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবারের মত বিদেশের মাটিতে ২০ উইকেট নিতে পারলো। এছাড়া শেষ তিন ম্যাচের মধ্যে দুইবার শুধু পেসাররাই নিয়েছে ১০ টির বেশি উইকেট। ডারবান টেস্টেও খালেদ আহমেদ প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের নায়ক এবাদত হোসেনও দুই ইনিংসেই ভালো বোলিং করেছেন।

ওদিকে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম ইনজুরি নিয়ে ফিরে এসেছেন দেশে। এই দুই পেসারও ছিলেন দারুণ ফর্মে। ফলে গত একবছরে পেস বোলারদের এই উন্নতিটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো ব্যাপার।

ফলে আগামীকাল থেকে পোর্ট এলিজাবেথে শুরু দ্বিতীয় টেস্টেও বড় ভরসা থাকবে এই পেসারদের উপরেই। ১৩৩ বছর পুরনো এই টেস্ট ভেন্যুতে অবশ্য বাংলাদেশের পেসারদের কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। আর স্টেডিয়ামের সবচেয়ে বড় পারফর্মারদের একজন এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। আবারো পুরনো আঙিনায় ফিরেছেন। তবে এবার বোলার হয়ে নয় বরং কোচ হিসেবে।

এই কোচ এবং পুরো দলের দুশ্চিন্তা এখন পোর্ট এলজাবেথের বাতাস নিয়ে। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের আগে ডোনাল্ডের ‘ট্রেনিং’ পর্বের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকছে বাতাসের সঙ্গে লড়াই। বিসিবির ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের বোলিং কোচ বললেন, এখানকার বাতাসে মানিয়ে নেওয়া হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

‘পোর্ট এলিজাবেথে একটি ব্যাপারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, তা হচ্ছে বাতাস। সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে প্রবল বাতাস আসে এখানে। দল হিসেবে আমরা সেটি নিয়ে কথা বলেছি। উঁচু ক্যাচ নেওয়া এখানে সত্যিকারের স্কিলের ব্যাপার। বাঁক খাওয়ানো ক্যাচ, লম্বা ক্যাচিংয়ের অনুশীলন অনেক করতে হবে আমাদের। জানতে হবে, কোন পাশ থেকে বাতাস আসছে। বিকেলের শেষভাগে স্কোরবোর্ডের দিক থেকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস আসে। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।‘

পোর্ট এলিজাবেথের এই মাঠ নিয়ে অ্যালান ডোনাল্ড বলেন ,’এই মাঠ অনেকটা উইন্ড টানেল-এর মতো, স্কোরবোর্ড থেকে মাঠের ভেতর দিয়ে। এই বাতাস আবার ঘুরতে থাকে। বোলারদের কখনও মনে হয় বাতাসের অনুকূলে বোলিং করছে, হুট করেই আবারও মনে হবে বাতাসের প্রতিকূলে। বাতাস ঘুরতেই থাকে।‘

শুধু পোর্ট এলিজাবেথের বাতাসই নয়। এই মাঠের উইকেটও বোলারদের কঠিন পরীক্ষাই নিবেন। বাংলাদেশের এই কোচ জানান বোলারদের এখানে অনেক বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে। তবে মিলবে সাফল্য। তিনি বলেন’ ‘এটা এমন একটা মাঠ, যেখানে বোলার হিসেবে আমাদের খুব সৃষ্টিশীল হতে হবে। সময় যত গড়ায়, উইকেট ক্রমে নিষ্প্রাণ হয়ে উঠতে থাকে। ফাস্ট বোলিংয়ের দিক থেকে তাই কিছু না কিছু কৌশল থাকতে হবে। সাহসী হতে হবে এবং নানা কিছু চেষ্টা করতে হবে।‘

ডারবান টেস্টে স্পিনাররা খানিকটা সুবিধা পেলেও এই টেস্টেও বাংলাদেশ ভরসা করবে পেসারদের উপরই। এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদদের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট জয় পেতে হলে পেসারদেরই গড়ে দিতে হবে ভীত। তবেই পোর্ট এলিজাবেথে উড়বে বাংলাদেশের বিজয় নিশান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link