হ্যাংলা-পাতলা গড়ন, মাথা ভর্তি লম্বা লম্বা চুল, চোখে মুখে নিষ্পাপ মায়া – বার্সেলোনার ডাগআউটে দাঁড়ালো ছেলেটা। চতুর্থ রেফারি সাবস্টিটিউটের সংকেত দিতেই পা রাখলেন মাঠে; কিন্তু তখন কে জানতো এই মুহূর্তের মাহাত্ম্য, কে জানতো পা জোড়া মাঠে নয় বরং ইতিহাসের বুকে দাঁড়িয়েছে!
২০০৪ সাল, ১৬ অক্টোবর – বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হয় লিওনেল মেসির। শুধু বার্সেলোনা নয়, পরের সময়টাতে তিনি বদলে দিয়েছেন পুরো ফুটবলের চিত্রনাট্য। নিজের হাতে একটা প্রজন্মের জন্য প্রেমকাব্য লিখেছেন, যে কাব্যের সুধা পান করেছে পুরো বিশ্ব।
এস্পানিওলের বিপক্ষে সেবার জেরার্ড লোপেজ, লুডোভিচ গিউলি সহ মূল দল কয়েকজন চোটের কারণে ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড বাধ্য হয়েছিলেন যুব পর্যায় থেকে পাঁচ জনকে স্কোয়াডে নিতে। তাঁদেরই একজন ছিলেন মেসি, গায়ে জড়িয়েছিলেন ৩০ নম্বর জার্সি। স্বাভাবিকভাবেই শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি, অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮২ মিনিট পর্যন্ত। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, জাদুকর আবির্ভূত হন জাদুর মঞ্চে।
কিংবদন্তি ডেকোকে তুলে তাঁকে নামানো হয়, সবমিলিয়ে মিনিট দশেক খেলার সুযোগ পান তিনি। তবে এই যথেষ্ট ছিল তাঁর জন্য; ছোট একটা ক্যামিওতেই সমস্ত সম্ভাবনা আর সামর্থ্যের ভাণ্ডার সেদিনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
তারপর থেকে আর আর্জেন্টাইন তারকাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি একবারও; একটা বারের জন্য হোঁচট খাননি তিনি। রোনালদিনহোর সঙ্গে মিলে ক্যাম্প ন্যুতে গড়ে তুলেছিলেন আভিজাত্যের দূর্গ। রোনালদিনহোর বিদায়ের পর নিজেই বনে যান দূর্গের একচ্ছত্র অধিপতি – পরের অন্তত এক দশক ইউরোপীয়ান ফুটবল শাসন করেছেন তিনি।
জাভি, ইনিয়েস্তা ব্লাউগানা জার্সিকে বিদায় বলার পরেই কাতালানদের পতনের সূচনা ঘটে। প্রভাব প্রতিপত্তি হারাতে শুরু করে তাঁরা। তবু লিও ছিলেন ঝড়ের মধ্যেও সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের মতন। তাঁর ছায়ায় বারবার স্বস্তি খুঁজে নিয়েছে বার্সেলোনা। বারবার তিনি রক্ষা করেছেন ক্লাবের সম্মান।
একটা ন্যাপকিন থেকে শুরু, শেষ হয়েছে ন্যাপকিনে চোখ মুছেই – মাঝের সময়টাতে কেবল ‘এলএমটেন’ কেবল মোহের জাল সৃষ্টি করেছেন, নিন্দুককেও বাধ্য করেছেন মুগ্ধ হতে। বিদায়কালে তিনি কি অকপটে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁকে ছাড়া বার্সেলোনা বার্সেলোনাই থাকবে। কিন্তু আসলেই কি তাই? বার্সেলোনার জন্য মেসি আসলে কি, সেটা বুঝাতে দশটা লিগ শিরোপা, চার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অথবা ছয়টা ব্যালন ডি’অর কোন কিছুই যথেষ্ট নয়!