লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন। টানা তিনবছর নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার পরও, এক লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার সঙ্গে অ্যাস্টিস্ট প্রোভাইডার হবার পরেও যদি দেখতে হয়, নিজের দলটি লিগ শেষ করেছে দ্বিতীয় সেরা হয়ে, তা যেকোনো স্পোর্টসম্যানই ক্লাব ছাড়তে চাইবেন। বিশেষতঃ আপনার বর্তমান ক্লাব যখন আপনাকে আশ্বস্তও করতে পারছে না, পরবর্তী মৌসুমে ট্রফিজয়ের যথাযথ ছক তারা কাটতে পেরেছে।
তা এমন করে বললেই তো হয় না, ‘ক্লাব ছাড়বো’। এর জন্যে কায়দা-কানুন আছে, ফিফার রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস আছে, ক্লাবের সঙ্গে খাতা-পত্রে বোঝাপড়া আছে। সেই বোঝাপড়াতে, আমরা যাকে চুক্তি বলে জানি, তাতে লেখা ছিল, ২০২১-২২ মৌসুমের পূর্বে বার্সেলোনা থেকে মেসিকে ছিনিয়ে নিতে হলে অন্য ক্লাবকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে তবেই নিতে হবে।
তবে এই চুক্তির সূক্ষ্ম একটা ফাঁক ছিল, ফাঁকটা মেসি নিজেই রেখেছিলেন। ২০১৭ সনের সেই চুক্তিনামার ৮.২.৩.৬ নং শর্তে লেখা ছিল, ‘২০১৯-২০ মৌসুম শেষে (যে মৌসুম শেষ হলো) মেসি স্বেচ্ছায় ক্লাব বদলাতে পারবেন এবং তখন আর ওই ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর শর্তটা বলবৎ থাকবে না।’
এ তো বেশ সোজা হিসেব, মেসিও এই সরল অংকেই ক্লাব বদলাতে চেয়েছিলেন। তবে বিবাদটা করলো বার্তোমেউর বোর্ড। বার্তোমেউর নেতৃত্বাধীন বার্সেলোনার বর্তমান বোর্ড বলতে চাইলো, ২০১৯-২০ মৌসুম তো শেষ হয়ে গিয়েছে ২০২০-য়ের মে-তে, আগস্টে এসে শুরু হয়ে গেছে ২০২০-২১ মৌসুম। এখন আর ওই শর্ত খাটবে না। করোনার কারণে মৌসুম যতই আগস্ট অবধি গড়াক, মেসি যতই অনুশীলনে না আসুন, শর্ত মানবার কোনো কারণ বার্সেলোনা বোর্ড দেখেনি।
বর্তমান ক্লাব না মানলেও ক্লাব বদলানো যায়, তবে ব্যাপারটা শেষমেশ আদালতে গড়ায়। কোর্টে দিনের পর দিন মামলা চলে, বাদানুবাদ হয়। দিনশেষে রায় যে পক্ষেই যাক, দু’পক্ষের সম্পর্কটা তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়। চাইলে মেসি তাই ব্যাপারটা টেনে নিতে পারতেন আদালতেও, বার্সেলোনার ইতিহাসে কালিমা লেপন করে নাম লেখাতে পারতেন ম্যানচেস্টার সিটিতে।
মেসি তা করলেন না। নতি স্বীকার করে নিলেন বার্সেলোনা বোর্ডের কাছে। জানিয়ে দিলেন, বার্সেলোনায় থেকে যাবেন আরও এক বছরের জন্যে। সব দেখেশুনে কেউ বললেন, ‘ওসব হেরে যাবার পরের নাটক’, কেউবা বললেন, ‘সব বেতন বাড়ানোর ধান্দা।’
হায়রে মেসি! ওরা যদি জানতো, লড়াইটা তোর বার্সেলোনার সঙ্গে ছিল না। এই ক্লাবকে আদালতে নেবার কথা তুই স্বপ্নেও ভাবিস না।
বার্সেলোনা তোর কাছে শুধুই আরেকটা ক্লাব না!